আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এস্কিমো না-বলুন ইনুইট ...

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
ইনুইট। এরা এমন এক শীর্তাত পরিবেশে থাকে যে- শীতকালে যেখানে তাপমাত্রা নেমে যায় -৪৫ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডেরও নিচে। তখন সারাদিন সারারাত বয় ঝোড়ে বাতাস ।

তখন দিনের পর দিন ইগলুর বাইরে বেরুনো যায় না। ইনুইট নারী আমরা যাদের এস্কিমো বলে জানি। তারা তাদের বলে, ‘ইনুইট’। কেন? এস্কিমো শব্দটা উত্তর আমেরিকার অ্যালগোনকিউয়ান ইন্ডিয়ানদের ভাষার শব্দ। এর মানে:“কাঁচা মাংসখেকো।

” এই কারণেই এস্কিামোরা নিজেদের বলে ইনুইট ...এর অর্থ,“মানুষ। ” কাজেই, আমরা এস্কিমো বলব না। বলব ইনুইট। মায়ের কোলে ইনুইটি শিশু ইনুইটরা দীর্ঘকাল ধরে বাস করছে সাইবেরিয়ার একেবারে পুবকোণে, উত্তর আমেরিকার উত্তর উপকূলে, আর্কটিক সাগরের দ্বীপপুঞ্জে ও গ্রিনল্যান্ডে । সাইবেরিয়ার একেবারে পুবকোণে থেকে গ্রিনল্যান্ডে ৫,৬০০ মাইল দূরে! পূর্ব সাইবেরিয়ার মানচিত্র।

ইনুইটদের উত্থান সাইবেরিয়ায়। চিনা-জাপানিদের মতোই জাতিতে তারা মঙ্গোলয়েড । কাজেই এদের সঙ্গে ‘আমেরিইন্ডিয়ানদের’ জ্ঞাতিসম্পর্ক নেই। ইনুইটরা উত্তর আমেরিকায় আসতে শুরু করেছিল আজ থেকে ২০০০ বছর আগে। লম্বায় ওরা ৫ থেকে ৫দশমিক ৩ ইঞ্চির বেশি হয় না।

শরীরের গঠন শক্তিশালী। কৌশলী। বুদ্ধিমান। ও হাসিখুশি। তার মানে ‘আমেরিইন্ডিয়ানদের’ মতন গম্ভীর নয়।

কানাডার উত্তরাঞ্চলই ইনুইট-ভূমি। কানাডা আর গ্রিনল্যান্ড ইনুইট ইগলু। ইনুইট ইগলু। অন্দরমহল ইগলু ছাড়াও গ্রীষ্মদিনে মাটি কি পাথরের ঘর বানায় ইনুইটরা। ছাদের বিম তৈরি করে তিমি মাছের পাঁজরের হাড় দিয়ে; দেওয়াল তৈরি করে সিল মাছের চামড়ার ভিতরে মাটি ও শৈবাল কি শ্যাওলা পুরে।

কোথাও গেলে কুকুরে-টানা স্লেজ ব্যবহার করে। তিমি মাছের চোয়াল, রেইনডিয়ারের খুলি, সিলমাছের হাড় আর কাঠ দিয়ে তৈরি। স্লেজের বিভিন্ন অংশ বাধে চামড়ার বেল্ট দিয়ে । সাধারনত একটা স্লেজ টানে ৫টা কুকুর । কুকুরগুলিও সেরকম।

অসম্ভব কষ্টসহিষ্ণু; না থেমে নাকি ১০/১২ ঘন্টা টানতে পারে স্লেজ; দরকার হলে ৩৬ ঘন্টাও টানে। অনেক দিন না-খেয়ে থাকতে পারে কুকুরগুলি। দারুন প্রভূভক্ত আর বুদ্ধিমান। বিশ্রামের সময় কুকুরগুলি আলাদা করে রাখে ইনুইটরা। বেশি খাওয়ায় না।

বেশি খাওয়ালে নাকি অলস হয়ে পড়বে। স্লেজ টানবে না! সিলমাছ শিকার শুরু হয় বসন্তের প্রারম্ভে। তখন বিশাল বিশাল বরফের চাঁইয়ের ওপর সিলমাছেরা দল বেধে থাকে। কেননা, সিলেদের তখন প্রজনন মাস। সিলশিকারীরা নিঃশব্দে সিলেদের কাছে যায়।

শিকারীদের পায়ে পোলার ভালুকের চামড়ার তৈরি বুটজুতা। হাতে সুতীক্ষ্ম হারপুন ... হারপুন সিলমাছ শিকার সহজ হলেও মেরু ভাল্লুক শিকার সহজ নয়। বসন্ত কালেই। কুকুরে-টানা স্লেজ মেরু ভাল্লুক এর গাড়িতে খোঁজে বের হয়। দেখা পেলেই কুকুরদের ছেড়ে দেয়।

