আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাগরিক যন্ত্রনা-৮(ভাসমান মানুষ)

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

নাগরিক যন্ত্রনা-৮(ভাসমান মানুষ) রাজধানী ঢাকাতে ভাসমান মানুষের আসা যাওয়া একটা চিরাচরিত প্রথা। বিগত বছরগুলোতে ঘরহীন, বেকার জনগোষ্ঠী ঢাকা শহরে ছুটে আসছে বানের পানির মত। যারা আসছে-তাদের আর্থীক অবস্থা স্রোতে ভাসমান কচুরিপানার মতই। গ্রামে তাদের না আছে ঘরবাড়ি, নাআছে জমি জিরাত। তাদের কংকালসার শরিরের আছে শুধু প্রানের অস্তিত্ব।

গাঁওগ্রামে কাজ থাকলে ঐসব শীর্ণকায় মানুষগুলো আগে রাজধানীতে সহসাই আসতোনা। কিন্তু বর্তমানে সব মানুষ এখন শহরমুখী তথা রাজধানীমুখি। আগেও রাজধানীতে ভাসমান মানুষ আসতো বিশেষ বিশেষ সময়ে। যেমন ঈদ পার্বনে মানুষ আসতো ভিক্ষা করার জন্য। ঈদের পরপরি তারা আবার ফিরে যেত নিজ গাঁয়ে নিজ পরিবার পরিজনের কাছে।

কিন্তু বর্তমানে ঘরের গৃহকর্তা, যুবক-তরুন সন্তান সবাই পরিবার সুদ্ধ ঢাকায় চলে আসছে পংগোপালের মত। ঢাকায় তাদের কোন আত্মীয় স্বজন নেই, থাকা খাওয়ার কোন নিশচয়তাও নেই-তানিয়ে তাদের কোন ভাবনাও নেই। তারা ঢাকা পৌঁছেই শুরু করে ভিক্ষাবৃত্তি। রাস্তার মোড়ে, মার্কেটের বারান্দায় কিম্বা ফুটপাতে সংসার সাজিয়ে থেকে যাচ্ছে। তাদের বাধা দেবার কেউনেই।

একটা দুইটা পরিবার একত্রিত হতে হতে সৃস্টি হয়-বিশাল এক সংঘবদ্ধ জনগোষ্ঠী। তখন আর তাদের স্থানচ্যুত করা সম্ভব হয়না। গত দশ বছর পুর্ব পর্য্যন্ত বাংলাদেশের আনাচে কানাচে একটা বৈশিস্ট দেখা দেখা গিয়েছিল-তাহলো সকল শ্রমজীবি মানুষ এমনকি ভিক্ষুকদের পরনেও ছেড়া-তালী দেয়া কাপড় পরিধান করতে দেখা যেতনা। বরং সকলের গায়েই মোটামুটি ভালো জামা এবং পায়ে স্যান্ডাল দেখা যেত। হঠাত করে নয়-গত বছরখানেক যাবত আবারো শ্রমিকদের এবং ভিক্ষুকদের পরনে ছেড়া জামা, উদোম শরির কিম্বা স্যান্ডালহীন ভিক্ষুকের আনাগোনা অনেকগুন বেশী বেড়ে গিয়েছে! ২০০৭ সনের ১১ই জানুয়ারী যে চক্রান্তের সরকার ক্ষমতাসীন হয়েছিল-তাদের মুল উদ্দ্যেশ্যই ছিল এদেশের সাধারন সম্পন্ন মানুষদের আবারো ভিক্ষুকের জাতিতে পরিনত করা।

