"A little knowledge of science makes man an atheist, but an in-depth study of science makes him a believer in God." Francis Bacon.
হযরত আদম (আঃ) মানব জাতির আদি পিতা । তিনি নানা ভাষার অক্ষর মাটি দিয়ে তৈরী করে আগুনে তা পুড়িয়ে নিয়েছিলেন । পরে নূহ (আঃ) এর বন্যার পর তার বংশধরদের দ্বারা তা নানা দেশে চলে যায় । কুরআন ও ইতিহাস বর্ণিত ঐ বন্যা হয়েছিল ঈসা (আঃ) জন্মের ৩২০০ ব্ছর পূর্বে । [দ্রঃ মাওলানা দারিয়াবাদীর আল-কুরআনের উর্দু তাফসীর, পৃষ্ঠা-৩৬৯]
অন্য মতে ঈসমাঈল (আঃ) আরবী অক্ষরের জন্মদাতা ।
কেউ বলেন আরবী লিপির জন্মদাতা 'আদনান' । ঐতিহাসিক মসউদির মতে বনি মসিনের ছেলেরা আরবী লিপির আবিস্কারক । সেসব লোকদের নাম ছিল আবজাদ, হুত্তি, হাওয়জ ও কালিমন প্রভৃতি । তাদের নামানুসারেই আরবী বর্ণমালার বর্ণগুলোর নামকরণ হয়েছে । বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন বলেছেন, সারা পৃথিবীতে প্রথমে লেখা শুরু করেন দক্ষিণ আরবের লোকেরা ।
[দ্রঃ আরবী সাহিত্যের ইতিহাস, পৃঃ-১০৪ ]
অন্য মতে হযরত হুদ (আঃ) লিখিত বর্ণের স্রষ্টা আর তিনি প্রত্যাদেশ দ্বারা তা শিখেছিলেন । [দ্রঃ আহমাদ হাসানের লেখা আরবী বই এর উর্দু অনুবাদ, পৃষ্ঠা-১৫১]
ডঃ শহীদুল্লাহর মতে আরবী লিপি শামী লিপি হতে এসেছে এবং গ্রিক ও লাতিন বর্ণমালাও ঐ শামীর অনুকরণে রচিত । [দ্রঃ ডঃ শহীদুল্লাহর সংবর্ধনা গ্রন্হ, আরবী বর্ণমালা ]
ভাষা গবেষক জার্মান প্রাচ্যবিদ মুরতস প্রমাণ করেছেন আরবীভাষীরাই ইয়ামেনে আরবী লিপি তৈরী করে । তিনি আরও প্রমাণ করেছেন স্পেনভাষীরা তাদের লেখার বিদ্যা শিখেছিল দক্ষিণ আরব থেকে । [দ্রঃ ডক্টর মনসুর ফাহামীর লেখা মুজাল্লাতুল মজমইল আরাবী, দামেশক ১ ম খন্ড, সংখ্যা ৩২, পৃষ্ঠা ১০৫-১০৭]
সুতরাং প্রমাণ হয়, আরবরা অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিলেন না বরং তাঁদের তৈরি আলোকবর্তিকা সারা বিশ্বকে আলোকিত করেছে ।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিজে নিরক্ষর ছিলেন, তার অন্য তাৎপর্য আছে । যদি তিনি উচ্চশ্রেণীর শিক্ষক হতেন অথবা কোন উচ্চ বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতেন তাহলে অনেকে ভাবতেন এত ভাষা, ভাব ও অলংকার সংবলিত কুরআন তাঁরই রচনা । কিন্তু তিনি তার সুযোগ পান নি । তাছাড়া পন্ডিত পিতা হতেও পুত্রের পান্ডিত্য অর্জন সম্ভব, কিন্তু উনার ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বেই উনার পিতা আবদুল্লাহ পরলোক গমন করেছিলেন । আর বিদুষী মা হতেও শিক্ষা নেওয়া যায়, কিন্তু সেখানেও মহানবী (সাঃ) বন্চিত ছিলেন ।
