সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............
নাগরিক যন্ত্রনা-৯(বিনোদন)
রাজধানী মহানগর ক্রমেই রেড়ে চলেছে। উত্তর, দক্ষিন এবং পুর্ব দিকে উত্তোরত্তর বেড়েই চলেছে ঢাকা মহানগরী। কিন্তু মহানগরীর আয়তন বেড়ে চললেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোক সংখ্যা। বর্ধিত মানুষের চাহিদার সাথে সংগতি রাখতে পারছেনা কোন সেবা খাত। সে কারনে বিদ্যুত, পানি এবং গ্যাস সংকট লেগেই আছে।
রাজপথে বাড়ছে যানজট। কিন্তু বাড়েনি বিনোদনের আয়োজন। নগরীতে মাঠ নেই, পুকুর নেই, পর্যাপ্ত পার্ক নেই। ফাঁকা কোন যায়গা নেই। সরকারি ভাবে নগর পরিকল্পনায় যদিও কিছু মাঠ ঘাটের আয়োজন করা থাকে-কিন্তু বেসরকারী হাউজিং শুধু "ইটের পরে ইট, তাহার মাঝে বাস করে মানুষ নামের কীট"!
বেসরকারি ফ্লাট নির্মাতারা মাঠ দখল করে বহুতল ফ্লাট বাড়ি, ডোবা পুকুর ভরাট করে বহুতল বাড়ি কিম্বা বিপনী বিতান নির্মান করে চলছে।
ফলে শ্বাস নেয়ার জন্য মুক্ত বায়ু পেতে নাগরিকদের যাবার যায়গা সংকুচিত হয়ে গিয়েছে। এখন নগরীর যাবার যায়গা বলতে-ধানমন্ডি লেক, রমনা পার্ক, জিয়া উদ্যান এবং সংসদ ভবন এলাকা ছাড়া আর কোথাও তেমন যায়গা নেই। ফলে এসব যায়গায় মানুষের গাদাগাদি ভীড় লেগেই আছে। ছোট শিশুদের জন্য সরওয়ার্দী উদ্যানের পাশে আছে ছোট্ট জীর্ণ একটি শিশু পার্ক, শ্যামলীতে শিশু মেলা আর গুলশানে আছে ওয়ান্ডারল্যান্ড। সেইসব যায়গায় কখনো শিশুদের নিয়ে ভীড় জমায় অবিভাবকগন।
সরওয়ার্দী উদ্যান আছে বটে-কিন্তু সেখানে হাঁটতে যাওয়া বিপদজনক। ছিনতাইকারী, মাদকসেবী, এবং ভাষমান পতিতারা অনেক আগেই সে পার্ক চিরস্থায়ী জবর দখলে নিয়েছে। ধানমন্ডি লেকের পাশে বসার যায়গা খুব কম। ধানমন্ডিতে এখন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় আর হাসপাতালের ছড়াছড়ি! স্কুল পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীরা সকাল থেকে রাত ৮/৯টা পর্যন্ত চুম্বকের মত ওখানে লেগে থাকে। সকাল বিকাল ওখানে এখন আর হাঁটার জো নেই।
বিকেলেতো রিতিমত বাজারের চাইতেই বেশী কিম্বা পল্টন ময়দানের বৃহত দুটি রাজনৈতিকদলের জনসভার চাইতেইও বেশী লোক সমাগম হয়! সেখানে এখন চিরস্থাযী হট্টগোলের পরিবেশ বিরাজমান।
নন্দন, ফ্যান্টাসীকিংডম ইত্যাদি নামের কিছু প্রাইভেট বিনোদন পার্ক গড়ে উঠেছে- ঢাকা শহরের ২৫ কিঃ মিঃ দূরে। কিন্তু সেইসব যায়গায় যাবার জন্য যথাযথ যোগাযোগের জন্য পরিবহন সমস্যা অত্যন্ত প্রকট। ওসব যায়গায় যেতে যতোটাকা টেক্সি ভাড়া দিতে হয়-তা সাধারন নির্দিস্ট আয়ের মানুষের সাধ্যের বাইরে। তার উপড় রয়েছে বাস, ট্যাক্সি ক্যাবের দুস্প্রাপ্যতা।
উপরন্তু সেসব বিনোদন পার্ক শুধুমাত্র শিশু-কিশোর কেন্দ্রীক। আগে শিক্ষিত রুচীশীল মানুষ মাঝেমধ্যে সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখতো। এখন সিনেমা হলেও শিক্ষিত ভদ্র মানুষ যায়না ভাষমান পতিতা আর দালালদের কারনে। ভালো সিনেমা হল ভেঙ্গে সেখান তৈরী হচ্ছে বহুতল আবাসিক, বানিজ্যিক ভবন কিম্বা বিপণিকেন্দ্র। যথেস্ট থিয়েটার নেই, নেই অন্য কোন বিনোদনের সুযোগ।
ফলে ঘরে বসে টেলিভিশন দেখাই একমাত্র বিনোদনের ভরসা। সেখানে আছে নানান ঝামেলা। আপনি হয়ত দেখবেন ডিস্কভারী চ্যানেল-বড় ছেলে এসে রিমোট টিপে দিবে ইংলিশ ফুটবলে, মেয়ে এসে বলবে হিন্দী সিনেমা দেখবে, পিচ্ছিটা এসে বলবে-আমি কার্টুন দেখবো, কার্টুন দাও। ইচ্ছে হলেই আপনি পারবেননা টিভি নিউজ দেখে ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রগতির এনালগ দুর্দশা দেখতে! এভাবেই সারাদিন কারোনা কারোর চাহিদা মাফিক টিভি চলছেই। এভাবেই টিভি কেন্দ্রীক বিনোদন সংস্কৃতি চালু হয়েছিল ঢাকায়।
কিন্তু সেখানেও এখন বিদ্যুত বিভ্রাটের বিড়ম্বনা! দিনের মধ্যে ৮/১০ ঘন্টা বিদ্যুত থাকেনা। তাইবলে মাসশেষে কিন্তু বিদ্যুত বিল কম আসবেনা!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।