৪ মার্চ ২০০৯। সন্ধ্যায় অ্যাসাইন্টমেন্ট শেষে অফিসে এসেছি। আমি তখন ফোকাস বাংলা নিউজ-এর স্টাফ রিপোর্টার। নিত্যদিনের মতো সেই সন্ধ্যায়ও খুটিয়ে খুটিয়ে পত্রিকা পড়ছিলাম। হঠাৎ ইত্তেফাক পত্রিকার ভেতরের একটি বিজ্ঞাপনের দিকে চোখ আটকে গেলো।
এবার একটু ঝুকে পড়লাম। বিজ্ঞপ্তিটা ছিলো এ ধরনের- কিডনি বিক্রি হবে। যোগাযোগ করুন ০১৮১৮.....। ঠিক যেন এ ধরনের একটি খবরই দীর্ঘদিন ধরে খুঁজছিলাম। যদিও আমার অগ্রজদের কাছে এ ধরনের আরো অনেক খবরই রয়েছে।
তারপরেও কেন যেন আমার ওই যুবকের আদ্যোপান্ত জানাটা সেই মুহুর্তে সবচেয়ে জরুরী মনে হলো।
যে কথা সেই কাজ। সাথে সাথে মুঠো ফোনটা টিপতে লাগলাম এবং প্রথম চেষ্টাতে সফলও হলাম। বোধকরি ও পাশের আলোআধারি মানুষটির বয়স ৩৫-এর কোঠাতেই সীমাবদ্ধ ছিলো। এও বুঝতে পারলাম আমার ফোনটা পেয়ে প্রথম ধাক্কায় বেঁচারা ভীতসন্তস্ত হয়েছে।
তখন আমিও তাকে আমার পরিচয়টা দিলাম।
আমার আবেগটা বোধয় তখন একটু বেশিই কাজ করেছিলো মনের মধ্যে। আর তাই বোকার মতোই তার কাছে জানতে চাইলাম কিডনি বেঁচতে চাচ্ছেন কেন।
জানিনা সেও বোধয় তখন আমাকে বোকাই ভেবেছিলো। তাই বিনিত আবার কিছুটা বিরক্ত হয়েই বললেন ভাই কিডনি কি আর কেউ সখে ব্যাচে।
নিজেই লজ্জা পেলাম। তবে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনিই জানালেন কিডনি বিক্রির গল্পটি। একটি এ্যাপার্টমেন্টে নৈশ্য প্রহরির চাকরী করেন। বাড়িতে স্ত্রী ছাড়াও দুটি সন্তান ও বৃদ্ধ মা রয়েছে।
কিন্তু চাকরীর বেতনে দিন চলছিলো না বলেই কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। বাবা পুলিশের ওসি ছিলেন। সেও তাদের ফেলে অন্যত্র সংসার বেধেছে। কথাগুলো বলতে বলতে কেদে ফেললেন।
অনেক বোঝানোর পর তার সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে রাজি করালাম।
দেখা না করার কারন হিসেবে জানান-বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর অনেকেই নাকি তাকে ফোন করে হুমকি দিয়েছে।
অনেক কষ্ঠে এক পর্যায়ে তাকে রাজি করাই এবং তা ওই দিন রাতেই।
তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী উত্তরার দিকে রওয়ানা হলাম। সাথে নিলাম আলোকচিত্রি লুৎফর ভাইকে।
মনে মনে ভাবতে লাগলাম লোকটির সাহায্যের জন্য পরিচিত দুই শিল্পপতির সাথে কথা বলবো।
দেড় ঘন্টার রাস্তা পেড়িয়ে রাত ৯ টার পূর্বেই সেখানে পৌছাই।
কথামতো সেখানে গিয়ে ফোন করলাম কিন্তু এবার আর তিনি দেখা করবেন না। প্রায় আধ ঘন্টা মোবাইলে বোঝানোর চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হলাম।
অপরদিকে লুৎফর ভাইতো ততক্ষনে রেগে বিরবির করতে লাগছে। এক পর্যায়ে তাকে বিদায় দিলাম এবং আমি অফিসে চলে যাচ্ছি বলে আরো এক আধ ঘন্টার মতো তাকে বিভিন্নভাবে খোজ করার চেষ্টা করলাম কিন্তু ফলাফল শূণ্য।
পরে আর একদিন ফোন করেছিলাম এবং কিছুটা ক্ষুদ্ধ হয়েই ফোনটা করেছিলাম। কিছুটা টিপ্পনি কেটে জানতে চাইলাম কিডনিটা বিক্রি হয়েছিলোতো ?
অপর প্রান্তের জবাব ছিলো "না"।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।