কারণ মক্কার বিষাক্ত লু হাওয়া এবং অস্বাস্হ্যকর আবহাওয়ার জন্য কচি বেলাতেই উনার মা উনাকে অনেক দূরে হালিমা নামের এক ধাত্রীর নিকট পাঠিয়েছিলেন লালন পালন করার জন্য । আর হালিমার ছেলেরা ছিল মেষের রাখাল । এসব সত্য তথ্যের মাঝখানে এটাই প্রমাণ হয় যে, কুরআনের সৃষ্টি নিপূণতায় মহানবী (সাঃ) এর কোন হাত ছিল না বরং তা আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত একটি ঐশী গ্রন্হ । পৃথিবীর সকল শিক্ষকের শিক্ষক নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বরণীয় ও স্মরণীয় , কিন্তু কারো একথা বলার সুযোগ নেই যে তিনি বিশ্ব নবীর শিক্ষক । তবে এটা ঠিক যে, তিনি নিজে লিখতে না জানলেও কলম ও লেখার গুরুত্ব তার জানা ছিল ।
তিনি জানতেন, যে জাতির কলম যত শক্তিশালী সে জাতি তত প্রতিষ্ঠিত ও উন্নত হতে পারবে । তাই ৬২৪ খ্রীষ্টাব্দে বদর যুদ্ধের বন্দিদের মুক্তি দিয়েছেন এক ঐতিহাসিক শর্তে । সেটা হচ্ছে - নবীর নিরক্ষর ভক্তদের দশজনকে লেখা শেখাতে পারলেই একজন বন্দি মুক্তি পাবেন । অবশ্য শিক্ষিত বন্দিদের জন্য এই শর্ত ছিল । [দ্রঃ সিরাতুল মসতাফা, ১ম খন্ড, ৫৯১ পৃষ্ঠা ]
বিশ্বনবী তাঁর বক্তব্য অনেক ক্ষেত্রে লিখিয়ে নিতেন ।
[হাদীস সংকলনের ইতিহাস, পৃষ্ঠা ২২৩-২২৪, লেখক মুঃ আঃ রহিম ]
'সাদিকাহ' বলে একটি হাদীস নবীর যুগেই সংকলন করা হয়েছিল যাতে এক হাজার হাদীস লেখা ছিল । [সুনানে দারিমি, পৃষ্ঠা ৬৭ ]
হযরত আনাস নবীজির সঙ্গী ছিলেন । তিনি তার আদেশ, নির্দেশ, নিষেধ ও উপদেশ লিখে রাখতেন । লেখার মধ্যে যাতে ভুল না হয় বা অনিচ্ছাকৃত যোগ-বিয়োগ না হয়, তাই তিনি পড়ে শোনাতে বলতেন এবং বিশ্বনবী (সাঃ) শুনতেন । [হাকিমঃ মুসতাদরাক, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা-৫৭৩]
বিশ্বনবী মক্কা ও মদীনাকেই শুধু শিক্ষাকেন্দ্র গড়েনন নি বরং তাঁর পন্ডিত মুহাদ্দিস সাহাবীদের নিজের কাছে না রেখে তাঁদের পাঠিয়ে দিতেন তাঁদের প্রিয় জন্মভূমি হতে দূর-দূরান্তে ।
তাই দেখা যায় নবীর যুগে মক্কায় ২৬ জনকে রেখেছিলেন, কুফায় ৫১ জন, আফ্রিকার মিসরে ১৬, খোরাসানে ৬ জন ও জযীরায় ৩ জন । [দ্রঃ নূর মোহাম্মদ আজমীর হাদীসের তত্ত্ব ও ইতিহাসের পৃষ্ঠা ১৯ ]
ভাষা, ব্যাকরণ ও লিপির ইতিহাসের ফিরিশ্তি আজ বিশাল হলেও আরব সভ্যতা বা মুসলমান সভ্যতা একটা সাধারণ বস্তু নয়, বরং অসাধারণ ও উল্লেখযোগ্য । বর্তমানে পৃথিবীতে যত ভাষা আছে আরবী ভাষা প্রথম সারির আর্ন্তজাতিক ভাষা বলে গণ্য । তাই ইউ.এন.ও. তেও যে কোন বক্তব্য আরবীতে অনুবাদ করতেই হয় । যদিও বর্তমান পৃথিবীতে ভাষা আছে মোট দু'হাজার সাত শ' ছিয়ানব্বইটি ।
[দ্রঃ ডঃ শহীদুল্লাহর ভাষার উৎপত্তি, মুঃ সফিউল্লাহ সম্পাদিত শহীদুল্লাহর সংবর্ধনা গ্রন্হ (১৯৬৭) পৃষ্ঠা ২২২ হতে ২২৭]
পূর্বেই ইঙ্গিত দিয়েছি যে মুসলিম জাতি এবং ইসলাম ধর্মকে যেন কেউ একটা মামুলি বা অতি সাধারণ বিষয় বলে এড়িয়ে না যান । বর্তমান সিনেমা, টেলিভিশন, রেডিও, বই-পুস্তক বিশেষত ইতিহাসে প্রাপ্তব্য বিষয় হলো, মুসলমান যেন হতভাগ্য জাতি আর তাদের ইতিহাস শুধু অত্যাচার আর বিলাসিতার ফানুস । তারা 'বিদেশী' , আমাদের স্বদেশে এসে ভারতকে করেছে অনুন্নত অথবা ধ্বংস । কিন্তু এ কথা প্রকৃত ইতিহাস বলে না ।
