গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ১৪৭টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তার মধ্যে গোলযোগের কারণে ১৫২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। আগামী ২৪ জানুয়ারির আগে স্থগিত ভোট কেন্দ্রগুলোতে পুনরায় ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে ১৫৩টি আসনে একক প্রার্থী থাকায় ১৫৩ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বেসরকারিভাবে এ পর্যন্ত ফলাফল অনুযায়ী ২৯৩টি আসনে আওয়ামী লীগের ২৩৩ জন, জাতীয় পার্টির ৩৩ জন ও অন্যান্য দল থেকে ২৭ প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।
বিরোধী দল এ নির্বাচনকে ভোটারবিহীন, তামাশাপূর্ণ ও ভাগাভাগির নির্বাচন উপাধি দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছেন। সে জন্য তারা এই নির্বাচনী ফলাফল বাতিল না হওয়া পর্যন্ত হরতাল-অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে সরকারি দল থেকে বলা হয়েছে, 'গণতান্ত্রিক শাসন অব্যাহত রাখতে এ নির্বাচন করা ছাড়া বিকল্প পথ খোলা ছিল না। বিরোধী দল সমঝোতায় এলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চিন্তা করা যাবে। ' অন্যদিকে সরকার সমর্থক কতিপয় বুদ্ধিজীবী বলা শুরু করেছেন, মৌলবাদী রাজনীতির উত্থান ঠেকাতে এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে 'নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র' কিংবা 'গণতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্র' প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।
সবার মনে থাকার কথা '৭৪-৭৫ সালে একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। তখন জাসদ ও সর্বহারা পার্টির নৈরাজ্যিক কর্মকাণ্ড এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের দুর্নীতি ঠেকাতে কয়েকটি বামপন্থি দলের পরামর্শে বঙ্গবন্ধু 'বাকশাল' ব্যবস্থা কায়েম করেন (যদিও 'বাকশাল' ব্যবস্থা কায়েমের সময় তিনি বলেছিলেন ব্যবস্থাটি সাময়িক। দেশে স্থিতিশীলতা আসলে গণতান্ত্রিক শাসন পুনঃপ্রবর্তন করা হবে)। আমরা জানি, গণতন্ত্র একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যবস্থা। গণতন্ত্রকে মজবুত ও কার্যকরী করতে এর ডানে-বামে কোনো বিশেষ্য কিংবা বিশেষণ সংযোগের প্রয়োজন পড়ে না।
(এখানে মৌলিক গণতন্ত্র, নয়া গণতন্ত্র, সাম্যবাদী গণতন্ত্র, কৃষক-শ্রমিকের গণতন্ত্র, খ্রিস্টীয় গণতন্ত্র, ইসলামী গণতন্ত্র ইত্যাদি উদাহরণ হতে পারে)। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের পথে হাঁটেনি বলেই দেশে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিনির্ভর রাজনীতির উত্থান ঘটেছিল। একইভাবে বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক শাসন উপহার দিতে ব্যর্থ হওয়ায় একদিকে মৌলবাদী রাজনীতির উত্থান ঘটেছে এবং অন্যদিকে দলীয় নেতা-কর্মীরা সীমাহীন দুর্নীতি করার সাহস পেয়েছে। আবার দলকানা কিছু বুদ্ধিজীবী বলা শুরু করেছেন, স্বৈরাচারী এরশাদ যদি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে আড়াই বছর ক্ষমতায় থাকতে পারেন, তাহলে আওয়ামী লীগের মতো বিশাল দল কেন পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না! এসব যুক্তিকে কুযুক্তি হিসেবে গণ্য করা উচিত এ জন্য যে, আইয়ুব খান, জিয়াউর রহমান কিংবা এরশাদ গণতান্ত্রিক রাজনীতির হাত ধরে ক্ষমতায় আসেনি। সে জন্য তাদের কাছে গণতান্ত্রিক শাসনও কেউ আশা করেনি।
তাদের কাছ থেকে যেসব গণতান্ত্রিক অধিকার পাওয়া গেছে সেগুলোকে অতিরিক্ত পাওয়া হিসেবে মনে করা হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন ভোট ও ভাতের জন্য সংগ্রাম করেছেন। সে জন্য একদলীয় শাসনব্যবস্থা তার সারা জীবনের অর্জনকে কিছুটা হলেও কালিমা লেপন করেছে। বর্তমান অবস্থাতে কেউ কেউ মনে করেন, বিরোধী দল জ্বালাও-পোড়াও কর্মকাণ্ড ও জামায়াতের সঙ্গ পরিত্যাগ করে সমঝোতায় আসার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। সে কারণে সরকারের কঠোর রাস্তা গ্রহণ ছাড়া সহজ কোনো পথ খোলা নেই।
এমতাবস্থায় আগামীতে বাকশালের মতো 'সীমিত গণতান্ত্রিক শাসন' এলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।
লেখক : গণতন্ত্রায়ন ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার বিষয়ের গবেষক।
e-mail:musha.pcdc@gmail.com
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।