লেখবার ছিল অনেক কিছু
ব্যস্ততার জন্য অনেকদিন গ্রামে যাওয়া হয়না। তাই নিকট একজন আত্নীয়ের বিয়ের দাওয়াত পেতেই, লুফে নিলাম সেই সুযোগটা।
নির্দিষ্ট দিনের সকাল সকালই আমরা বেরিয়ে পরলাম গন্তব্যের পথে।
যখন আমরা পৌছালাম, তখন মোটে কনের হলুদ পর্ব শেষ হয়েছে।
চারপাশ যেন বিয়ে বাড়ির উৎসবেরই প্রমাণ দিচ্ছে।
কনেকে নিয়ে যাওয়া হলো সাজাবার জন্য। আমরাও গেলাম বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য মানানসই পোশাক-আশাক পরবার জন্য।
বাড়ির পেছনটায় বিশেষ রান্না-বান্না হচ্ছে। সেই রসনা বিলাশের গন্ধে সারা বাড়ি মৌ মৌ করছে।
বর পক্ষ আসবার আগেই খিদে পেয়ে গেলো আমার।
আমি ও পৌছে গেলাম বাড়ির ও পাশটায়। যেন এমনিই ঘুরতে ঘুরতে চলে গিয়েছি। কিন্তু আমার পেট তো বলছে অন্য কথা। উফ্ কেউ যদি বুঝতো আমি কেন গিয়েছি সেখানে।
মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো হঠাৎ করেই একজন দৌড়ে আসলো একটা চেয়ার হাতে করে।
"আপনারা শহরের মানুষ, আপনাদের কথাই আলাদা। আপনি যদি একটু খাবারগুলো চেখে দেখতেন, তাহলে খাবারের স্বাদ নিয়ে আর কোনো চিন্তাই থাকতো না। " -বলেই বাবূর্চীকে নির্দেশ দিলেন, সবগুলো পদ একটা প্লেটে সাজিয়ে আমাকে দেবার জন্যে।
বেশ জম্পেস করেই খেলাম, একে তো সারা রাস্তার ঝাকুনীর খিদে তার উপর আবার খড়ির চুলার রান্না, সব মিলিয়ে সোনায় সোহাগা।
মেহমান অল্প- সল্প আসতে শুরু করেছে মোটে।
ব্যান্ডের এর সুর ক্ষণে ক্ষণে পাল্টে যাচ্ছে।
হঠাৎ করেই চেচা-মেচি শোনা গেলো। সানাই এর শব্দও বন্ধ হয়ে গেলো।
কি হয়েছে ঠিক বুঝতে পারলাম না। কে একজন এসে বললো, "যার যার পরনে গহনা আছে , সবাই খুলে লুকিয়ে ফেলো।
পেছনের বাড়িতে ডাকাত হামলা করেছে। "
শুনেই হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসলো সবার। হাতে, কানে-গলায় যার যা ছিলো, কিছুক্ষণের মধ্যেই সব হাওয়া হয়ে গেলো। মানে যে যার সম্ভাব্য সেফটি প্লেসেই রাখলো।
পেছনের ঐ বাসা থেকে চিৎকার শোনা যাচ্ছে।
দু-চারটা গুলির শব্দ ও শোনা গেলো।
সবাই যার যার বাচ্চাদের খাটের নীচে কেউ আলমারীর ভেতরে, লুকিয়ে রাখছে। নিজেরা মারা গেলেও, বাচ্চাগুলো তো বাঁচবে।
ফিশ ফিশ করে কে যেন বললো, ওরা এদিকেই আসছে।
ঠিক কি হচ্ছে বুঝতে পারা তো দুরের কথা , মনে হচ্ছে মাথাটা জমে যাচ্ছে।
চুপচাপ খটের উপর বসে আছি। ভাগ্যের সাথে লড়বার কারো ক্ষমতা নেই।
তাই বৃথা চেষ্টাটি আর না করাই ভালো ভেবে অন্যদের সান্তনা দেবার চেষ্টাটাই করলাম।
