চলার পথ অনেক, সত্য পথ একটাই
ধূমপান একটি সামাজিক ব্যাধি । এটা শুধু মাত্র ধূমপায়ী ব্যক্তিদেরকেই ক্ষতি করেনা, অধূমপায়ীদেরও ক্ষতি হয় । এ কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার ১৩ মার্চ ২০০৫ ইং সালে জাতীয় সংসদে ধূমপান বিরোধী আইন পাশ করে । এ আইনে ৫০ টাকা জরিমানা আদায়ের কথা বলা হয়েছে । এতে প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধ না হলেও শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাড়তি আয়ের একটা ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়েছে ।
আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ না থাকলে আইনের মাধ্যমে ধূমপান প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এজন্য সামাজিক আন্দলোন গড়ে তোলা দরকার । শুধু আইনের লঙ্ঘন নয়, মানব স্বাস্থেরও অপুরনীয় ক্ষতি হচ্ছে । ধূমপানের ফলে মানব শরীরের ডি.এন.এ এর টেলোমিয়ার্স ব্যপক ভাবে হ্রাস পায় । একই কারনে ধূমপায়ীরা সহজেই বার্ধক্যের দিকে ধাবিত হয় ।
এক গবেষনায় বলা হয় ধূমপান কিডনীতে স্থায়ী ভাবে মারাত্মক প্রভাব ফেলে । এতে কিডনীর কার্যকারীতা হ্রাস পায় । গবেষকরা আরো বলেছেন যেসব লোকেরা দৈনিক ১৫/২০ টি সিগারেট পান করে তাদের কিডনীর কার্যকারীতা হ্রাস পায় যারা কখনোই ধূমপান করেনা তাদের তুলনায় ৫১% বেশি । গবেষকরা আরো বলেছেন যেসব ব্যক্তি ৪০বছরের বেশি সময় ধরে ধূমপান করেছেন তাদের ধূমপানের পরিমান যাই হোক না কেন তাদের কিডনীর কার্যকারীতা লোপ পায় অধূমপায়ীদের চেয়ে ৪৫% বেশি । ধূমপান শুধু কিডনীরই ক্ষতি করেনা ।
শরীরের অন্যান্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেরও বিকলকরে দিতে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে । ধূমপায়ীদের শারীরিক অবস্থা মুল বয়সের চেয়ে ৪/৫ বছর বেড়ে যায় । মোটা লোকদের ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তাদেরকে সাভাবিক বয়সের তুলনায় ৯/১০ বছরের বেশি বয়স্ক মনে হয় । মৃত্যূ রোগ ক্যান্সার ধূমপানেরই পরিনতি । এছারাও যক্ষা,দন্তক্ষয়,ব্রোংকাইটিস, গ্যাষ্ট্রিক,আলসার,ক্ষুধামন্দা,হৃদরোগ, ফুসফুসের প্রদাহ,মস্তিকে রক্তক্ষরন,করোনারী থ্রোম্বসিস,দৃস্টিহীনতা ইত্যাদি রোগের কারন ধূমপান ।
তামাকে “নিকোটিন” নামক এক প্রকার উগ্র বিষ আছে যার কারনে ধূমপায়ীরা ধীরে-ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায় । দুটো সিগারেটে যে পরিমান বিষ থাকে তা ইনজেকশনের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করালে মৃত্যু অনিবার্য । প্রতিটা মিগারেট ধূমপানে মানুষের জীবন থেকে খসে যায় ৫/৬ মিনিট আয়ু । একজন ধূমপায়ীর ধূমপানের প্রভাব পড়বে তার পরিবার পরিজনের উপর । এর ফলে মায়ের গর্ভস্থ সন্তান বিকলঙ্গ হতে পারে এমনকি মারাও যেতে পারে ।
ধূমপানের ফলে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা ব্যাপক হারে হ্রাস পায় ।
বিভিন্ন কারনে ধর্মীয়,সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ভাবে ধূমপানকে নিরুৎসাহিত করা হয়ে থাকে । এর পরেওবাংলাদেশের মত দেশে ধূমপায়ীর সংখ্যা ৪০%-৭০% । একদিকে সরকার ধূমপান বিরোধী আইন প্রনয়ন করে অন্যদিকে কিছু তামাক কোম্পানী উঠতি বয়সের তরুনদের হাতে বিনা মুল্যে অথবা নামমাত্র মুল্যে সিগারেট তুলে দিচেছ । ইহা মুলত সামাজিক অবক্ষয়ের উপসর্গ মাত্র ।
