সাবেক এমপি নাজিমউদ্দিন আলমের ওপর হামলায় ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অবাধ, সুষ্ঠু ও ভয়ভীতিমুক্ত পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন। সরকার একতরফা নিজের স্বার্থে নির্বাচন করলে তাদের পতনের জন্য দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলারও হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার রিজভী আহমেদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এ হুশিয়ারি দেন। এদিকে গতকাল ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ভোলায় শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে কিনা দু’একদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেন, আগামী ২৪ এপ্রিল ভোলা-৩ উপনির্বাচনে দলের প্রার্থী হাফিজউদ্দিন আহমেদ, প্রধান সমন্বয়কারী নাজিমউদ্দিন আলমের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আক্রমণ ও গাড়ি ভাংচুরসহ অরাজক ঘটনার মধ্য দিয়ে আগামী উপনির্বাচনের পরিণতি এবং সরকারের অশুভ পরিকল্পনা সম্পর্কে জনমনে আশংকা সৃষ্টি হচ্ছে।
ওই নির্বাচনী এলাকার ভোটাররা আতংকিত ও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সহজেই বিজয়ী করা যাবেÑ সেজন্যই এ আক্রমণ। তিনি বলেন, ইতিপূর্বে বারবার ওই নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী সন্ত্রাসের আশংকায় সেনাবাহিনী মোতায়েনের জন্য দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু বিএনপির অভিযোগ আমলে না নিয়ে কমিশন এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি। বিরোধীদলীয় নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী সশস্ত্র বহিরাগত সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি এবং বিএনপির নির্বাচনী সভা ও প্রচার-প্রপাগান্ডায় বাধা দেয়াসহ নানা বিষয়ে প্রতিনিয়ত নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করার পরও দিন দিন সরকারি সন্ত্রাসের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আক্রমণ করে জখম করা হচ্ছে, হুমকি ও ভীতি প্রদর্শন করে জনমনে ত্রাসের সৃষ্টি করা হচ্ছে।
তারই ধারাবাহিকতায় নাজিমউদ্দিন আলমকে আঘাত করে মারাÍক আহত করা হয়েছে, যাতে বিএনপির প্রার্থীকে ভোট দিতে ভোটাররা ভয় পায়। তিনি অবিলম্বে নাজিমউদ্দিন আলমের সুচিকিৎসা এবং তার ওপর আক্রমণকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। আওয়ামী লীগ ভোলা-৩ নির্বাচনী এলাকায় যে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে তাতে শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে থাকবে কিনা এ বিষয়ে দু’একদিনের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। বৃহস্পতিবার তার মতিঝিল কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি কথা বলেন। এদিকে গত বুধবার নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষে যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে একজন ম্যাজিস্ট্রেট রাখাসহ পাঁচ দফা দাবি জানান।
অন্য দাবিগুলো হলÑ নির্বাচেন সেনা মোতায়েন, প্রতি ইউনিয়নে র্যাব ক্যাম্প স্থাপন, লালমোহন থানায় ভোট গ্রণের দিন একজন নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত থাকা ও বহিরাগত মাস্তানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। ভোলা-৩ উপনির্বাচনের প্রধান সমন্বয়ক নাজিমউদ্দিন আলমের ওপর সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ইতিপূর্বে নির্বাচনী এলাকার অরাজক পরিস্থিতি সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করা হয়েছিল। একই সঙ্গে কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেছিলাম আমরা। কিন্তু ইসি আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। যার ফলে আজকের এ ঘটনার সূত্রপাত।
নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে তাদের পদত্যাগ দাবি করেন তিনি।
ছাত্রদলের বিক্ষোভ : ভোলায় নাজিমউদ্দিন আলমের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনের স্কাউট মার্কেট থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেস ক্লাবে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, শহিদুল ইসলাম বাবুল, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, ওবায়দুল হক নাসিরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
জাসাসের আলোচনা : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, গত বছর ছিল ধোঁকা ও প্রতারণার বছর।
এ বছর হবে সব অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বছর। বুধবার মুক্তাঙ্গনে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিএনপির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক গাজী মাজহারুল আনোয়ার, জাসাসের সভাপতি আবদুল মালেক, সাধারণ সম্পাদক বাবুল আহমদ, কৃষক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক শাজাহান মিয়া সম্রাট প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না : হাফিজ : বিএনপি প্রার্থী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ গতকাল বৃহস্পতিবার ভোলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করে বলেন, তিনি প্রথম থেকেই নির্বাচনের পরিবেশ নেই এ জন্য সেনাবাহিনী দাবি করেছিলেন। এখন নির্বাচনের ৯ দিন আগে তার কথাই সত্যি হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা সশস্ত্র হামলা ও মহড়া দেয়ার ফলে বিএনপি কর্মীরা মাঠে যেতে পারছে না। এ অবস্থায় ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যাবেন না। তিনি আরও বলেন, লালমোহন-তজুমদ্দিনে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির ঘোরতর অবনতি হয়েছে। ২ হাজার বহিরাগত সন্ত্রাসী প্রতিটি ইউনিয়নে পেশিশক্তি প্রয়োগ করে বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্বিচারে পিটিয়ে আহত করেছে। এ পর্যন্ত ২শ’ নেতাকর্মীকে আহত করা হয়েছে।
৫০ জনকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়েছে। এদের অনেকে লালমোহন, তজুমদ্দিন, ভোলা ও বরিশাল মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নিচ্ছে। এসব আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানেও সন্ত্রসীরা ভয়ভীতি দেখিয়ে চিকিৎসা নিতে দিচ্ছে না। নির্বাচনী জনসভায় হামলা চালানো হচ্ছে। নারীদের অপমান করা হচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।