জোড়ে লাথি দিয়ে, মেইন দরজাটা খুলে কেউ ভেতরে আসছে বুঝতে পারলাম।
পেছনে পেছনে আরো কয়েকজনের পায়ের শব্দ।
" ক, বৌয়ের ঘর কোন দিকে। নইলে কিন্তু সব ব্রাশ ফায়ার কইরা ফালায় থুইয়া যামু। "
" বাবা, আমরা গেরামের মানুষ। মাইয়ার বিয়া ভাইংগা গেলে আর কেউ আমার মাইয়ারে বিয়া করবোনা। অনেক কষ্ট কইরা সব জোগার পাতি করছি।
"
"টাকা-পয়সা যা যা আছে, সব নিয়া আসো। আমাগোর হাতে সময় শর্ট। " -বলেই এক খান পিস্তল বের করলো, ডাকাতের সর্দার।
কোনো উপায় নাই ভেবেই সবাই যার যার গহণা বের করে ডাকাতদের হাতে তুলে দিলো।
কনে বেচারা বৌ সাজবার আগেই ফতুর।
ভয়ে সাদা হয়ে গেছে।
মোটামুটি টাকা-পয়সা যা গোছাবার গুছিয়ে, বেরিয়ে গেল, ডাকাতের দল।
বিয়ে বাড়ি যেন মরা বাড়িতে পরিণত হলো।
নিস্তব্ধতা ভাংলো, কনের বাবার আত্ম চিৎকারে-" আমার তো সব শেষ হইয়া গেলো। আমি অখন ছেলে পক্ষ রে কি বুঝ দিমু।
জমি বেইচ্চা হাতের বালাজোড়া আর কানের একজোড়া দুল করছিলাম। অখন আমি কি কমু তাগোর। "
আস্তে আস্তে সবাই কনের বাবার কাছে এসে ভীড় জমায়।
সবাই কিংকর্তব্যবিমুড়।
কিছুক্ষণের মধ্যে সব শেষ হয়ে গেলো।
হঠাৎ করে দেখি ডাকাতদলের ওরা আবার গেইট দিয়ে ঢুকে বেশ হাসিহাসি মুখে কনের বাবার দিকে এগিয়ে আসছে।
কনের বাবার গলার আওয়াজ কোথায় যেন নাই হয়ে গেলো।
ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে , এবার কি হুকুম তার জন্য।
বাগানের কয়েকটা গাছের আড়াল থেকে আরো কিছুলোক বেড়িয়ে এলো।
হাতে তাদের নানাবিধ ক্যামেরা, লাইট আর কি কি সব।
ডাকাতের সর্দার কনের বাবার কাছে এসে গহণার পুটলীটা ফেরৎ দিয়ে বললো, "চাচা, ক্ষমা করবেন। আমরা ঢাকা থেকে এসেছিলাম শুটিং করতে। আমাদের একটা বিয়ে বাড়ির শট নেয়া দরকার ছিলো। তাই আপনাকে না জানিয়েই আমরা শুটিংটা করতে এসেছিলাম। আমাদের কাজ শেষ।
আমরা এখন চলে যাচ্ছি। " -এই বলে একে একে সবাই কনের বাবার কাছে হাত জোড় করে মাফ চেয়ে বিদায় নিলো।
সবাই সম্বিত ফিরে পেলো।
আমি হো হো করে হেসে ফেললাম। আমাকে দেখে আরো অনেকে।
দৌড়ে গিয়ে ডাকাত দলের সর্দারসহ বাকি সবাইকে বর-কনেকে আশীর্বাদ করে বিয়ের খানা খেয়ে যাবার জন্য ডেকে পাঠানো হলো।
কনের বাবাকে এভাবে ঘাবড়ে দিয়ে, ওনাকে আর অমান্য করলো না নাটকদল।
তাই বর-কনেকে আশীর্বাদ দেবার জন্য সে বেলা ওরা ওখনেই থেকে গেলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।