আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি নিয়োগ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বচ্ছতা!



বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় একজন কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য ২০০৬ সালের মে মাসে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। পদটি পূরণের জন্য লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার পর অজ্ঞাত কারণে তা বাতিল হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষের অপছন্দের লোকটি ১ম স্থান অধিকার করায় পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়। ওই অপছন্দের লোকটিই কিন্তু তখন ওই পজিশনে ভারপ্রাপ্ত হিসাবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

নিন্দুকেরা বলে তার সুপারভাইজারের অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তিনি সুপারভাইজারের বিরাগভাজন হন। বলাবাহুল্য এই সুপারভাইজার একজন বিদেশী। যাই হোক ২০০৬ সালের নবেম্বর মাসে ওই পদটি পূরণের জন্য আবারও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। কিন্তু ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পর্যন্তই। আগেরবার যাও বা লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার পর পরীক্ষা বাতিল হয়েছিল এবার আর কোন কিছুই অঙ্কুরিত হয়নি।

কারণ সেই বিরাগভাজন ব্যক্তিটি এবারও আবেদন করেছিলেন। আবার ঘটল সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এবার সেই একই পদ পূরণের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০০৭ সালের মে মাসে। যথারীতি লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষা নেবার পর পরীক্ষা বাতিল করা হয়। এবারও তাদের সেই বিরাগভাজন ব্যক্তিটি আবেদন করেছিলেন।

কে জানে হয়তোবা এবারও সেই ব্যক্তিটি ১ম স্থান অধিকার করেছিলেন। আর সেই কারনেই পরীক্ষা বাতিল করতে তারা দ্বিধান্বিত বোধ করেন নাই। এখানেই শেষ নয়। লজ্জা, অপমান, হতাশা আর ক্ষোভে এই ব্যক্তিটি শেষ পর্যন্ত সংস্থাটি ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। তার চলে যাবার পর অবশেষে ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে আবারও ঐ পদটি পূরণের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।

আশ্চর্য হলেও এটাই সত্য যে আবেদনপত্র জমা দিলেও এবার আর তিনি লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাক পাননি। এ থেকে কি আমরা কিছু বুঝতে পারি? কার হীনস্বার্থ চরিতার্থের উদ্দেশ্যে এসব অনিয়ম হয়েছে? এমনিভাবে বিভিন্ন পদে পরীক্ষা নেবার পর তা বাতিলের অনেক উদাহরণ এই সংস্থাটির রয়েছে। উদাহরণ রয়েছে পদ পূরণের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও পরবর্তীতে আর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করার। এ যেন মগের মুল্লুক। এর ফলে তারা যে শুধু আবেদনকারীদের সাথে হঠকারিতা করছে তা নয় এরা আমাদের দেশ এবং আমাদের জাতিকে বিশ্বের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করছে।

তাদের অনিয়মগুলো নিয়মে পরিণত করার জন্য তারা তাদের দিল্লিস্থ আঞ্চলিক অফিসে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করে আসছে। কারণ হিসেবে তারা কখনও প্রার্থীর অযোগ্যতা আবার কখনও পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনকে পরীক্ষা বাতিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এখানে উল্লেখ্য লিখিত এবং মৌখিক সকল পরীক্ষায় তারাই পরীক্ষক হিসেবে সর্বদা উপস্থিত থাকেন। পরীক্ষা নিয়ে এসব প্রহসনের আসল কারণগুলো কখনই জানা যাবে না। কারণ এ ধরনের সংস্থাগুলো সাংঘাতিকভাবে স্বচ্ছতায় (!) বিশ্বাসী।

এরাই গুড গর্ভনেস আর হিউম্যান রাইটস নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে মুখের ফেনা তুলে ফেলেন। আমাদের না হয় একটা বদনাম আছে তবুও জানতে ইচ্ছে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এর মূল্যায়নে এই সংস্থা কোন স্থানে থাকবে? এই সংস্থার ধারণা কিছু সরকারী কর্মকর্তাকে বিদেশ পাঠিয়ে তারা যা ইচ্ছে তাই করে বেড়াবেন। প্রতিটি সংস্থারই লোকবল নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকাটাই স্বাভাবিক এবং এটা ঐ সংস্থার স্বাধীনতা। কিন্তু কোনো নিয়োগের ক্ষেত্রে যদি কারো ব্যক্তিস্বার্থ কাজ করে তবে সেই স্বাধীনতাকে কি স্বেচ্ছাচারিতা বলা যায় না? তাই যদি হবে তাহলে দেখতে হবে কারা এর সাথে জড়িত কিই বা তাদের উদ্দেশ্য? আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে দুষ্টু গরুর চেয়ে শূণ্য গোয়াল ভালো। এখানে কোন্‌ নীতি কাজ করছে বুঝা মুশকিল হলেও এটা পরিস্কার যে, এই সংস্থায় চলছে অযোগ্যতার বিরুদ্ধে যোগ্যতার আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের লড়াই।

