সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............
নাগরিক যন্ত্রনা-৪ (বিল)
ঢাকা মহানগরীতে বসবাসরত নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের মাঝে বিভিন্ন প্রকার বিলাতংক বিরাজ করে। তাদের কাছে বিল যেনো বিশাল দেহী মুর্তিমান কাবুলীওয়ালা। মাস সেষে হাতে গোনা টাকা, সারা মাসের বাজার, বাস ভাড়া, রিকশা ভাড়া, ছেলে মেয়েদের স্কুলের বেতন, প্রাইভেট টিউটদের বেতন, গানের শিক্ষকদের বেতন, কাজের বুয়ার বিল সহ নানারকমের বিল। কোন কোন মাসে আছে প্রতিবেশীর বাচ্চার জন্ম দিন, আত্মীয় স্বজন কারোর বিয়ের দাওয়াত এবং সেইসব দাওয়াত রক্ষার্থে উপহার সামগ্রী কেনার যন্ত্রনা। এগুলো নিয়মিত খরচ।
তার উপড়ে আছে কিছু আকস্মিক এবং অবাঞ্চিত বড় বড় খরচ। যেমন-পরিবারের কারো অসুস্থ্যতা-অর্থাত ডাক্তার কিম্বা হাসপাতাল খরচ। এমন অবাঞ্চিত খরচও প্রায় প্রতি মাসেই ঘটে থাকে। সর্বোপরি একজনের আয় পরিবারের পাঁচ জনে মিলে ব্যয় করাতো আছেই। ফলে টানাপোড়ন আর শেষ হয়না।
কখনো কখনো সন্তানের প্রয়োজনীয় দাবী মেটাতে নাপেরে বলে-আগামী মাসে। স্ত্রী-সন্তানদের সামান্য বিনোদনের জন্য চিড়িয়াখানা কিম্বা শিশু পার্কেও নিয়ে নাযেতে পারার অস্ফুট কস্ট কেউ বুঝবেনা!
এমন সব অসহায় পরিস্থিতিতে কাবুলীওয়ালার মত এসে হাজির হয়-বিভিন্ন "বিল" নামক যন্ত্রনা। টেলিফোন বিল, পানির বিল, গ্যাস বিল, বিদ্যুত বিল, ডিশের বিল ছাড়াও দিতে হবে নাইট গার্ড বিল, ময়লা ওয়ালার বিল। বিল নামক কাগজটা অত্যন্ত ভয়ংকর। আয়ের সীমা, সংসারের অভাব অবুঝ "বিল" বোঝেনা।
মাস শেষে সে আসবেই!ডিজিটাল বাংলাদেশ হবার পর থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিদ্যুত বিহীন কাটাতে হয় ১৪/১৫ ঘন্টা। তারপরও গত মাসের ৫০০ টাকার বিলের যায়গায় এমাসে এসেছে ৮০০ টাকা। গৃহকর্তা মনে করেন-নিশচই এটা শালা বাড়িওয়ালার কারসাজি! বাড়িওয়ালাকে চ্যালেঞ্জ করে কোন লাভ হয়না। তাহলে এটা মিটার ড়িডারের কারসাজি। ঘুষ খাবার ধান্ধা!বেটা মিতার রিডার তোকে ঘুষ দেবোনা-প্রয়োজনে আমি বিল অফিসগিয়ে চ্যালেঞ্জ করবো, লিখিত কম্পলেইন করবো-আমি এর শেষ দেখে ছারবো......।
কম্পলেইন করে কোন লাভ হয়না-বিল পরিশোধ করতেই হবে। নাহলে লাইন কাটা যাবে! ল্যন্ড ফোন নিয়ে আরেক ঝামেলা। বাসার সকলেরই সেল ফোন আছে। সবাই কথাও বলে সেল ফোনে। অথচ মাসকাবারী ফোনের বিল আসে ৬০০ টাকা! যেখানে যথাযথ ভাবে বিল হওয়া উচিত সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা।
গৃহকর্তা এসন্তানকে ডাকেন, ওসন্তানকে ডেকে ধমক লাগান কে ফোনে এতো কথা বলে? সবারই এক কথা তারা কেউ ল্যান্ড ফোন ইউজ করেনা। স্ত্রীকে ডেকে ধমক লাগান-"তুমি ঘরে বসে করোটা কি-দেখতে পাওনা ছেলে মেয়েরা সারা দিন টেলিফোন করে হাজার টাকা বিল তুলছে! তোমরা কি মনে করেছো আমি তাকার গাছ লাগিয়েছি-যে যতই বিল আসবে আমি গাছ থেকে টাকা পেরে পেরে দিয়ে দেবো"! স্ত্রী-সন্তানেরা যতই বলে-তারা ল্যান্ড ফোন ইউজ করেনা, তাতে গৃহকর্তার রাগ কমেনা। বৌকে আবার ধমক দিয়ে বলে-"ল্যান্ড ফোনের আউট গোয়িং বন্ধ করে দাও-সবাই শুধু সেল ফোন ইউজ করবে"। বৌ বোঝে বেচারা স্বামীর অসহায়ত্বের কথা, সন্তানরা বোঝে বাবার সীমিত আয়ের কথা। কিন্তু "বিল" বোঝেনা নির্ধারিত আয়ের গৃহকর্তার কথা!
একমাসের বিল বকেয়া পরলে পরের মাসে ডাবল বিল জমা হয়।
অফিস ফেরত ক্লান্ত নাগরিক বিলের হিসেব নিয়ে বসেন-কিন্তু আয়ের সাথে বিলের হিসাব মেলেনা! বকেয়া বিল জমতে থাকে। কখনো কখনো হিসেব করেন কোরবানীর সময় ঈদ বোনাস পেলে কোরবানী নয়-আগেই বিল পরিশোধ করবেন। কিন্তু সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে, প্রতিবেশীদের সাথে প্রেস্টিজের পাল্লা দিয়ে কোরবানী দিতেই হয়। ওদিকে সীমিত আয়ের নাগরিকের বিলের বোঝা বাড়তেই থাকে। তারপর একসময় বিদ্যুত বিভাগ নাহয় গ্যাসের লোক কিম্বা টেলিফোন বিভাগের লোক এসে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দ্যায়।
ম্লানমুখো নাগরিক অর্থের সন্ধানে বের হন-কিন্তু বিলের বিড়ম্বনা কিছুতেই মেটেনা!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।