মনে হয় বুনো পাখিদের দেশ থেকে দেশান্তরে যাতায়াত দেখেই তারা পালাবার শিক্ষালাভ হয়েছিল।
Click This Link
হোসাইন জাকির
স্থায়ী গঠনতন্ত্র সংশোধন প্রশ্নে নির্বাচন কমিশন এবং জামায়াতে ইসলামী মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। গঠনতন্ত্রের কয়েকটি ধারা সংবিধান এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ পরিপন্থী উল্লেখ করে তা সংশোধনে ২৪ জানুয়ারি জামায়াতকে চিঠি দেয় কমিশন। জামায়াত বলছে, যেসব ধারার বিষয়ে কমিশন আপত্তি জানিয়েছে এগুলো সংবিধান পরিপন্থী নয়। বরং সংবিধান এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এসব ধারা গঠনতন্ত্র থেকে বাদ দেয়া হলে জামায়াত আর জামায়াত থাকবে না, কমিউনিস্ট পার্টি হয়ে যাবে। গঠনতন্ত্র সংশোধন প্রশ্নে কয়েকদিন আগে অনুষ্ঠিত জামায়াতের নীতি-নির্ধারকদের বৈঠকেও ইসির প্রস্তাব নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করা হয়। এ অবস্থায় ইসির চিঠির এক মাস পরও গঠনতন্ত্র সংশোধনে কোন সাড়া দেয়নি জামায়াত। চলতি মাসে জামায়াত কোন উত্তর না দিলে মার্চের প্রথম সপ্তাহে গঠনতন্ত্র সংশোধনে দ্বিতীয়বার চিঠি দেবে কমিশন। তারপরও গঠনতন্ত্র সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া না হলে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হবে।
এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হাসেন বলেন, ‘গঠনতন্ত্র সংশোধনে জামায়াতের কিছু বক্তব্য তিনি পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন। জামায়াত যদি গঠনতন্ত্র সংশোধনে অপারগতা প্রকাশ করে কমিশনে চিঠি দেয়, তাহলে এ চিঠি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে কমিশন। প্রথম চিঠির কোন উত্তর পাওয়া না গেলে দ্বিতীয় চিঠি দিয়ে প্রথম চিঠির বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে। এরপরও কোন সদুত্তর না মিললে নিবন্ধন আইনানুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে। ’
এ বিষয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের কাছে ফোনে জানতে চাইলে তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা অধ্যক্ষ ইজ্জতুল্লাহর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
বলেন, ইজ্জতুল্লাহ গঠনতন্ত্র সংশোধনের বিষয়টি দেখভাল করছেন। জামায়াতের কর্মপরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা ইজ্জতুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, ইসির চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কি ব্যবস্থা নেয়া যায় তা নির্ধারণে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি কাজ করছে। গঠনতন্ত্রের কোন ধারা আদৌ সংবিধান পরিপন্থী কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিবন্ধন আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হলে কোন ধারা সংশোধন করা হবে না বলে জানান তিনি। জামায়াতের গঠনতন্ত্রের ধারা-২ এর (৫) নিয়ে আপত্তি জানায় কমিশন।