এই সংস্থার লোক নিয়োগের শেষ অনিয়ম হচ্ছে এনপিও ইমুনাইজেশন পোস্ট পূরণ করার ক্ষেত্রে। এই পদে লোক নিয়োগের জন্য ২০০৯ সালের জানুয়ারী মাসে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রাথমিক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আবার প্রকাশ পেয়েছে সেই নোংরামি, সেই স্বেচ্ছাচারিতা। যে যোগ্যতার বলে একজনকে লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে সেই একই যোগ্যতার বলে আরেকজনকে বাদ দেয়া হয়েছে। বাদ দেয়া হয়েছে এমন ব্যক্তিকে যিনি দীর্ঘ ২০ বছর ইপিআই কাজের সাথে জড়িত এবং এই পদে ৫ বছর ধরে সুনামের সাথে কাজ করে এই স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ স্বরূপ চাকুরী হতে ইস্তফা দিয়ে চলে গিয়েছিলেন।

যে সংস্থায় লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতা আর ব্যক্তি স্বার্থটাকেই প্রাধান্য দেয়া হয় তাদের কাছ হতে ভাল কিছু আশা করা বৃথা। ভালো কিছু যদি করতেই হয় তবে যারা নিজের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তৎপর তাদের বাদ দিতে হবে। এই সংস্থায় ষ্টাফ এসোসিয়েশন নামে একটা এসোসিয়েশন আছে। এই এসোসিয়েশনের কি কাজ তা বোধকরি এসোসিয়েশনের সদস্যরা নিজেরাও জানেন না অথবা জানলেও তা চর্চা করার সৎ সাহস রাখেন না। এদের মাকাল ফল বললে বোধকরি ভুল হবে না।

তাই যদি না হবে তাহলে নিয়োগ নিয়ে যে এত কিছু ঘটে গেল কই তাদের উপস্থিতি তো টের পাওয়া গেল না। অথচ নির্বাচন এলে এরাই স্টাফ এসোসিয়েশনের নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য তদবির শুরু করেন। লাভ একটাই কাছে থেকে বিদেশীদের তোষামোদ করা আর নিজের পজিশনকে কি করে বি থেকে সি অথবা সি থেকে ডি-তে উন্নীত করা যায় তার ফিকির করা। মনে হয় বিদেশী সংস্থায় চাকুরী করে এরা নিজেদের আত্ম সম্মানবোধ বিকিয়ে দিয়েছেন। যারা সামান্য নিয়োগ নিয়ে এত নাটক করতে পারেন, দেশ এবং দেশের জনগণকে অন্যদেশের কাছে ছোট করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন না তখন স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে এদের কাছ থেকে সরকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কি উন্নতি আশা করতে পারেন? কোন অধিকারের বলে তারা দিনের পর দিন এমন ঘৃণ্য কাজের চর্চা করে আসছেন? তাই এসব অশুভ ব্যক্তিদের এখনই চিহ্নিত করতে হবে, নিতে হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।

গুটিকতক লোকের জন্য এমন একটি সংস্থার বদনাম হোক তা আমরা কখনই চাই না। আমরা চাই এমন লোক যারা সকল লোভ লালসার উর্দ্ধে থেকে এ দেশের জনগণের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতির জন্য কাজ করে যাবেন। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ইপিআই-এর অগ্রগতি এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। আমরা এখন সন্দিহান এইসব অশুভ ব্যক্তিদের হাতে আমাদের কষ্টার্জিত সাফল্য কতটা নিরাপদ? আমার কথাগুলো যদি আপনাদের বিশ্বাস না হয় তাহলে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। তবে কেঁচো খুজতে গিয়ে সাপ বের হয়ে পড়লে কিন্তু আমাকে দোষারোপ করতে পারবেন না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.