গতকাল মঙ্গলবার বেলা এগারটা। রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরি পাড়ার সিটি ডেন্টাল কলেজের গলি থেকে বের হয়ে পদ্মা সিনেমা হলের পাশে ফুটপাতের কাগজ কুড়াচ্ছিল এক শিশু। শিশুটিকে ডাকতেই সে বলল, বুঝেছি, আপনি আমার দাঁত তুলবেন। আমি দাঁত তুলব না। আর ওই গলিতেও যাব না।
তার দাঁত তুলব না এবং তাকে ওই ডেন্টাল কলেজের গলিতেও নেব না বলেও পাশের একটি দোকানে চা খাওয়ানো গেল না। বহু কষ্টে তাকে বুঝিয়ে কথা বলতে রাজি করানো গেল।
দশ বছরের শিশুটির নাম আলম। এর আগেও একবার সিটি ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীরা তার দাঁত তুলতে ওই কলেজে নিয়ে গিয়েছিল। সে সময় দাঁত তুলতে থাকা অন্য এক শিশুর চিৎকার শুনে আলম ওখান থেকে পালিয়ে যায়।
তখন থেকেই সিটি ডেন্টাল কলেজ তার কাছে আতঙ্কের নাম।
শিশু আলম আরো জানায়, সে মালিবাগ রেললাইনের পাশের বস্তিতে থাকে। তাদের বস্তির আরো কমপক্ষে ১০ শিশুর দাঁত তোলা হয় ওই কলেজে। দাঁত তোলার আগে সব শিশুকেই তাদের চাহিদা মতো বিভিন্ন ধরনের খাবার কিনে দেওয়া হতো।
র্যাব, পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, চৌধুরী পাড়ার পদ্মা সিনেমা হলের ঠিক উল্টো পাশে ১০৮৫/১ নম্বর ভবনে সিটি ডেন্টাল কলেজের শিক্ষা কর্যক্রম চলে।
এ কলেজের ইন্টার্নি চিকিৎসকরা তাদের হাত পাকাতে এলাকার পথ শিশুসহ অন্যান্য শিশুদের মজাদার বিভিন্ন খাবারের লোভ দেখিয়ে কলেজে নিয়ে তাদের দাঁত পরীক্ষা করে। পরে তাদের দাঁতে বিভিন্ন সমস্যার অজুহাত দেখিয়ে সে দাঁত তুলে ফেলে ইন্টার্নি চিকিৎসকরা। এসব শিশুদের কার কতটি দাঁত তুলতে হবে তা নির্ধারণ করতেন গ্রেফতার হওয়া ওই কলেজের বহির্বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহফুজ আল ফয়সাল তিনু।
কলেজের উপাধ্যক্ষ আজিজা বেগম প্রলোভন দেখিয়ে শিশুদের দাঁত তোলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন,বিনামূল্যে নষ্ট দাঁত তোলা হতো। কিন্তু এলাকাবাসী ভুল বোঝায় এখন তা বন্ধ করে দেয়া হবে।
র্যাব-৩ এর ক্যাপ্টেন শরিয়ত উল্লাহ জানান, শিশুদের দাঁত তোলার নির্দেশ দেওয়ার কারণেই তিনুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার ওই কলেজের এক ইন্টার্নি চিকিৎসক কলেজের পাশের হাজিপাড়া বিজিএম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর তিন ছাত্রী ফাতেমা, সোনালী ও সঞ্চিতাকে বিরানী খাওয়ানোর পর তাদেরকে ফুসলিয়ে কলেজে নিয়ে যান। সঞ্চিতার দাঁত তোলার সময় তার চিৎকারে সোনালী ও ফাতেমা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। র্যাব জানায়, কলেজের রেজিস্টার অনুযায়ী গত প্রায় ছয় মাসে শতাধিক শিশুর দাঁত তোলা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে সবাইকেই সঞ্চিতার মতো ফুসলিয়ে দাঁত তোলা হয়।
অন্যদিকে গ্রেফতার হওয়া তিনু গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার সিএমএম আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এ মামলার অন্য আসামি কলেজের ইন্টার্নি চিকিৎসক কানিজ ফাতেমা পুলিশের খাতায় এখনো পলাতক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।