আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাগরিক যন্ত্রনা-৫ (গ্যাস স্টেশন)

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

নাগরিক যন্ত্রনা-৫ (গ্যাস স্টেশন) আমাদের দেশে সিএনজি(কম্প্যাক্ট ন্যাচারাল গ্যাস) ব্যবহার শুরু হয়েছে খুব বেশী দিন হয়নি। মাত্র কয়েক বছর পর্যন্ত সিএন জি গ্যাসের ব্যবহার খুব কমছিল। তখন সিএন জি চালিত গাড়িও অনেক কম ছিল। সেই সঙ্গে সি এন জি গ্যাস স্টেশনও অনেক কম থাকায় অনেক দুরের গ্যাস স্টেশনে গিয়ে গ্যাস নিতে হতো। কিন্তু বর্তমানে প্রচুর গাড়ি সি এন জি চালিত গাড়ি।

বেড়েছে গ্যাস স্টেশনের সংখ্যাও। সব গ্যাস স্টেশনেই গ্যাস রিফিল করার জন্য লম্বা গাড়ির লাইন। কখনো কখনো গ্যাস স্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়ে গ্যাস নিতে এক দেড় ঘন্টা লেগে যায়। রাস্তায় রোদের মধ্যে চালকরা গাড়ি নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকে। গাড়ির মালিকও গাড়ির ভেতরে গড়মে ঘামতে থাকে।

গাড়ির ভিতরে বসে থাকা মহিলারা হাতপাখা ঘোড়ান, গড়মে বাচ্চারা কান্না করে। ইঞ্চি ইঞ্চি করে গাড়ি এগোতে থাকে। গাড়ির লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। কখনো কখনো নজেল খারাপ। কখনো কখনো গ্যাসের প্রেসার কম থাকায় এবং ঈদানীং কারেন্ট নাথাকায় গ্যাস ভর্তি করতে অনেক অনেক বেশী সময় নেয়।

এভাবে চলতে চলতে ঘন্টাখানেক পরে যখন স্টেশনের কাছে আসি-তখন হঠাত এক আপদ এসে হাজির হয়। এই আপদের নাম ভি আই পি! ভি আই পি গাড়ি লাইনে দাড়ায়না। সিরিয়ালের কিম্বা লাইনের ধারধারেনা। হুট করে ঢুকে পড়ে স্টেশনে সবার আগে। চারিদিক থেকে গাড়ির ড্রাইভার, মালিক, যাত্রীরা গাড়ি থেকে নেমে প্রতিবাদ মুখর হয়ে ওঠে, চিল্লাচিল্লি করে-তখন অনুপ্রবেশকারী চালক চোখ রাংগীয়ে বলে-এম পি সাহেবের গাড়ি! চারিদিক থেকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে-"এমপি সাহেব বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে-এতক্ষণ ধরে আমরা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি আর উনি এসেই ঢুকে পড়লেন"! গ্যাসোয়ালারা বলে-"ভাই, একটু ধৌর্য্য ধরনে-ভি আই পি'দের জন্য অগ্রাধিকার আছে"।

কোন কোন ড্রাইভার খিস্তি করে ড্রাইভারকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে-তোর এম পি সাবের মায়রে ......। আরও বলে- "ভোটের সময় সব হালায় ঘরে যাইয়া বাপ ডাকে এখন ভি আই পি গিরি চো......"। ভি আই পি'র ড্রাইভার তখন কানা-বোবা। কেউ কেউ আবার এমপি সাহেব নন। কিন্তু তারা ভি আই পি দের চাইতে কয়েক কাঠি সরেশ! সেইসব লোকেরা সরাসরি গাড়ি ঢুকিয়ে দিয়ে পিছনের দড়জা খুলে বেরিয়ে আসে।

প্রতিবাদীদের দিকে খানিকটা তেড়ে যাবার ভংগীতে বুকে চাপড় দিয়ে বলে-"আমাকে চিনিস? আমার গাড়ি আগেই গ্যাস নিবো"। কেউ প্রতিবাদ করলে চিতকার করে বলে-"ঐ শুয়রের বাচ্চারে গাড়ি থেকে নামা, আমি কেডা চিনাইয়া দেই"! এরকম বিতন্ডতা থামাতে একজন প্রবীণ মানুষ গাড়ি থেকে নেমে আসেন এবং বলেন-"ঠিক আছে বাবা, আপনিই আগে নেন। ঝগড়া ফ্যাসাদের দরকার নেই"। আমরা বেশীর ভাগ সাধারন নাগরিক এইসব প্রতাপশালীদের চিনিনা। কোথায় যে কার প্রতাপ, কেন প্রতাপ, কিশের প্রতাপ-নিয়মমানা নাগরিকেরা তা কিছুতেই বুঝতে পারিনা।

ফলে নীরবেই এইসব জুলুম ও অবিচার মেনে নিতে থাকি। মধ্যবিত্ত নাগরিকেরা এভাবেই সবকিছু মেনে নিতে একদিন ঘুরে দাঁড়ায়। তখন ঐসব সিজনাল প্রতাপশালীদের চেনার প্রয়োজন পরেনা।


আরো পড়ুন


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.