কত দিন এখানে আসা হয় না। চারদিকে কেমন ঘাসের জঙ্গলে ছেয়ে গেছে। চারদিকে কুয়াশার চাদর ভেদ করে সূর্যের আলো উকি ঝুকি মারছে। ঘাসের ডগায় ফোটা ফোটা শিশির জমে রয়েছে। রোদ পড়ে কেমন ঝলমল করছে।
কাব্য হাত দিয়ে ছোযার চেস্টা করে। শিশির ফোটা কেমন হাত বেয়ে গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছে। তার বাবার এপিটাফের লেখাগুলি কালের বিবর্তনে অস্পষ্ট হয়ে পড়েছে । কাব্যের লজ্জা লাগে। হাত বাড়িয়ে এপিটাফের উপর জমে থাকা ধুলা পরিস্কার করতে চেষ্টা করে।
ছেলে বেলায় বাবার সাথে কাটানো অসংখ্য স্মুতি মনের পর্দায় এক সাথে এসে ভিড় করে। কাব্যের গাল বেয়ে চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে। কাব্য মুছার কোন চেষ্টা করে না। কারো সমাধির সামনে দাড়িয়ে নাকি চোখের পানি ফেলতে নেই। কেন এই কথা বলা হয়েছে কাব্যের জানা নাই।
সে কেমন করে হারিয়ে যাওয়া অসম্ভব ভাল লাগার স্মুতিগুলি তার মন থেকে মুছে ফেলবে।
নিজেকে তার কেমন স্বার্থপর মনে হয়। আজ কত দিন পর সে এখানে এসেছে। খুব ছোট বেলায় সে যখন হাটতে পারত না তখন বাবার হাত ধরে দাড়াতে চেষ্টা করত। বাবা তার হাত কখনও ছাড়েননি।
আজ যখন তাকে তার বাবার সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন সে কত অবলিলায় তার বাবার হাত ছেড়ে দিয়েছে।
মৃত্যুর সাথে সাথেই কি একটা মানুষের সব কিছু শেষ হয়ে যায়। সমস্ত স্মৃতি, ভাল লাগা, মন্দ লাগার সমস্ত অনুভূতি। তার সামনে বাবার নামের সেই মানুষটা নাই। বিপদে পড়লে আজ আর সেই মানুষটা তাতে আগলে দাড়াবে না।
বলবে না- খোকা ভয় নেই আমি আছি। কিন্তু আর সব কিছুতো ঠিকই রয়ে গেছে। এই যে সে তার বাবার সামনে দাড়িয়ে রয়েছে তার বাবাতো তাকে দেখতে পাচ্ছেন। এখনই বুঝি ধরা গলায় বলে উঠবেন-কিরে খোকা, কত কাল পরে এলি। এত দিন পরে বুঝি বাবার কথা মনে পড়ল।
কাব্য ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে তার বাবার সমাধিটা ছোয়ার চেষ্টা করে। ধরা গরায় বলে উঠে-বাবা আমি তোমার অপরাধী। ভুল মানুষকে নিয়ে তুমি স্বপ্ন দেখেছ। কই কোন স্বপ্নইতো আমি তোমার পূরণ করতে পারলাম না। কেন তবে ছেলে বেলায় শুনিয়েছ ঘুম পাড়ানির গান।
কেন স্বপ্ন দেখেতে শিখিয়েছ। তা না হলেই বুঝি ভাল ছিল। আজ বুকের মাঝে এক কষ্ট অনুভব হত না।
কাব্য যখন ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করে তখন বাবার ছেলে মানুষী কান্ডে খুব লজ্জা পেত। রাস্তা পার হবার সময় বাবা হাত ধরে রাখতেন, ছেলে দিলেই বুঝি কাব্য হারিয়ে যাবে।
বাবা বুঝতেন না সে এখন বড় হয়ে গেছে। হাত ধরে রাখার এখন আর দরকার নেই। রাস্তার লোকজনরাই বা কি বলবে। দেখ দেখি কত বড় ছেলে বাবার হাত ধরে হেটে যাচ্ছে। বাবা কতই না বোকা ছিলেন।
আজও কাব্য সেই ছেলে মানুষী লজ্জা অনুভব করে। বাবার উপর এক রাশ অভিমান এসে জমা হয়। বাবা কেন তুমি আমার হাত ছেড়ে দিলে। এখনও যে তোমার সেই ভালবাসার হাতখানি আমার বড়ই প্রয়োজন।
কাব্য এপিটাফটাতে হাত বুলায়।
বাব তোমার কানে কানে বলি-আবার আমাদের দেখা হবে। যেখানেই তুমি থাক, যতই দূরে। তোমার হাত ধরে ছেলেবেলার মত আমরা দুইজনে আবার রাস্তা ধরে হেটে যাব। এখনও যে আমাদের অনেক পথ হাটা বাকী। বিদায় বাবা, ভাল থেকো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।