আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাগরিক যন্ত্রনা-৩ (ফুট ওভার ব্রীজ)

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

Click This Link নাগরিক যন্ত্রনা-৩ (ফুট ওভার ব্রীজ) বেশ কয়েক দিন পুর্বে স্টীমার যোগে বরিশাল গিয়েছিলাম। স্টীমার সার্ভিসে ভ্রমন বিশয়ে ব্লগে একটা পোস্টও দিয়েছিলাম(হারিয়ে যেতে বসেছে রকেট সার্ভিস)। ঢাকা থেকে স্টীমার ছাড়ে বাতামতলী ঘাট থেকে। বাদামতলী যেতে মালবাহী ট্রাকের জন্য সোজা পথে নাযেতে পেরে সদর ঘাট হয়ে বাদামতলী গিয়েছিলাম। ঢাকা মহানগরীতে সব চাইতে ব্যস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে সদরঘাট সম্ভবত সব চাইতে বেশী ব্যস্ত।

চার শতাধিক বছরের পুরনো ঢাকার সুচনা লগ্ন থেকেই সদরঘাটের ব্যস্ততা। জগন্নাথ কলেজ, বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পার হলেই মহা গ্যঞ্জাম!সদরঘাট মোড়ে বাংলাবাজার, ইসলামপুর, নবাবপুর, কোর্ট হাউজ স্ট্রীট সহ অনেকগুলো রোডের সংযোগস্থল হওয়াতে এখানে সব সময়ই জনারণ্যে পরিনত হয়। এই মোড় থেকে সদরঘাট টার্মিনালের দুরত্ব মাত্র কয়েকশ'গজ। কিন্তু এই যায়গাটুকু পার হতে সময় নেবে অন্তত আধা ঘন্টা!এখানকার জন-জট এবং জান-জটের জ্বালা থেকে পথচারীদের মুক্তি দিতেই ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্মান করেছিল একটি সুদৃশ্য ফুট ওভার ব্রীজ। কিন্তু কিছুতেই যেন আমাদের নাগরিক অভ্যাস গড়ে ওঠেনি, রপ্ত হয়নি নাগরিক স্বভাব!এখনো ওভার ব্রীজের নীচে মানুষের প্রচন্ড ভীর।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপারের প্রানান্ত হিমশিম চেস্টা। কিন্তু শুণ্য পড়ে আছে সদরঘাটের ফুট ওভার ব্রীজ। যেমন পড়ে থাকে কলাবাগান, সাইন্স ল্যাবরেটরী এবং নিউ মার্কেটের দু'দুটি ওভার ব্রীজ। হাজার হাজার পথচারিদের মধ্যে মাত্র কয়েকজনও ফুট ওভার ব্রীজ মাড়ায়না। অবশ্য কেউ কেউ ওখানে ওঠে উপড় থেকে নীচের ঢাকা দেখার জন্য কিম্বা চলন্ত গাড়িতে থুথু ফেলার জন্য।

নিউ মার্কেট ওভার ব্রীজেতো বখাটে আর ফেন্সী হিরোরা আড্ডা জমায় পথচারি মেয়েদের বিরক্ত করার জন্য! একসময় ঢাকার সাথে সারা বাংলাদেশের যোগাযোগের একমাত্র ব্যবস্থা ছিল নৌপথ। বাংলাদেশে এখনো সব চাইতে বেশী মানুষ নৌপথেই যাতায়ত করে। এমনকি নৌপথেই সব চাইতে বেশী পণ্য পরিবহন করা হয়। গোটা দক্ষিনাঞ্চলের যাত্রীরাই নৌপথেই সব চাইতে বেশী সস্তিবোধ করেন। তাছারা কাছে-দুরের বেশীরভাগ পণ্যই ঢাকা আসে সদরঘাট হয়ে।

ফলে বুড়িগংগা তীরবর্তী এইঘাট দিনরাত ব্যস্ত থাকে। যাত্রীদের কোলাহল, কুলিদের হৈহুল্লা, সব ধরনের যান্ত্রীক-অযান্ত্রিক যানবাহনের ঠেলাঠলী। তারমধ্যে দিশাহারা মানুষ! মানুষ চলছে হেটে, বাসে, রিকশায় গাড়িতে.........। রিকশা, ঠেলা, ভ্যান, প্রাইভেট কার, মিনি ট্রাক, বড় ট্রাক সবাই ধাক্কা মারে যে যাকে পারে, বড়রা ছোট যানবাহনগুলোকে, ধাক্কা মারে পথচারিদের। যাত্রীদের হাত ফসকে বাচ্চা ছুটে যায়, কুলিরা যাত্রীদের ব্যগ নিয়ে টানাটানি, এমনকি যাত্রীর অমতেই লাগেজ নিয়ে চলে যায়......-এই হচ্ছে সদরঘাট এলাকার দৈনন্দিন চিত্র।

জীবন জীবিকার প্রয়োজনে গ্রাম থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতিদিন এই মহানগরীতে আসে, নগর ছেড়ে চলে যায়। গ্রামে ফিরে গেলে বিশাল শষ্যের প্রান্তর, ছোট বড় নদী, পায়ে চলা মেঠো পথ। সেখানে গাড়ির হর্ণ'র বিকট শব্ধ নেই, রিকশার টুংটাং আওয়াজ নেই, হঠাত করে দানবাকৃতির ট্রাকের ঘাড়ের উপড় চড়ে বসার সম্ভাবনা নেই। সেটাই আমাদের প্রকৃতি। আমাদের আবাস।

সামান্য সময়ের জন্য মহানগরে এসে নগর-নিয়মের নিগড়ে নিজেদের বন্দী করতে ইচ্ছে করেনা-তাদের জন্য ফুট ওভার ব্রীজ দেখার বিশয়-পারাপারের বিশয় নয়। তাই ফুট ওভার ব্রীজ শুণ্য পরে থাকে। আমরা হালটের নিয়মে হিমশিম খেতে খেতে কোন রকম রাস্তা পার হয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি......... কিন্তু আমরা যারা মহানগরের স্থায়ী বাসিন্দা-তারাও কেনো জেব্রা ক্রসিং কিম্বা ওভার ব্রীজ/ ফুট ওভার ব্রীজ নিয়ম মেনে পার হইনা?


আরো পড়ুন


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.