শিকক্ষাপ্রাপ্ত কুকুরেরা ঘিরে ফেলে। হরিণের হাড়েরর তৈরি বর্শা ছুঁড়ে মারে। কখনও কখনও মেরু ভাল্লুক শিকারীরা ভয়ানক বিপদে পড়ে। মেরু ভাল্লুক এর আক্রমনে ক্ষতবিক্ষত হয়। তাই বলছিলাম - সিলমাছ শিকার সহজ হলেও মেরু ভাল্লুক শিকার সহজ কাজ নয়।

আজকাল অবশ্য রাইফেল ব্যবহার করছে। কার্যত এভাবে নিব্বংশ হয়ে যাচ্ছে পোলার বিয়ার। মেরু ভাল্লুক শীতকালে ইনুইটরা রেইনডিয়ার (কারিবো) শিকার করে। সে সময়টায় দলে দলে রেইনডিয়ার দক্ষিণ থেকে উঠে আসে খাবারের খোঁজে। ইনুইটরা তাড়া করে রেইনডিয়ার দের বরফের পাতলা স্তরের ওপর নিয়ে আসে।

চাপে বরফের পাতলা স্তর ভেঙ্গে গেলে রেইনডিয়ার পানিতে পড়ে যায়। তখন ছোট্ট নৌকায় থাকা ইনুইটরা খুব কাছ থেকে শিকার করে। কারিবো; ...রেইনডিয়ার পুরুষেরাই শিকারকৃত পশু কাটে। চামড়া ছিলে মেয়েরা । তারপর মাংস, চর্বি ও তন্তুগুলি আলাদা করে নেয়।

তারপর শুকিয়ে নেওয়ার জন্য চামড়াটা টানটান করে রাখে । চামড়া শুকিয়ে গেলে চামড়াটা আরও নমনীয় করার জন্য চিবায়, ভোঁতা কিছু দিয়ে ঘঁষে। নইলে -৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডেও চামড়া কাচের মতন ফেটে যায়। ইনুইট নারী। স্বামীর ইচ্ছে অনিচ্ছের কাছে বন্দি।

১৫ থেকে ১৬-র মধ্যেই ইনুইট মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়। ইনুইটসমাজে যৌতুকপ্রথা নেই। তবে ওদের বিয়ের আগে মজা হয়। কনেকে অপহরণ করার অভিনয় করা হয়। কনে বাংলা সিনেমার নায়িকার মত শরীর মোচড়ায়, অপহরণকারীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে।

হবু বড় ধরতে এলে তাকে কামড়াতে যায়। বিয়ের পর এসব ছলাকলাই অন্যরকম হয়ে ওঠে। রান্না মেয়েরাই করে, চামড়া প্রসেস করে, তৈরি করে কাপড়, বাচ্চা পালে। এরপরও স্বামীর ইচ্ছে অনিচ্ছের কাছে বন্দি ...ইনুইটসমাজটা পুরুষতান্ত্রিক বলেই। ইনুইট পুরুষ।

ধর্মে ইনুইটরা সর্বপ্রাণবাদী। মানে-সবারই আত্মার আছে-এমন একটা ধারনা ইনুইটসমাজে দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত। মানুষ ছাড়াও আত্মা আছে-পাথরের বরফের। সেই আত্মা আকারে ছোট হলেও আকৃতি একই রকম। মানে, পাথরের আত্মার আকৃতি পাথরের মতই,তবে,আকারে ছোট।

আত্মা আসলে শরীর কি অন্যান্য বস্তুরই স¤প্রসারণ। সাধারণ মানুষ আত্মা দেখতে পায় না। দেখতে পায়, যাদের অলৌকিক শক্তি রয়েছে-তারা। তারা এমন কী আত্মাকে বশও মানাতে পারে। শামান এরাই।

ইনুইট শামান এর মুখোশ। আত্মা যখন শরীর ছেড়ে যায়। শরীর অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। আত্মা চিরদিনের মত শরীর ছেড়ে চলে গেলে শরীর যায় মরে। আত্মা তখন অশরীরি হয়ে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ায়।

জীবিতদের ক্ষতি করে। মুক্তির উপায় কি? মুক্তির উপায় হল নবজাতককে মৃত ব্যাক্তির নামে দেওয়া। কেননা, ভ্রাম্যমান আত্মাটি তখন আপন ঘর খুঁজে পায়। অন্যের আর ক্ষতি করে না। ইনুইট শিশু এই শিশুটিকে আমরা এস্কিমো বলব না।

বলব ইনুইট। কেন? মনে থাকার কথা। এস্কিমো শব্দটা উত্তর আমেরিকার অ্যালগোনকিউয়ান ইন্ডিয়ানদের ভাষার শব্দ। এর মানে:“কাঁচা মাংসখেকো। ” এই কারণেই তারা নিজেতের বলে ইনুইট ...এর অর্থ,“মানুষ।

” কাজেই ... ইনুইট আর্ট
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.