গঠনতন্ত্র সংশোধনেও প্রশ্ন ছাড়ছে না জামায়াতকে
মঈনুল হক চৌধুরী
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ০৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
নিবন্ধন বাতিলে বিভিন্ন দলের দাবির মধ্যে ‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতি’ অনুসরণে বিভিন্ন সংশোধন এনে দলীয় গঠনতন্ত্র জমা দিলেও তাতে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হচ্ছে না নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তারা।
তারা বলছেন, গঠনতন্ত্রে সংসদ ও সংবিধানের কর্তৃত্বে বিষয়ে কিছু উল্লেখ না থাকায় দলটিকে পুনরায় গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য বলা যেতে পারে।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুল মোবারক জানিয়েছেন, জামায়াতের গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
জামায়াতের আইন সম্পাদক জসীমউদ্দীন সরকার অবশ্য মনে করেন, সংশোধিত গঠনতন্ত্রে ইসির নির্দেশনা অনুসরণ করা হয়েছে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্বাচন কমিশনের চাহিদামতো প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে সংশোধিত গণতন্ত্রের তিনটি কপি (প্রতি পৃষ্ঠা সত্যায়িত) জমা দেয়া হয়েছে।
এরপর গঠনতন্ত্র নিয়ে আর কোনো অস্পষ্টতা থাকবে না বলে মনে করি। ”
সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় জামায়াতের গঠনতন্ত্র সংশোধন করতে তাগিদ দিয়ে আসছিল ইসি। রোববার জসীমউদ্দীন ইসির যুগ্ম সচিব জেসমিন টুলীর কাছে সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমা দেন।
ইসির যুগ্মসচিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দলীয় গঠনতন্ত্রের মৌলিক আক্বিদার বিষয়ে ২ (৫) ধারার একটি অংশ বাদ দিয়েছে জামায়াত। বাকিটুকু বহাল রেখেছে।
“আল্লাহ ব্যতিত অপর কাহাকেও বাদশাহ, রাজাধিরাজ ও সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মানিয়া লইবে না, কেননা স্বীয় সমগ্র রাজ্যের নিরঙ্কুশ মালিকানা ও সৃষ্টিলোকের সার্বভৌমত্বে¡র অধিকার আল্লাহ ব্যতিত অপর কাহারও আসলে নাই,” এই আংশিক বিধান বহাল রয়েছে।
বাদ দেয়া হয়েছে- “কাহাকেও নিজস্বভাবে আদেশ ও নিষেধ করিবার অধিকারী মনে করিবে না, কাহাকেও স্বয়ংসম্পূর্ণ বিধানদাতা ও আইনপ্রণেতা মানিয়া লইবে না এবং আল্লাহর আনুগত্য ও তার দেয়া আইন পালনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত নয় এমন সব আনুগত্য মানিয়া লইতে অস্বীকার করিবে। ”
তিন পৃষ্ঠার চিঠিতে জামায়াতের আইন সম্পাদক জসীম জানান, গঠনতন্ত্র ছাপানোর সময় ‘ভুলবশত’ ওই অংশটি বাদ না যাওয়ায় ২০১০ সালের অগাস্টে এই ধারা যথাযথ সংশোধন করে কমিশন সচিবালয়ে জমা দেয়া হয়েছিল।
জেসমিন টুলী বলেন, জামায়াতের গঠনতন্ত্রের ২ ধারার উপধারা ৫-এর আংশিক এ দেশের সংসদের সার্বভৌমত্ব ও আইনসভার কর্তৃত্বকে অস্বীকারের সমতুল্য উল্লেখ করে তা বাদ দেয়ার জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছিল।
“এবার তা বাদ দেয়া হয়েছে।
কিন্তু সংসদ বা সংবিধানের বিষয়ে কোনো কথা কোথাও উল্লেখ নেই। এক্ষেত্রে নতুন করে একটি বিধান যুক্তের বিষয়ে বলা যেতে পারে। ”
অবশ্য নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক আল্লাহর প্রতি আনুগত্য বহাল রাখায় ‘আপাতত আপত্তি’ দেখছেন না।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংবিধানে বিছমিল্লাহির রহমানির রহিম দিয়ে শুরু থাকলে এতে অসুবিধা কোথায়?”
তবে পুরো সংশোধনপত্রটি কমিশন সভায় পর্যালোচনা করার পর পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক হবে বলে জানান তিনি।
ইসির জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ও নিবন্ধন যাচাই কমিটির সদস্য সচিব মেছবাহউদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ছয়টি ধারায় কিছু সংযোজন ও বিয়োজন করে সংশোধন করেছে জামায়াত।
ধারা-৩, ৫ এর উপধারা ৩, ধারা ৬ এর উপধারা ৪ এ পরিবর্তন আনা হয়েছে। ধারা ৭ এর উপধারা ১-৪, ধারা ১১ উপধারা ২ ও ধারা ১৮ এর উপধারা ৪(চ) বিলুপ্ত করেছে জামায়াত।
বিশেষ নোটে (গঠনতন্ত্রের ৬৪ পৃষ্ঠা) সংশোধন এনে জামায়াতের সব পর্যায়ের কমিটিতে ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ মহিলা সদস্য সম্পৃক্ত করার বিধানটি যুক্ত করা হয়।
কমিশন সভায় উপস্থাপনের আগে গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা কমিটিতে সার্বিক বিষয়ে পর্যালোচনা করা হবে বলে জানান মেছবাহউদ্দিন।
অন্তত সাতটি ধারায় আপত্তি সত্ত্বেও নবম সংসদে শর্তসাপেক্ষে জামায়াতকে নিবন্ধন দেয় এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসি।
এরপর তিনবার গঠনতন্ত্র সংশোধনের তাগিদ দেয়ার হলেও তা আমলে আনেনি দলটি।
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন ইসি এজন্য জামায়াতকে এক মাস সময় বেঁধে দেয়। নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার তিন দিন আগে ২ ডিসেম্বর সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমা দিল দলটি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।