সততায় মৃত্যুও ভালো..........
আমার যাপিত জীবনে সহবস্থান আর সহমর্মীতা যেন আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা আছে। আমার প্রার্থনায় উচ্চারণ করি-'পূর্ব পুরক বর্তমান: প্রবুদ্ধ ঋষয় স্মরণম:'। 'মোহাম্মদ রুপায়িতম: চৈতন্য রাম-কৃষ্ণানুকূলং বর্তমান পুরুষত্তম। ' তাই আমার কাছে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী আর ঈদেমিলাদুন্নবী একেরই বার্তাবাহী মনে হয়।
সবেবরাত বা সৌভাগ্য রজনীর বার্তা বহন করে আমার সত্তায়।
গত কাল অফিস শেষ করে রওনা হলাম হবিগঞ্জ। প্রথমে কাঁচপুর তারপর সেখান থেকে বিসমিল্লাহ্ গাড়ীতে করে প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা যাত্রা শেষে হবিগঞ্জ।
এনায়েতাবাদ মাজার শরীফ। যখন পৌচ্ছলাম তখন ঘড়ির কাটায় সাড়ে দশ বেজে গেছে। দরজায় দাড়ানো একজন পরিচিত মুখের সাথে সালাম বিনিময়।
তারপর পবিত্র আচমনে নিজেকে পবিত্র করে মাজার দরশন কিন্তু বৃষ্টি একটু দেরী করিয়ে দিল। ঘড়িতে তখন রাত ১২টা দশ মাজারে ঢুকলাম। পবিত্র গন্ধে চারিদিক মৌ মৌ সুগন্ধি আর মোমালোয় উদ্ভাসিত মাজার চত্বর। আমি স্রষ্টার কাছে হাত তুলে মুনাজাত করলাম। মুনাজাত শেষে রাতের খাবার-চিড়া আর দৈই সাথে কালোজাম- তখন ঘড়িতে রাত প্রায় ১টা।
তারপর আমার সঙ্গি অগ্রজ প্রতিম দাঁড়ালেন নামাজে। আমি মাজারে নিস্তব্ধতায় কিছুক্ষণ জড়িয়ে নিলাম নিজের ভাবনা জগৎ। মনে মনে আউরালাম 'মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান'।
রাত তিনটার দিকে নিজে এলিয়ে দিলাম একটা ছোট্ট জায়গায়। কখন ঘড়ির কাটা ঘুরে সাড়ে চার বেজে গেছে আমার কানের কাছে তখন মোনাজাত আর দোয়ার শব্দরাশি।
তারপর আধঘুম ভাঙ্গতেই হাতে আসল তোবারক। পরম প্রাপ্তির কিনা জানি না তবে একটা সময় স্কুলের মিলাদের এই অংশটারই ছিল মজার আর আনন্দের।
আমার ছোটবেলার বন্ধুদের তফাৎ বোঝা যেত নামাজের আসরে আর পূজার অঞ্জলীতে। আমার সবাই সেই সাত সকালে সেজে গুজে বেরতাম। আমার দুজন দাঁড়িয়ে থাকতাম ঈদগাহের বাহিরে অপেক্ষমান কোলাকোলির আশায়।
তেমনি দূর্গা পূজার অঞ্জলীর শেষে অপু আর কমল অপেক্ষায় থাকতো দিন ভোর ঘুড়াঘুড়ি আর নাগোরদোলায় চড়ার মজা ভাগাভাগির আনন্দে। সবেরবাতের কতরাত আমি দাঁড়িয়ে থেকেছি আরিফপুর গোরস্থানের বাহিরে। ভেতরে কবর জিয়ারতে ব্যস্ত তখন ছিল বিভু আর সাব্বির। কাল রাতে মাজার শরীফে আমার যাপিত জীবন বড় বেশী করে মনে হচ্ছিল। তোবারক পর্ব শেষ হতেই সম্বিত ফিরে পেলাম।
আবারও পবিত্র আচমন অর্থাৎ ওজু পর্ব শেষে মাজারে পবিত্রতা ছুয়ে এলাম যাত্রা শুরুর আগে।
আমি এবার সঙ্গি হলাম সেই জনের যে ডেকেছিল এই মিলন আসরে যাওয়ার তাদের গাড়ীতে উঠালাম। খোয়াই নদীর পাড় ঘেসে হেরিংবোনবন্ড রোড ধরে এক সময় এসে পৌচ্ছলাম ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে। মাইল ফলকে লেখা ঢাকা ১৪৭কি:মি, মাধবপুর ৩৭ কি:মি। আমাদের গাড়ি পথে রাজা হয়ে চলছে।
যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ৬টা পাঁচ মিনিটে। তখন ৬টা পয়তাল্লিশ একটা শ্যামলী দূরপাল্লার গাড়ী সিলেটের উদ্দেশ্যে চলে গেল। আমরা পৌচ্ছে গেলাম আব্দুল কুদ্দুস মাখন স্মৃতি স্থম্ভের কাছে। আমাদের গাড়ীর মুখ গড়িয়ে গেল বাহ্মণবাড়িয়া শহরের দিকে। কিছু দূর যেতেই তা বাঁক নিল বাইপাস ধরে।
অবিন্যস্ত সেতু মাঝে মাঝে সতর্কতা সংকেত সামনে বিদ্ধস্ত সেতু। এভাবেই কোম্পানীগঞ্জ থেকে হোমনা এসে পৌচ্ছলাম বেলা তখন পনে দশটা। আর গৌরীপুরীরে এসে পৌচ্ছলাম তখন বেলা সাড়ে দশ বেজে গেছে। শেষ হল যাত্রা স্থলে পৌচ্ছানোর পথ কাহিনী। আমার প্রায় উনিশ ঘন্টার পথ পরিক্রমায় শেষ হল সৌভাগ্য রজনীর ফরিয়াদ- পারি যেন মানুষের কাছে থাকতে আর মানুষের জন্য কিছূ করতে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।