আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের নারী শ্রমিক ন্যায্য শ্রমমূল্য পায়না গৃহস্থঘরের মেয়েদের মাঠে অনেক কাজ

দাগ খতিয়ান নাইতো আমার/ঘুরি আতাইর পাতাইর...

‘বিয়ার আগে বাবা মার লগে কায়-কামে সাদ দিতাম। আগুন মাইয়া ও বইশাখ মাইয়া খাজে ধানখলায় ধান লাড়া, শুকানো, ধান গোলায় তোলাসহ হখল ধরনের খাজ ভাই বইনেরা মিইল্যা খরতাম। বিয়ার পরে শ্বশুর বাড়ি আইয়াও একই খাজ খররাম’। বলছিলেন, সুনামগঞ্জের দেখার হাওরপাড়ের গ্রাম হালুয়ার গাওয়ের ষাটোর্ধ্ব কিষাণী আছিয়া বেগম। শুধু আছিয়া বেগমই নয় সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের নারীরা বিয়ের আগে এবং পরে বোরো ও আমন মওসুমে ধানগাছ তোলা থেকে শুরু করে জমিতে ধান লাগানো, গোলায় ধান তোলা, ধানখলায় ধান শুকানোসহ সংসারের প্রায় সকল কাজই করতে হয় তাদের।

আলাপ করে জানা গেলো দৈনন্দিন সাংসারিক কাজের পাশাপাশি এসব কাজ করতে গিয়ে তাদের বিরক্তি থরেনা। বরং নিজের কাজ মনে করেই পরিবারের ভালোর জন্য স্বতস্ফুর্ত হয়ে তারা কাজ করেন। হাওরের সোনার ফসল ফলাানোর সঙ্গে তাদের শ্রমঘামও জড়িত। কৃষি পরিবারের নারীরা স্বেচ্ছায় নিজের কাজ মনে করে এসব করলেও হাওরাঞ্চলের দিনমরজু নারী শ্রমিকরা ন্যায্য শ্রমমূল্য পাননা। দেখতে দেখতে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে তলিয়ে যায় সুনামগঞ্জের অন্যতম বড় হাওর দেখার হাওর।

পানি বাড়ছে আর কান্দা (হাওরের কিনার) শ্রেণীর জমি থেকে আধপাকা ধান কাটতে সর্বস্বান্ত কৃষককে সপরিবারে শান্তনার জন্য যথসামান্যা ফসল তোলতে দেখা যায়। কৃষকের সঙ্গে কিষাণীরাও তাদের ছেলে বউ মেয়ে ও স্কুল বয়সী শিশুদের নিয়ে কাচাপাকা ধান তোলতে দেখা যায়। দেখা গেলো দেখার হাওরপাড়ের গ্রাম তাজপুরের কিষাণী জোবেদা খাতন (৫০) সপরিবারে তার তলিয়ে যাওয়া ক্ষেত থেকে শান্তনা ফসল তোলতে ক্ষেতে নেমেছেন। জোবেদা খাতুন জানান, তার দেড় হাল জমির সব ক্ষেতই নিমজ্জিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ঘরবাড়ি তালা মাইরা, ছেলে মেয়ে লইয়া হাওরের কান্দার জমিন তাকি স্বামীর লগে ধান তোলতে আইছি’।

তিনি জানান তার দেড়হাল জমির সব ফসলই তলিয়ে যায়। এবার ছেলে মেয়ে নিয়ে কি খাবেন এই ভাবনায় অস্থির তিনি। পার্শবর্তী গবিন্দপুর গ্রামের কিষাণী বেগম (৩৩) বলেন, ‘ঘরের তাইন (স্বামী) ধান কাটতে আইছন। তাইনের লাগি ভাত লইয়া কিত্তায় (জমি) আইছি’। তিনি জানালেন, বিয়ের পরেই তিনি স্বামী ও তাদের ক্ষেতের শ্রমিকদের খাবার নিয়ে হাওরে আসেন।

পাশাপাািশ গোলায় ধান তোলা পর্যন্ত সময়ে তিনি হাওর ও ধানখলায় রাতদিন অবস্থান করেন। তবে এই সময়ের মধ্যে তাকে পরিবারের জন্য রান্নাও করতে হয়। এই অতিরিক্ত কাজ করতে গিয়ে তার কষ্ট হলেও খারাপ লাগেনা। তিনি এই াজকে পরিবারের কাজই মনে করেন। ইকবাল নগর গ্রামের দিনমজুর নারী শ্রমিক তমিরুন্নেছা বলেন, তিনি ফসলি মওসুমে গৃহস্থ বাড়িতে কাজ করেন।

এই সময় পুরুষ শ্রমিকরা যে শ্রমমূল্য পায় তার চেয়ে ক দেওয়া হয় তাকে। শাল া আনন্দপুর গ্রামের কিষাণী ঝরনা দাস (৩৫) জানান হাওরের কিনারে বাড়ি থাকায় তাকে বোরো ফসল মওসুমে হাওরেই কাজ করতে হয়। ধানের চারা তোলা থেকে শুরু করে জমিতে ধান লাগানোসহ আবারো ধানতোলা পর্যন্ত তাকে কাজ করতে হয়। তিনি জানান, এভাবে হাওর এলাকার স্বচ্ছল অস্বচ্ছল কৃষকসহ সকল পরিবারের নারীকেই এই কাজ করতে হয়। তারা সবাই নিজের কাজ মনে করেই এটি করেন।

দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট এম হেলিনা আক্তার বলেন, সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের নারীরা যুগ যুগ ধরে পুরুষের সঙ্গে হাওরে কাজ করছে। এবার হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজেও তারা দিনরাত কাজ করেছে। তারা এই কাজকে নিজের কাজ মনে করেই দৈনিন্দন কাজের পাশাপাশি সংসারের সুখের জন্য প্রতিটি ফসলি মওসুমে মাঠে কাজ করেন। তবে যারা দিনমজুর শুধু মহিলা শ্রমিক হওয়ার কারণেই তারা সারা দেশের মতো হাওর এলাকায়ও ন্যায্য শ্রমমূল্য পান না। এই বৈষম্য চলছেই।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.