ধূমপানে যেমন দেহের কোন উন্নতি সাধিত হয়না তেমনি ক্ষুধাও নিবারিত হয় না । তবুও মানুষ ধূমপানে অভ্যস্ত ।
ধূমপানের কারনঃ
০১.পারিবারিক কলহ-কোন্দল,অশান্তি,নৈরাশ্য বা ব্যর্থতা
০২.ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব
০৩.তামাক ব্যবসায়ী দ্বারা প্রলুব্দ হওয়া
০৪.ধূমপায়ী বন্ধুদের সংসর্গ লাভ
০৫.নিছক কৌতুহল বসত ধূমপান
০৬.আভিজাত্য প্রকাশের বাহক মনে করা
০৭. বংশানুক্রমিক চিরন্তন অভ্যাস
০৮. নামমাত্র মুল্যে ধূমপানের উপকরন হাতের কাছে পাওয়া
ধূমপান ছাড়ার উপায়ঃ
ধূমপান ত্যাগ করা কি আসলেই কঠিন কিছু ? ধূমপায়ীরা বলবেন অবশ্যই । ধূমপান ত্যাগ করার জন্য যদি নিজ থেকে কিছু কৌশল রপ্ত করা যায় তাহলে ৯০% লোক সফল হবে । কিছু কৌশল উল্লেখ করা হলো ।
০১. প্রথমই মানষিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে ।
০২.ধূমপানের ফলে সৃষ্ট সমস্যার একটা তালিকা তৈরী করুন ।
০৩.ধূমপান ত্যাগ করলে কি কি লাভ হবে এবং ক্ষতি হবে তার একটি তালিকা তৈরী করুন ।
০৪.ধূমপায়ী ও অধূমপায়ী বন্ধুদের তালিকা তৈরী করুন । তাদের মধ্যে কেউ যদি ধূমপান ত্যাগ করতে পারলে আপনি কেন পারবেন না ।
০৫.ধূমপান ছাড়ার জন্য একটি বিশেষ দিন বা তারিখ নির্বাচন করুন । সেই দিন থেকে ধূমপান ছেড়ে দিন । আপনার সিগারেট,অ্যাসট্রে,লাইটার,ইত্যাদি ছুড়ে ফেলে দিন । আপনার বাসা,গাড়ী,পোষাক সর্বপরি নিজেকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন ।
০৬.আপনার সাথে ধূমপান ত্যাগে যোগ দেওয়ার জন্য আপনার বাড়িতে বা কর্মক্ষেত্রে অন্য ধূমপায়ীদের একাত্র করার চেষ্টা করুন ।
০৭.পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে যান । ধূমপান ত্যাগের আগেই ব্যায়াম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহন শুরু করুন ।
০৮.যতক্ষন পর্যন্ত না আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌছতে পারছেন ততক্ষনে উচ্চ ঝুকিপুর্ন পরিস্থিতি যেমন-ককটেল পার্টি পরিহার করুন ।
০৯.টেনশন থেকে মুক্তির বিকল্প উপায় খুজে বের করুন । মেডিটেশন ও গভীর ভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহন করুন ।
১০.কখনোই নিজের সাথে প্রতারণা করবেন না । ধুমপান তো ছেড়েই দিয়েছি, একটা সিগারেট টানলে আর কি ক্ষতি হবে এমন চিন্তা মাথায় আনবেন না । এতে আপনার মধ্যে আরো প্রলোভন সৃষ্টি হবে ।
১১.যদি প্রথম চেষ্টায় ছাড়তে না পারেন তবে আবার চেষ্টা করুন । কয়েক বার ব্যার্থ হওয়ার পরেই হয়তো আপনি কাঙ্খিত সাফল্য পেয়েযাবেন ।
১২.ধূমপান ছেড়ে দেওয়ায় সময় কাটানো কষ্ট হলে নিজেকে সম্মোহিত করুন । যারা ধূমপানকে অসমর্থন করে তাদের সাথে সময় কাটানোর চেষ্টা করুন ।
১৩.আপনি নিকোটিন প্রতিস্থাপন থেরাপির সাহায্য নিতে পারেন । ধূমপান ছাড়তে এটা বেশ উপকারী । নিকোটিন প্রতিস্থাপনের বিভিন্ন উপায় রয়েছে ।
যেমনঃপ্যাচ,গাম,ইনহেলার,ন্যাসাল ষ্প্রে ইত্যাদি । এসব থে রাপি গ্রহন করতে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরমার্শ গ্রহন করবেন ।
১৪.বিউওপ্রপিওন ওষুধের সাহায্য নিতে পারেন ।
১৫.সম্প্রতিক কালে ধূমপান ছাড়ার জন্য নিকোটিন লজেন্স রয়েছে । এসবের সাহায্য নিতে পারেন ।
মুল কথা যেভাবেই হোক আমরা ধূমপান ছাড়তে চাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।