দৈনিক জনকন্ঠ
শুক্রবার, ৭ ডিসেম্বর ২০১২, ২৩ অগ্রহায়ন ১৪১৯
গঠনতন্ত্র সংশোধন জামায়াতের নতুন ভণ্ডামি
জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসলাম ধর্মের প্রকৃত অনুসারী কোন মুসলমান জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন করতে পারে না। এ দলের নেতাকর্মী হওয়ার প্রশ্ন তো অবান্তর। এরা নরঘাতক। এ দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালীর ওপর বর্বরতা চালিয়ে রেকর্ড সৃষ্টিকারী এরা।
মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত এ দল। এরা পাক হায়েনাদের দোসর। এরা যুদ্ধাপরাধী, এরা পবিত্র ইসলাম ধর্মকে ব্যানারে রেখে ধর্মপ্রিয় ও ধর্মভীরু সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিরন্তর প্রতারণাই করে যাচ্ছে। ইসলাম ধর্মের সঙ্গে, প্রকৃত মুসলমানের সঙ্গে জামায়াতীদের কর্মকা-ের বিন্দুমাত্র সাযুজ্য নেই বলেই বিশেষজ্ঞদের রয়েছে অভিমত। একাত্তর সালে এ দেশের মুক্তিকামী জনতার সংগ্রামে এদের স্বরূপ পরিষ্কারভাবে উন্মোচিত হয়েছে।
এরা নিজ অপকর্মের বিপরীতে কখনও ক্ষমা চায়নি, নিজেদের দুষ্কর্মের ঘটনাবলীকে ভুল বলতেও তাদের কুণ্ঠা। সর্বশেষ নির্বাচন কমিশন প্রণীত নিয়মবিধির আলোকে এ দলটি নিজেদের গঠনতন্ত্র যেভাবে খ-িত করেছে তাতে নতুনভাবে প্রমাণিত হযেছে এরা কত বড় ভ- ও নষ্ট।
মূলত ধর্মের ব্যানারে নিজেদের প্রচারে রেখে এরা স্বাধীন একটি দেশের মানুষের রগ কাটছে বহু আগে থেকে। খুন করছে। অনৈতিক এবং অনৈসলামিক কর্মকা-ে জড়িত থেকেছে।
বছরের পর বছর এরা নিজেদের যে নীতি আদর্শের সংগ্রামের কথা বলে এসেছে, এখন দেখা যাচ্ছে তারা তা থেকে সরে যাচ্ছে। মুখে আল্লাহ প্রদত্ত বিধিবিধানের আলোকে রাজনীতি সমাজনীতিসহ সর্বক্ষেত্রে ধর্মীয় ন্যায়নীতি প্রয়োগের কথা বলে বছরের পর বছর যারা ধর্মপ্রিয় বিশেষ করে যুব সমাজের সঙ্গে প্রকারান্তরে ভণ্ডামি করে তাদের অপরাজনীতির শিকারে পরিণত করেছে, ‘মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী’ ধর্মীয় রগরগে স্লোগানে উজ্জীবিত করেছে, ধর্মপ্রিয়দের ধর্মান্ধ করেছে, রগকাটা শিখিয়েছে এরা নাকি এখন নিজেদের গঠনতন্ত্রে মহান আল্লাহ্ ও পবিত্র ইসলাম ধর্মের কতিপয় শব্দ ব্যবহার থেকে সরে যাচ্ছে। পবিত্র ইসলাম ধর্মের বুলি আওড়িয়ে এখন এরা মূলত যাচ্ছে ভ-ামির আরও নতুন কৌশল নিয়ে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের প্রণীত কড়া নিয়মনীতির ফলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তাদের গঠনতন্ত্রে ব্যাপকভাবে পরিবর্তন এনে আরপিও পরিপন্থী কিছু ধারার পরিবর্তন ঘটিয়ে সংশোধিত আকারে তা ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে পেশ করেছে। এসব সংশোধনীতে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে আল্লাহ, আল্লাহ প্রদত্ত, রসূল প্রদর্শিত রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েমের ইতোপূর্বেকার শব্দ বাক্য বাদ গিয়ে নতুন শব্দ ও বাক্য বিন্যাস করা হয়েছে।
