আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পেঁয়াজ

www.choturmatrik.com/blogs/আকাশ-অম্বর
১ ‘এভাবেই হবে, বুঝলি তোরা? দেশ ও জনগণের কল্যাণ এভাবেই হবে। ’ একধরনের আত্মতৃপ্তি নিয়ে বাক্যটা শেষ করে খোলা আকাশ হতে মুখ ফিরিয়ে আনলো ছেলেটি। সরলমতি কিন্তু গর্বিত সেই দৃষ্টির লক্ষ্য ঘাসের বুকে ইতস্তত এদিক ওদিক হয়ে থাকা, কচি ঘাসের ডগা চিবানো, দেশমাতৃকার বঞ্চিত শিশুসমাজকে আশার আলো দেখাতে বদ্ধপরিকর কিছু তাজা প্রাণ। মৃদু গুঞ্জন উঠলো। চকচকে চোখে লকলকে লোল নিয়ে আবেগ-আপ্লুত অপরিপক্ব কিছু কিশোর মানস।

সত্যিই তাই! এভাবেই হবে। গ্রামে গ্রামে, দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে তুলতে হবে শিশু শিক্ষাকেন্দ্র। শিক্ষা দিয়েই ওদের মন-মানসিকতায় ঢুকিয়ে দিতে হবে দেশ ও জাতির চেতনা। বড় স্বতন্ত্র আমরা! জাতীয়তাবোধ বলতে তো আর কিছু অবশিষ্ট নেই আমাদের মধ্যে। ওরাই হবে দেশের কাণ্ডারী।

তাই ওদের দিকেই দিতে হবে পূর্ণ মনোযোগ। হ্যাঁ, গড়ে তুলতে হবে লোকালয় ভিত্তিক উন্নয়ন প্রচেষ্টা। ঘরে ঘরে আন্দোলন হবে। কেন্দ্রীভূত করে রাখা শাসন-ব্যবস্থাকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে। সব আইল ভেঙ্গে সমবায় করতে হবে।

এখনও হচ্ছে না, কারণ আমজনতা অবুঝ। ওরা নিজেদের ভালো তো নিজেরাই বোঝে না, দেশের কি উন্নতি করবে? তাই ওদেরকে ভালো করে চেনাতে হবে নিজেদেরকে, দেখাতে হবে উপরে উঠার কাঠের সিঁড়ি। পাড়াগেঁয়ে মানুষজনের কাছে গেলেই ওরা কেমন কেমন করে তাকায়। নিজের দেশের লোক কি এইরকম অপরিচিত ভিনদেশী দৃষ্টিতে তাকাতে পারে? ওদের মনের সব কুসংস্কার ভাঙ্গতে হবে! একবিংশ শতাব্দীর নব-জাগরণে ওদেরকেও সামিল করতে হবে। সময় লাগবে অবশ্য।

নিজেদের একটা প্রতিষ্ঠান হলে কর্মচাঞ্চল্য আরও বেড়ে যাবে। এইতো, বড়জোর বিশ-ত্রিশ বছর। একটু দীর্ঘ হয়ে গেলো? কিন্তু আদিম কূপমণ্ডুকতা ভাঙ্গতে হবে যে! আমজনতা অবুঝ। ওরা সত্যিই বোঝে না! আহ্‌ শান্তি! সব ঠিক হয়েই গেলো তাহলে! এবার এসো ঐ অপেক্ষমাণ ফুচকা-চটপটিওয়ালা। বাদামওয়ালা, তুমি আরও একটু অপেক্ষায় থাকো।

ঐখানে বিক্রিরত নতুন হটডগওয়ালার পরেই তোমাকে ডাকবো। ২ সন্ধ্যা আসন্ন প্রায়। ধুলো পরা এক মাঠের ধুলোর মধ্যে থেকে জেগে উঠলো একটি শিশু। সারাদিনের রৌদ্রতাপে কালচে শরীরে ছোপ-ছোপ রক্তিম আভা। কৃষ্ণ-কালো দেহে পুষ্টিরা বোধহয় এডভেঞ্চারে ভয় পায়।

