হে মানব, আজি ওঠো জেগে বিবেকের তাড়নে
ইদানীং আমাদের দেশের পত্রিকাগুলোতে প্রায়ই দেখা যায়, অমুক দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য কোন প্রকার IELTS বা TOEFL লাগবেনা । অথবা আন্তর্জাতিক শিক্ষামেলায় Spot Admission, অমুক বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের অমুক প্রফেসর সরাসরি ইন্টারভিউ এর মাধ্যমে ছাত্র ভর্তি করবে । আবার অমুক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ ক্যাম্পাসে ভর্তি চলছে ....ইত্যাদি ।
এসব চাকচিক্যময় বিজ্ঞাপন দেখে আমরা অনেকেই এক ধরণের ফাদে পা দেই । বিত্তবানেরা এবং অনেক মেধাবীরাও ।
অনেক বিত্তবানেরা টাকার গরম দেখাতে এসব বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে বা তাদের বাংলাদেশী ক্যাম্পাসে ভর্তি করায় । আবার, মেধাবীরা কথিত স্কলারশিপের ফাদে পড়ে নিজেদের জীবনটাকে নষ্ট করে ফেলে । সাধারণত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করার পর ছাত্ররা এ পথে পা বাড়ায় ।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয় নামসর্বস্ব । অথবা নামকরা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামানুসারে অথবা বলা হয় নামকরা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত (আসলে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকূলে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, যদিও তেমন কিছুই পড়ানো হয় না) ।
আমাদের মত দেশ থেকে তারা নানা প্রলোভন দেখিয়ে ছাত্র নিয়ে যায় । বিত্তবানরা তো টাকা দিয়েই পড়তে যায় , পড়ে যখন দেখে বিশ্ববিদ্যালয়টি ভুয়া তখন তারা অন্যান্য মো্টামুটি মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় । এবং একটা ডিগ্রী নিয়ে আসে (বলা যায় টাকার বিনিময়ে ডিগ্রী কিনে নিয়ে আসে)।
যারা স্কলারশিপ নিয়ে যায়, তাদের ক্ষেত্রে শর্ত থাকে প্রথম এক বছরের খরচ নিজেদেরকে বহন করতে হবে , এক বছর পর ফলাফলের উপর ভিত্তি করে স্কলারশিপ দেওয়া হবে । অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রথম বছরের সকল ফি শুরুতেই দিয়ে দিতে হয়, এমনকি যাওয়ার আগেই ।
এরপর দেখা যায় , আদৌও ওই নামের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ই নেই । বা বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থা বড়ই করুণ । পরে ছাত্ররা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পার্ট টাইম জব শুরু করে এবং স্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ বাড়াতে থাকে । একসময় ওখানকার কিছু শর্ত পূরণ করে ওখানকার অধিবাসী হয়ে যায় এবং বেশ নিম্নমানের জীবন-যাপন করতে থাকে । অনেকে আবার দেশে ফিরে আসে ।
এই ঘটনাগুলো বেশী হচ্ছ ইংল্যান্ডে । সাম্প্রতিক বিশ্বমন্দার পর থেকে এই প্রবণতা আরও বেড়ে গেছে । এ ধরণের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদের মত দেশের ছাত্রদেরকে প্রলুব্ধ করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে মন্দার ঢাক্কা সামলাতে চাচ্ছে । এ কারণেই ইদানীং তাদের ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে ।
আমাদের দেশীয় কিছু এজেন্টও তাদের হয়ে কাজ করে ।
তাদের কথা না শুনে নিজেই একটু যাচাই করে নিন । তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষের এ যুগে আজকাল ঘরে বসেই প্রায় সব তথ্য পাওয়া যায় । তাই এ সকল বিজ্ঞাপণ দেখে পা বাড়ানোর আগে একবার যাচাই করে নিন । ঐ দেশের বিশ্ববিদ্যালয় এর সরকারী তালিকায় আপনার বিশ্ববিদ্যালয়টি আছে কিনা তা দেখে নিন । থাকলে তাদের অবস্থান কত নম্বরে, তাদের এ ধরণের কোন প্রোগ্রাম আছে কিনা ? বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকদের তালিকা, যোগ্যতা ; বিশ্ববিদ্যালয়টির উল্লেখযোগ্য গবেষণা কাজ ।
পরিশেষে বলি, "ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না । "
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।