হকার উচ্ছেদ, হাটবাজার উচ্ছেদ,দোকানপাট উচ্ছেদ, বস্তি উচ্ছেদের কারনে দরিদ্র মানুষদের তারা মানবেতর জীবনে ঠেলে দিয়েছে। ফলে এই নগরীতে আবারো ভিক্ষুক, ছিন্নমুল মানুষের আনাঘোনা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্ন বস্ত্র কর্মহীন এসব মানুষ মহানগরীতে পা দিয়ে মহাবিপাকে পড়েছে। সরকার বস্তি উচ্ছেদ করে দেয়ায় বাসস্থানহীন মানুষের কোথাও মাথা গোজার ঠাঁই নেই। ফলে ফুটপাতই ভরসা।

আগে যারা ফুটপাতে ঘুমাত তাদের বেশীর ভাগই ছিল মাদকসেবী কিম্বা ছিচকে চোর। কিন্তু ইদানীং ফুটপাতে ছিন্নমুল মানুষদের ভীর দেখে কিছুটা আতকে উঠতে হয়। কখনো কখনো রাত ৯/১০ টার দিকে পল্টন মোড় থেকে হাইকোর্ট-মতস ভবন-শাহাবাগ-বাংলামোটর-সোনারগাঁ-পান্থপথ ধরে বাসায় ফিরি। বলতে গেলে কিছুক্ষণ পরপরই দেখা যায় ছিন্নমুল মানুষেরা নিজের সহায়সম্বল ছোট্ট একটা পুটলী মাথার নিচে রেখে ঘুমোতে ব্যস্ত মহানগরীতে আসা কিশোর কিশোরী, জীর্ণ শীর্ণ বৃদ্ধ বৃদ্ধা। কেউ কেউ কোলের মধ্যে শিশু সন্তান আকড়ে ধরে শুয়ে আছে, কেউবা ঘুমোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সব যায়গায় এরা একা নয়-কোথাও কোথাও এরা আছে পুরো পরিবার নিয়ে। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় এভাবেই একজন, দুজন করে নগরীতে আশ্রয় নিয়েছিল দুর্ভিক্ষ পীড়িত লক্ষ লক্ষ মানুষ। ক্ষুধার যন্ত্রনায় ফুটপাতেই মারা গিয়েছিল অগনিত আদম সন্তান। কিশোরী-তরুণীরা ইজ্জত বিক্রি করে ক্ষুণ্ণিবৃত্তি নিবারনের চেস্টা করেছে। পতিতালয়ের দালালেরা পিতার হাত থেকে কেড়ে নিয়েছে সোমত্ত কণ্যা কিম্বা ক্ষুধার তাড়নায় পিতাই দালালের হাতে তুলেদিয়েছিল স্ত্রী-কন্যাদের।

কাজেই ফুটপাতে এসব ভাষমান মানুষদের উপর্যুপরি আগমন দেখে নগরবাসী আতংকিত হয়। গ্রামে কাজ নেই। মানুষের হাতে পয়সা নেই। ক্ষুধার অন্ন যোগাড়ের আর কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে কাজের আশায় নগরে আসতে শুরু করেছে ক্ষুধার্ত মানুষ।

নগরীতে একসময় কাজছিল। রমরমা রিয়েলস্টেট ব্যবসা ছিল। নির্মাণ কাজে প্রচুর শ্রমিকের কাজ ছিল। ফুটপাতের মানুষ ইট ভাঙ্গার কাজ করে কিছু উপার্যন করতে পারত। প্রতিদিন কর্ম সংস্থান হত।

এখন তার কিছুই নেই। সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল-প্রতি পরিবার থেকে একজনের চাকুরী দেবার। চাকুরীতো দেয়ইনি বরং চাকুরিজিবীদের ভিতর থেকেই এখন চলছে ছাটাইয়ের ধুম! এখন সেইসব স্লোগানের কথা খয়ের খাঁ মিডিয়ামেনরা মনে করিয়ে দ্যায়না। আমরা ১৯৭৪ সালের ঘরপোড়া গরু। ফুটপাতে ছিন্নমুল মানুষের ভীড় দেখে দিন দিন ভীত হচ্ছি।



আরো পড়ুন


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.