আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এপিটাফ

পরাজিত হতে হতে আমি উঠে দাড়িয়েছি এবার ফিরে যাবো না খালি হাতে, স্তব্ধতা আর সৌন্দর্যের পায়ে পায়ে এগিয়ে যাই যে কবি সে কখনো খালি হাতে ফিরে যেতে পারে না ।
HERE LIES ONE WHOSE NAME WAS WRIT IN WATER” Feb 24 1821,John Keats মৃত্যুর পুর্বে নিজের এপিটাফটি এভাবেই সম্পন্ন করে গেছেন ইংরেজ কবি জন কীটস। এপিটাফ কবরের ওপর রাখা একটি পাথর মাত্র নয়। এটি ভাবসিক্ত চরণ যা সমাধিস্থ ব্যক্তির জন্য সত্য ,স্থায়ী। এপিটাফ লেখা হয় ধাতবতলে কিংবা পাথরে ।

মানুষ মরে যায় -এপিটাফ রয়ে যায় পাথুরে। পাথুরে এপিটাফ কথা কয় মানুষের সাথে। যুগের পর যুগ চলে পাথুরে-মানুষে সংলাপ ! এপিটাফ থেকে জানা যায় ,মৃতের নাম,জন্ম ও মৃত্যুর তারিখ। কোন কোন এপিটাফে মৃত্যুর কারণ ও সংক্ষিপ্ত জীবনী লক্ষ্য করা যায়। বাংলা ,আরবী,ইংরেজি ইত্যাদি যেকোন ভাষায় এপিটাফ হতে পারে।

তবে ,বাংলাদেশে এপিটাফে বাংলার চর্চাই বেশী । এপিটাফ যে কেবল পাথুরেই লেখা হয় এমন নয়। পাথরের পাশাপাশি আজকাল সিরামিক ,প্লেট ,ব্রোঞ্জ,লোহা,পিতল ইত্যাদি । তবে, পাথরের সংখাই বেশী। বেশীরভাগ এপিটাফেই মৃত ব্যক্তির জন্ম-মৃত্যুর তারিখ খোদাই করা থাকে ।

এসবের ভিড়ে একটি দু’টি বড় মর্মস্পশী ,আবেগমন্ডিত । এপিটাফগুলো পড়ে অনেক সময় অশ্রু সংবরন করা সম্ভব হয় না। যেমন ,আজিমপুর কবরস্থানের একটি কবরের এপিটাফ এরকম : "এখানে মোদের মায়ের কবর আমগাছের তলে, বহু বছর ভিজিয়ে রেখেছি দুই নয়নের জ্বলে" এপিটাফ। বিকৃত হলেও চরনটিতে কতশক্তি,কত ব্যঞ্জনা নিহিত। চলার পথে এমনি কিছু এপিটাফ দেখে আমরা থমকে দাড়াই ।

এপিটাফের কিছু কথা,কিছু উদ্বৃতি আমাদের ভাবিত করে। উদ্বৃতি থেকে খুজে পাই জীবনের মর্মকথা। মরহুম কবি আবদুল কাদিরের এপিটাফটি লক্ষনীয়ঃ "কবি আব্দুল কাদির জন্ম :১-৬-১৯০৬ মৃত :১৯-১২-১৯৮৪ অজস্র সংকটে মাঝে গত প্রায় পঞ্চাশ বছর ভাবিয়াছি আমরন জ্ঞানের অন্নেষা এ জীবন । দেশে দেশে ছিল যার সত্য ছন্দ যুগ যুগান্তর। তারা মোর মর্মমুলে দিয়েছে উৎসাহ -উৎপ্রেরণ।

প্রজ্ঞার প্রান্তরে দেখেয়াছি সৌন্দর্যের আনন্দ নিকর। অবিরাম বহি চলে বিমহিয় । উম্মিদ্র নয়ন । তারি বোধি বটছায়ে মর আসি হয়েছে অমর ,ছিল সেই দৈব বর লভিবারে মম আকিঞ্চন । আজি রোগ শয্যাশ্রয়ে নবভাব হয়েছে উদয় ,রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠে ফুটিয়াছে অন্িতম এই বানী :’আমৃতু দুঃখের তপস্যা এ জীবন।

’ বোধ নহে ,রূপ নহে, এই প্রেমের প্রত্যয় আমাকেও আকর্ষিছে সুখ সুধা শতলীলাভাবে দুঃখের সাধনা পাত্রে সিঞ্চিতেছে রস চিরন্তন-আব্দুল কাদির ১৮-১২-১৯৮৪। " এই এপিটাফটি ছত্রে ছত্রে লিখে গেছেন কবি নিজে মৃত্যুর কিছুকাল আগে। এমনি কিছু মর্মস্পর্শী এপিটাফ লক্ষ্য করা যায় যা মনিষীগন আগাম সম্পন্ন করে গেছেন। যশোরে মহাকবি মাইকেলের এপিটাফটি থমকে দাড়িয়ে ছিলাম আমিও "দাড়াও পথিকবর,তিষ্ট ক্ষণকাল" মনে পড়ে গেল ইয়েটসের এপিটাফঃ Cast a cold eye On life ,on death Horseman,pass by! -W.B.Yeats. বলাবাহুল্য, অনেকটা অলৌকিকভাবেই সম্পন্ন হয় এইধরনের এপিটাফ। কিন্তু যে এপিটাফের ভাষা যারা স্বয়ং দিয়ে যাননি এমন সব এপিটাফও কম মর্মস্পর্শী নয়।

সাত সাগর তের নদীর ওপার থেকেই এসেছিল বৃটিশ সৈনিকরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এই সৈনিকদের অনেকে প্রাণ হারায় বার্মা (বর্তমানে মায়ানমার ) সীমান্েত। তাদের সমাহিত করা হয় কুমিল্লা ক্যন্টনমেন্টে Second world war cemetryখ্যাত সমাধিস্থলে আছে ৭৩৭টি কবর। প্রতিটি কবরেই রয়েছে এপিটাফ। তথাকার টি.ই.প্যাট্রাই এর সমাধিতে এক সোহাগী স্ত্রী প্রাণপ্রিয় স্বামীকে লিখেছেনঃ "হাসি হাসি মুখ আর স্বর্ন হূদয় এমন প্রিয় স্বামী পৃথিবীতে পাবার নয়।

" স্টাফোর্ডশায়ারের একটি সমাধিফলক বিখ্যাত হয়ে আছেঃ "এখানে ঘুমিয়ে আছে বাবা,মা, বোন আর ভাই আমরা সবাই এক বছরের মধ্যে মৃত্যুকে বরন করেছিলাম আমাকে ছাড়া সবাইকে উইম্বলে কবর দেয়া হয় আর আমাকে এখানে " এই এপিটাফটির জন্য। বিজ্ঞানী নিউটনের সমাধিতে কবি আলেক্সজান্ডার পোপের কবিতার চরন এপিটাফ হিসেবে রয়েছেঃ Nature,and nature’s laws, Lay hid in night , God said,let Newton be! And all was light. টৈক্সাসের হ্যলটন নগরীর বার্ডভিল সমাধি এর একটি এপিটাফ দিয়ে লেখার ইতি টানছিঃ Beware ye people passing by, As you are now,so once was I! And as I am now,so must you be, Prepare for death and follow me দেশ বিদেশের সমাধি সৌধে এমনি সব হূদয়স্পর্শী এপিটাফ কেবল পথিকের অশ্রু ঝারায়।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।