বেশ আগে একবার এক অনুষ্ঠানে গেলাম।
অনেক সাদাসাদি, ছড়া পড়তে হবে। আমরা তিন বন্ধু অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথির তালিকা দেখে চলে গেলাম। বড় ছড়াকার আসবেন। ওকে।
তার সামনে ছড়া পড়া যাবে। জানানো যাবে আমরা কী? আমরাও যে তাদের চেয়ে কম না সে ধারনা দেয়া যাবে।
কিন্তু গিয়ে বিপদ, অনুষ্ঠানে কারোই কোনো খোঁজ নেই। এমনকি আমন্ত্রিত দর্শক শ্রোতাও কম। আমরা পড়েছি বাটে।
কারণ অনুষ্ঠান আয়োজকরা যে বাটে আছে সেখান থেকে তারা নিজেদের উদ্ধারের জন্য অবশ্যই আমাদের কাউকে বলি করে দেবে। হলোও তাই। অতিথিরা না আসায় বয়োঃক্রম তালিকা অনুযায়ি অন্য একজনকে প্রধান অতিথি বানিয়ে আমাদেরকেই বিশেষ অতিথি বানিয়ে দেয়া হলো। পূর্ব হতে তেমন অভিজ্ঞতা না থাকায় উলট পালট এবং ইচ্ছা অনুযায়ি বাংলা ছড়ার গতি প্রকৃতি নির্ধারণ করে দিয়ে এলাম।
মোটামুটি বাংলা ছড়াকে একটা যোগ্যতম স্থানে বসিয়ে দিয়ে এলাম! নিজের বিশেষ অতিথীর চেয়ারকে অলংকৃত করার জন্য।
বলা যায়, কানের পাশ দিয়ে গুলি পার করে বাটে পড়ে অতিথির দ্বায়িত্ব পালন করে এলাম।
অনেকদিন পরের ঘটনা। তিন চারদিন আগে একজন বড় ভাইয়ের ফোন। আমাদের পামের এলাকাতেই থাকেন। তার অবশ্য আরেকটা পরিচয় আছে।
তিনি একজন নাট্যকার। বেশ কিছু আলোচিত সিরিয়াল আছে তার। তারই একটা ছোটদের সংগঠনও আছে। সেখানে অনেকগুলো প্রতিযোগীতা চলছে। এর মধ্যে একটি গল্প বলা 'খ' এবং 'গ' বিভাগও আছে।
আমাকে বললেন ব্যাস্ততা না থাকলে একটু আসো।
আমি বললাম কেন ভাই?
তিনি মিনমিন করছেন, আরে আসো না।
আমি বললাম, বলেন না?
তিনি বললেন আমার সাথে একটু বিচারক হবে।
আমার চুক্ষু চড়কগাছ।
একি!
আমার না হয় একটা গল্পের বই বের হয়েছে তাই বলে কি আমি গল্প বলা প্রতিযোগীতার মাপকাঠি বুঝবো?
আমি না হয় একবার বাবার চাপে আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম।
তার মানে কী আমি এই বিচারকার্য চালাতে পারবো?
কিন্তু তাকে না করার উপায় নাই। গেলাম। অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথে চারদিকে কেউ-ই নড়েচড়ে বসলো না। এমনকি তাকালোও না। সবাই অনুষ্ঠান দেখায় আরো মনোযোগি হলো।
একজন অনাকাঙ্খিতকে দেখে সবাই নিজ নিজ চেয়ারে শক্ত করে বসল। যাতে চেয়ার বেহাত না হয়।
এর মাঝেই একজন এসে জিজ্ঞাসা করলো, আপনি কি ...?
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়তেই আমাকে সোজা বিচারকের চেয়ারে নিয়ে বসালো। মাইকে ঘোষনা করলো নাম।
তখন মোটামুটি চারদিকে কেউ কেউ অবাক আর কেউ কেউ একটু হাসি হাসি মুখ করে তাকানো শুরু করছে।
বুঝলাম অবাক হচ্ছে বয়স ভেবে। আর হাসি দিয়ে আছে তারাই যাদের ছেলেমেয়েরাই প্রতিযোগী। হাসির অর্থ এমন, একটু আমার বাচ্চাটাকে দেখবেন।
আমিও চেহারা কঠিন করে ফেললাম। তাদের দিকে একরকম তাচ্ছিল্যের চোখে তাকাই।
চেহারায় বিশেষজ্ঞ বিশেষজ্ঞ ভাব নিয়ে চেয়ারে বসলাম। মনোযোগ দিয়ে গল্প শুনি। আর কিছুক্ষণ পরপর কুব চিন্তিত চেহারা করে লেখার নাম্বার দেয়ার অভিনয় করি।
আসলে দেই না।
মাঝে মাঝে মুখ চেপে হাসি।
বাইরে তাকাই। এবং সবশেষে পাশের বিচারকের দেয়া নাম্বার কপি করে পেষ্ট করে দিয়ে বিচারকার্য সুষ্ঠুভাবে শেষ করি।
অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর অবশ্য অনেকে এসে একটু মূল্যবাণ কথা শুনতে জড়ো হলো। তারা হয়তো উপলদ্ধি করতে পেরেছে এই বয়সেই যখন বিচারক তখন নিশ্চয় সে একটা কিছু হবে।
জিজ্ঞাসা করলো, বাচ্চারা কেমন করেছে?
আমি একটা মাথা নেড়ে এমন একটা ভাব করলাম যাতে তাদের মনে হয়, আমি আগে যত জায়গায় বিচারক হিসেবে গেয়েছি এরাই সবচেয়ে ভালো।
এবং আরো কিছু জিজ্ঞসা করার আগে বিদায় নিয়ে চলে এলাম।
তবে আসার সময় এক মহিলাকে দেখলাম যিনি দেরী করে এসে আয়োজকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছে। বুঝলাম ইনিই তিনি যার অনুপুস্থিতিতে আমি গেটিস বিচারক হয়েছি।
তাই সেখানে আর খুব বেশি দেরী না করে শেষমেষ মান সন্মাণ নিয়ে এরিয়া পার হলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।