প্রধান বিরোধী জোট আন্দোলনে। টানা অবরোধ কর্মসূচির কারণে সারা দেশের জনজীবন প্রায় অচল। রাজনৈতিক সহিংসতায় মানুষ মারা যাচ্ছে প্রতিদিনই। বাস-ট্রেনসহ যানবাহনে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি করেছে। দেশের প্রত্যেক নাগরিক নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।
এ রকম ভীতিকর পরিস্থিতিতে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। প্রধান বিরোধী দলবিহীন এই নির্বাচন মনোনয়নপত্র দাখিলের মধ্য দিয়ে গতকাল সোমবার আরেকটি ধাপ অতিক্রম করল।
এরই মধ্যে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ছয়জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন। তাঁরা হলেন: সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর (চাঁদপুর-১), জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ মো. আব্দুস শহীদ (মৌলভীবাজার-৪), রাষ্ট্রপতির ছেলে রেজওয়ান আহাম্মেদ তৌফিক (কিশোরগঞ্জ-৪), মানিকগঞ্জ-২ থেকে কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম, টাঙ্গাইল-৩ থেকে আমানুর রহমান খান এবং লালমনিরহাট-২ আসন থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান আহাম্মেদ। তাঁদের বিপরীতে আর কেউ মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি বলে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানান।
দেশে এর আগে ১৯৮৮ ও ১৯৯৬ সালে এ ধরনের একতরফা নির্বাচন হলেও তার পরিণতি ভালো হয়নি। ’৮৮-এর নির্বাচনের দুই বছরের মধ্যে আন্দোলনের মুখে সেই সরকারের পতন ঘটে। আর ’৯৬-এর ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন দেড় মাসও টেকেনি। এবারও সে রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ।
গতকাল ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। এ দিনে সারা দেশে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, জাতীয় পার্টিসহ (জেপি) ১৫টি দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ৩০০ আসনে এক হাজার ১০৭ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। মনোনয়নপত্র দাখিলকারী অন্য দলগুলো হচ্ছে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), তরীকত ফেডারেশন, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), নবগঠিত আলোচিত-সমালোচিত বিএনএফ।
সরকারের মিত্র জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দল ও ব্যক্তি মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়সীমা বাড়ানোর দাবি জানালেও নির্বাচন কমিশন শেষ পর্যন্ত তা আমলে নেয়নি। এর ফলে বর্তমান তফসিলে বিরোধী দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণের আর সুযোগ থাকল না।
তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) গত রাতে সাংবাদিকদের বলেন, সমঝোতা হলে তফসিল বাতিলসহ সবই সম্ভব।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের ব্যাপারে রাজনৈতিক সমঝোতা হলে নির্বাচন কমিশন বর্তমান তফসিল বাতিল করে নতুন তফসিল ঘোষণা করতে পারে। কারণ, তফসিল তো নির্বাচনের জন্য। নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে নতুন তফসিল ঘোষণা করতে কোনো সমস্যা হবে না।
২০০৭ সালের জানুয়ারিতে নবম সংসদ নির্বাচনের জন্য ঘোষিত তফসিল বাতিল করা হয়েছিল ‘জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্ট’ অনুযায়ী।
কারণ, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) তফসিল পরিবর্তনের কোনো বিধান নেই।
এবার সমঝোতার লক্ষ্যে সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে ফলপ্রসূ সংলাপ একেবারেই সুদূরপরাহত। দুই দলের সাধারণ সম্পাদক ও মহাসচিব পর্যায়েও আলোচনার কোনো পরিবেশ এখন আর নেই। সরকারি দল এখন নির্বাচনী ময়দানে। বিরোধী দল আন্দোলনে এবং তাদের সবপর্যায়ের নেতারা আত্মগোপনে।
এই অবস্থায় গতকাল মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছে অনেকটা নিভৃতে। মনোনয়নপত্র দাখিল করতে যাওয়ার পথে একাধিক প্রার্থী বিরোধী দলের হামলার শিকার হয়েছেন। অবরোধের কারণে কয়েকজন প্রার্থীকে হেলিকপ্টারে করেও মনোনয়নপত্র দাখিল করতে যেতে হয়েছে, যা নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন।
নির্বাচন একতরফা হওয়া সত্ত্বেও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে ব্যাপক। বিশেষ করে বিলবোর্ড স্থাপন, ফেস্টুন টাঙানো প্রভৃতি ক্ষেত্রে।
এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সরকারদলীয় বেশ কিছু বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল অস্বস্তিতে আছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে আগে থেকেই। আন্দোলনরত বিরোধী দল তাদের চলমান অবরোধ কর্মসূচি আরও ৫৯ ঘণ্টা বাড়িয়ে আগামী বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত পুনর্নির্ধারণ করেছে।
বিদ্যমান তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৫ ও ৬ ডিসেম্বর।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৩ ডিসেম্বর। ভোট গ্রহণ ৫ জানুয়ারি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।