এ ধারায় আছে ‘আল্লাহ ব্যতীত অপর কাহাকেও বাদশাহ, রাজাধিরাজ ও সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মানিয়া লইবে না, কাহাকেও নিজস্বভাবে আদেশ ও নিষেধ করিবার অধিকারী মনে করিবে না। কাহাকেও স্বয়ংসম্পূর্ণ বিধানদাতা ও আইন প্রণেতা মানিয়া লইবে না এবং আল্লাহর আনুগত্য ও তাহার দেয়া আইন পালনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত নয় এমন সকল আনুগত্য মানিয়া লইতে অস্বীকার করিবে। কেননা স্বীয় সমগ্র রাজ্যের নিরঙ্কুশ মালিকানা ও সৃষ্টিলোকের সার্বভৌমত্বের অধিকার আল্লাহ ব্যতীত অপর কাহারও নাই। ’ এ ধারায় দেশের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে অস্বীকার এবং প্রচলিত আইন-কানুনকে অবজ্ঞা করা হয়েছে বলে ইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
গঠনতন্ত্রের ধারা (৩)কেও আইন পরিপন্থী হিসেবে উল্লেখ করেছে কমিশন।
৩ এর (১)-এ বলা হয়েছে, ‘ইসলামী মূল্যবোধের উজ্জীবন ও জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বকে সর্বপ্রকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক হুমকি এবং বিশৃঙ্খলা হইতে রক্ষা করিবার প্রচেষ্টা চালানো’ এ ধারার ব্যাখ্যায় বলা আছেÑ ‘এইখানে সার্বভৌমত্ব শব্দটি ভৌগোলিক অর্থে ব্যবহার করা হইয়াছে। ইসলামে আইনগত সার্বভৌমত্বের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ। ’ এ ধারায় সুকৌশলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ইসি।
গঠনতন্ত্রের ধারা (৬)-এ ইসলামের পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় সংশোধন আনয়নে সরকার পরিবর্তন এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে খোদাভীরু ও সৎ নেতৃত্ব কায়েমের চেষ্টার কথা বলা আছে। এতে জীবনের সবক্ষেত্রে ইসলাম অনুসরণ ও ইসলাম প্রতিষ্ঠায় সবাইকে সংগঠিত করা এবং প্রশিক্ষণের তাগিদ দেয়া হয়েছে।
এ ধারায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠিত সমাজ ব্যবস্থাকে অস্বীকার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে কমিশন। এভাবে গঠনতন্ত্রের (৭)-এ জামায়াতের লক্ষ্য পরিপন্থী কারও সঙ্গে সম্পর্ক না রাখা, গঠনতন্ত্রের ধারা (১১)তে অমুসলিম নাগরিকদের দলের সদস্য হতে আলাদা নিয়ম রাখা, গঠনতন্ত্রের ১৬ এর ২(খ)তে জামায়াতের লক্ষ্য অর্জনে ‘জান-মাল’ দিয়ে চেষ্টা করার কথা বলা হয়েছে। এসব ধারায় সাম্প্রদায়িক অভিপ্রায়ের লালন এবং একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েমের অভিপ্রায় রয়েছে বলে মনে করছে ইসি। জামায়াতের গঠনতন্ত্রের শেষ পৃষ্ঠায় ‘বিশেষ নোট’-এ দলের সকল পর্যায়ে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ মহিলা আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গঠনতন্ত্রের মূল ধারার সঙ্গে এ বিষয়টি কেন সম্পৃক্ত করা হয়নি তারও ব্যাখ্যা চেয়েছে ইসি।
ইসির চিঠি পাওয়ার পরও জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াতের গঠনতন্ত্রে নিবন্ধন আইন পরিপন্থী কিছুই নেই। সব বক্তব্য সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইসির দাবি অনুযায়ী গঠনতন্ত্র সংশোধন করতে হলে জামায়াত কমিউনিস্ট পার্টি হয়ে যাবে। গঠনতন্ত্রে ‘আল্লাহ ইসলাম’ এসব শব্দে ব্যবহার করা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি কিনা তা জানতে চান জামায়াত নেতৃবৃন্দ। এ অবস্থায় এখনও জামায়াতের উত্তরের অপেক্ষায় আছে কমিশন।
নিবন্ধন আইন অনুযায়ী কোন দলের গঠনতন্ত্রের উদ্দেশ্য সংবিধান পরিপন্থী, সাম্প্রদায়িক হওয়ার সুযোগ নেই। গঠনতন্ত্রে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, ভাষা, লিঙ্গ বৈষম্যও রাখা যাবে না। একদলীয় ব্যবস্থা সংরক্ষণ ও লালনের উদ্দেশ্য থাকাটাও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।