যেমন অধ্যাপক শান্তিভূষণ বসু বলেন -
ক. " পৃথিবীর সর্বাধুনিক ও অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধর্মের নাম ইসলাম ধর্ম ।
বহু পন্ডিতের মতে ইসলাম কার্যকরীভাবে মানুষের মনুষ্যত্ব রক্ষায় তৎপর । .... .. খ্রিষ্টধর্ম মানুষকে পাপের ফলস্বরূপ বিচার করেছে। ...... হিন্দু ধর্মে মানুষকে বলা হয়েছে অমৃতের সন্তান । আপন সত্তার রূপ আবিস্কার করে মানুষ আবার ঈশ্বরেই ফিরে যাবে । তার সত্তার রূপটিই হচ্ছে ঈশ্বরের রূপ, অর্থাৎ মানুষের ঈশ্বর হতে বাধা নেই ।
বাইবেলে লেখা হয়েছে, একটি উটের পক্ষে সূঁচের রুদ্ধ পথে চলা যতটা দুস্কর, ধনী ব্যাক্তিদের স্বর্গে পৌছানো তত কঠিন অথচ ইহজগতে দারিদ্রপীড়িত অসহায় মানুষের দুর্গতির অন্ত নেই । হিন্দু ধর্মে মানুষকে যতই ঈশ্বর বলা হয়েছে ততই মনুষ্যত্বের অবমাননা ঘটেছে দিনে দিনে । কাজেই বলা চলে, উপরোক্ত দুটি ধর্মে যদিও মানুষের কল্যণই সমস্ত আলোচনার মূল লক্ষ্য তবুও কার্যত সামাজিক জীবণে এই কল্যাণ প্রকৃষ্ট রূপ পায় নি । ইসলাম মানুষের কল্যাণ কামনা করে বাস্তব চেহারা পাবার দিকে এগিয়েছে । শুধু বাক্যেই নয় , প্রকাশিত সত্যেই জানা গেছে ইসলাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও ইহজাগতিক ।
... এবং তিনিই (মুহাম্মদ) সমগ্র মানব সমাজকে আহ্বান করেন সমস্ত অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে । ....তাঁর এই আহ্বান ও সংগ্রাম এতই প্রত্যক্ষ ও এতই সামাজিক মানুষের জীবন যাত্রায় সত্য যে, ইসলাম স্বভাবতই সহজ, সরল, গণতান্ত্রিক ও মানবিক ধর্ম হয়ে উঠে । "
খ. " 'মুসলিম' শব্দটির অর্থও তাই, 'যারা আনুগত্য স্বীকার করেছে ' । এই আনুগত্য পৃথিবীর চূড়ান্ত শক্তির কাছে নয়, মহত্তম কোন ব্যাক্তি বিশেষের কাছে নয়, এমন কি মুহাম্মদের কাছেও নয় । আনুগত্য একমাত্র আল্লাহর কাছে ।
"
গ. " ইসলাম পুরোহিত তন্ত্রের ধর্ম নয় । ঈশ্বর মানুষের মধ্যে তৃতীয় কোন মধ্যস্হের প্রয়োজন নেই ইসলামে । যে কোন শুদ্ধ চরিত্র মুসলমান মসজিদে প্রার্থনা পরিচালনা করতে পারেন । "
উপরোক্ত ক, খ ও গ মন্তব্য নৈহাটির ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র কলেজের অধ্যাপক শান্তিভূষণ বসুর 'প্রাচ্য দর্শনের ভূমিকা ' গ্রন্হের ২২৮, ২২৯, ২৩২ ও ২৩৪ পৃষ্ঠা হতে নেওয়া হলো । যেটা ছাপা হয়েছে ১৯৬৪ সালের আগষ্ট মাসে, কলকাতা ৯ হতে ।
১৯৬৪ সালের ছাপা তথ্যের সাথে ইদানিংকালের ছাপা তথ্যের যে অনেক গরমিল সর্বত্র পরিলক্ষিত হয় তা অতীব দুঃখের ও চিন্তার বিষয় ।
[সূত্রঃ চেপে রাখা ইতিহাস, গোলাম আহমাদ মোর্তজা , মদীনা পাবলিকেশন্স । ]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।