শুয়ে শুয়েই ঘুম ঘুম চোখে চারপাশটায় চোখ বুলালো সে। নিত্ত-নৈমিত্তিক দৃশ্য। জগত-সংসারের ব্যতিব্যস্ততা। অতীব সাধারণ ঘটনাবলী। তবে ঠিক তার কিছুদুরেই আজ কিছু কমবয়সীদের আড্ডা চোখ এড়ালো না তার।

কিছুক্ষণ দেখার পর সেটাও বৃদ্ধ হয়ে গেলো শিশুচোখের কাছে। এবার হাতে ভর দিয়ে উঠে বসলো সে। এইমাত্র ফিরে এসেছে মা-জননী। হাড্ডি জরজরে আঙ্গুল দিয়ে ধুলো পরা চোখ মুছে কিছু জমাট ধুলো বের করে নিয়ে অধীর আগ্রহে তাকালো সে ধুলোয় ধুসরিত জননীর দিকে। হ্যাঁ, সেই সাত-সকালে দেখা হয়েছিলো।

ঘুম পাড়িয়ে রেখেই চলে যায় মা। আজ একটু দেরী হয়ে গেলো বোধহয়। তবে এখন নিশ্চয়ই ঘুমন্ত প্রতীক্ষার অবসান হবে। ঘুম অনেক সময় শুধু শান্তিরই নয়, ক্ষুধা নামক প্রেতাত্মা থেকে বাঁচার উপায়। ৩ ফিরে আসতে না চাইলেও ফিরে আসতে হয়।

আজ কর্মক্ষেত্রের লাঞ্ছনা এবং ফলশ্রুতিতে কর্মচ্যুত হওয়ার পরও পায়ে পায়ে ফিরে আসতে হয়। ধুলো পরা এক মাঠে তার ঘুমিয়ে থাকা অভুক্ত এক সন্তানের জন্য ফিরে আসতেই হয়। তবে সান্তনা আছে। আশ্বাস পেয়েছে সে। এরপর সারাটা দিনই কাটাতে পারবে সন্তানের সাথে।

অদূর ভবিষ্যতের রাত্রির কর্মক্ষেত্রটা সেই সুযোগ তাকে দেবে। আপাততঃ হাতের মুঠোয় ধরে রাখা একটি স্বাস্থ্যবান পেঁয়াজকে আরো জোরে শক্ত করে ধরলো সে। ৪ ধুলোর ভেতর বসে থাকা, ক্ষুধা নামক প্রেতাত্মার সাথে ঘুমন্ত লড়াইয়ে জয়ী এক শিশুর দিকে কোন এক জননীর ছুড়ে দেয়া একটি পেঁয়াজ কি যুদ্ধজয়ের স্তুতি হতে পারে? হয়তো পারে। পেঁয়াজের সেই যোগ্যতা আছে। Allium cepa নাম তার।

মানবজাতির ইতিহাসে সবচেয়ে পুরানো সবজি-জাতীয় খাদ্যের অন্যতম। ব্রোঞ্জ সভ্যতার সময়ও এর ব্যবহার ছিলো লক্ষনীয়। আর এর পুষ্টি ও ঔষধি গুণাগুণ? এক কথায় অনন্য। খুব ভালো প্রতিষেধক হৃদরোগ, ডায়াবেটিক, অস্টিওপোরোসিস এর জন্য। এর ভেতর আছে এন্টি-ইনফ্ল্যামেটরী, এন্টি-কোলেষ্টেরল, এন্টি-ক্যান্সার আর এন্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান।

আছে ৯.৩৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১.১ গ্রাম প্রোটিন এবং ৮৯.১১ গ্রাম পানি। ওহ্‌, বলতে ভুলে গেছি! ০.১ গ্রাম ফ্যাটও আছে এতে! হ্যাঁ, বিশ্বাস করতে চাই, পেঁয়াজের সেই যোগ্যতা আছে। ৫ ধুলো পরা মাঠের ছোট্ট এক সবুজ অংশ বেছে নিয়ে বসেছিলো দেশমাতৃকার বঞ্চিত শিশুসমাজকে আশার আলো দেখাতে বদ্ধপরিকর ঐ তাজা প্রাণগুলো।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.