ইসলামী ও আল্লাহ শব্দগুলো পরিবর্তন ঘটিয়ে ন্যায়, ইনসাফভিত্তিক শব্দগুলো প্রয়োগ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তাদের গঠনতন্ত্র থেকে বাদ দেয়া হয়েছে ‘আল্লাহব্যতীত কাহাকেও স্বয়ংসম্পূর্ণ বিধানদাতা ও আইন প্রণেতা মানিয়া লইবে না এবং আল্লাহর আনুগত্য ও তাহার দেয়া আইন পালনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত নয় এমন সকল আনুগত্য মানিয়া লইতে অস্বীকার করিবে’ এমন নীতি বাক্যও। খোদাভীরু নেতৃত্ব কায়েমের চেষ্টার কথা বাদ দিয়ে এখন তারা বলছে চরিত্রবান নেতৃত্বের বুলি। যা নতুনভাবে সংশোধিত গঠনতন্ত্রে সংযোজন হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে বৃহস্পতিবার জানানো হয়, জামায়াতে ইসলামী অত্যন্ত কৌশলে ধর্মীয় রাজনীতির বাক্য, শব্দ এমনকি আল্লাহ-রাসূলের আইনের কথাও বাদ দিয়ে সংশোধনীতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
সংশোধনীতে এসেছে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের বাক্যাবলী। এই জামায়াতের সদস্য হওয়ার জন্য ইসলামী ধ্যানধারণায় বিশ্বাসী ও শরীয়তের নির্ধারিত ফরজ ও ওয়াজিব আদায়ের শর্ত যুক্ত ছিল। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, এ বাক্য এখন পুরোপুরি বিলুপ্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশে ইসলামের সুবিচারপূর্ণ শাসন কায়েম করে সমাজ থেকে সকল প্রকার জুলুম শোষণ, দুর্নীতি ও অবিচারের অবসান ঘটানোর আহ্বানের স্থলে ইসলাম শব্দটি বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি এ দুটি শব্দ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। যে কোন অমুসলিম নাগরিক কতিপয় শর্ত পূরণের মাধ্যমে জামায়াতের সদস্য হতে পারার বিধান ইত্যাদি বিলুপ্ত করা হয়েছে।
যা তাদের এত বছরের নীতি আদর্শের বুলির সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। ধর্মের নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে এতদিন তারা যেসব অপকর্ম ঘটিয়েছে এর উত্তরে তারা এখন কি বলবে সে প্রশ্নই আগ্রহী মহলে মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে বীর বাঙালীর বিজয় লাভের পথে বিরুদ্ধাচারণকারী যুদ্ধাপরাধী জামায়াতীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারকার্য দীর্ঘ চার দশকেও সম্পন্ন না হওয়ার জের হিসেবে এরা দীর্ঘ সময়ে সঞ্চার করেছে সশস্ত্র শক্তি। ব্যাপক অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, ব্যাংক, বীমা, সরকারী-বেসরকারী অফিস আদালতসহ হেন স্থান নেই যেখানে এদের শক্ত সম্পৃক্ততা ঘটে ওঠেনি।
শুধু সম্পৃক্ততা নয়, এসব স্থানে এদের শিকড়ের বিস্তৃতি ঘটেছে বহু গভীরে। অতীতে স্বাধীনতার মাস ডিসেম্বর এলে এরা কচ্ছপের ন্যায় মাথা লুকিয়ে থাকত। এবারের ডিসেম্বর মাসে দেখা গেল জামায়াতীদের সহিংস তা-ব দেশজুড়ে। বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য হাতে নিয়ে রায় প্রদানের দ্বারপ্রান্তে, তখন এরা এদের হিংস্রতা আবারও উন্মোচন করেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।