কৃষ্ণশুভ্রারা বেঁচে থাকুক দূরে সুদূর স্বপ্নসীমান্তে
ইদানিং আমার জীবনটাকে আমি নিয়ন্ত্রণ করি না। আমার গতিবিধিগুলো খুব বেশিরকম গণ্ডিবদ্ধ হয়ে পড়ছে। অনেক আগের একটি লেখায় বৃহন্নলাদের জীবন নিয়ে লিখতে গিয়ে একটি লাইন লিখেছিলাম- ” বিষণ্ণ নিস্তরঙ্গ জীবন আমার বয়ে চলে নর্দমার জলের মত”। সেই লাইনের সেই হতভাগার মত আমার জীবনটাও কেমন যেন পানসে হয়ে যাচ্ছে। ক্রমশই রসগুলো নিঙড়ে বেরিয়ে গিয়ে শুধুই ক্লেদ জর্জরিত এক করুণ জীবনাবশেষ পড়ে আছে আমার জন্য।
প্রতিদিন আমি চলি বাসা - বাস- বাস - অফিস- লাঞ্চ- অফিস বাস- রিকশা বাসা। যাপিত জীবনের টানা একঘেয়ে ক্লান্তিকর বিষণ্ণ পথচলায় আমি ক্রমেই যেন জ্বালানিচালিত যন্ত্র হয়ে যাচ্ছি। কেমন একটা ভয়াবহ শূন্যতার বোধে আমি ক্লান্ত।
সেদিনের রাতটাও তেমন বিষণ্ণ একঘেয়ে হয়ে যাবার আগেই আমার মাঝেকার কোন এক সত্তা আমাকে জানান দিল বাইরে কিছু একটা ঘটছে। জানালা খুলে বসে থাকি।
একটা ঠাণ্ডা বাতাসের ঝাপটা এসে লাগে গায়ে। আর তার সাথে হঠাৎ করেই আমার কাছে মনে হয় যেন বাতাসের এই গন্ধটা আমার কাছে খুব পুরাতন। কোন এক অসীম মহাকালের আদি হতে আমার জন্মের অনেক আগেই আমি একে চিনি। বাতাস তার সাথে একটু একটু করে নেমে আসল - নেমে আসল বৃষ্টি। আমার মাঝেকার বিরক্তিগুলো দূরে চলে গেল কিছু সময়ের জন্য।
আমার স্মৃতির ঝাপি খুলে গেল হঠাৎ করেই।
খুব ছোট শৈশবের ক্লান্তিহীন দুরন্ত সময় ফিয়ে এল মনে। মনে এল ছোট বাড়ির বারান্দায় বসে বারি দর্শন আর তার সাথে কানে ভেসে এল যেন তখনকার সময়ে শোনা কিছু বৃষ্টির ছড়া। আমি কল্পনার চোখে দেখতে পাই সেই আঁধারিত রহস্যময় আলোতে কৃষ্ণ জলদের শুভ্রবারি হয়ে ঝরে পড়ার অপার বিস্ময়কর দৃশ্য। কালো মেঘ থেকে কিভাবে সাদা বৃষ্টি হয় তা আমার কাছে অদ্ভুত ঠেকেছে কিংবা প্রকৃতিকে নিজের কাছে আমি নিজেই রহস্যময় করে তুলেছি।
ভালো লাগা বৃষ্টি ভালোবাসার বৃষ্টিও আজ আমার কাছে ধরা দেয় না সবসময় আজকের মত করে।
ভারি বর্ষণে নীড়ে ফেরা পাখির মত ন্যুব্জ হয়ে আমি বসে থাকি না কখনও। বরং রিকশার হুড খুলে দিয়ে বৃষ্টিকে সুযোগ করে দেই আমাকে আলিঙ্গন করতে পরম মমতায়। মনে পড়ে ক্যাডেট কলেজের কথা। তীব্র বর্ষণের ক্লান্তিকে কাটাতে অকারণ ফুটবলের আদলে ওয়াটার পোলো সম কিছু খেলার চেষ্টা করা, কিংবা কোন এক বৃষ্টিস্নাত দুপুরে অথরিটির রক্তচক্ষু বুড়ো আঙগুল দেখিয়ে আম চুরির চেষ্টা কিংবা বর্ষণ মুখর রোমান্টিক দিনে ভাবালু কিছু কিশোরের মুক্তির আনন্দে জল অবগাহন।
কিংবা আঁতলামি ভর করা কোন দিনে কবিতা পাঠ করে বোদ্ধা হয়ে যাওয়ার ভান করা ভানাড়ু সময়। সেই সৌন্দর্য আর আজ আমাকে ছোঁয়া দেয় না। ঠাণ্ডার সমস্যা আর বাতজ্বরের গুতায় ফুটো ভালব নিয়ে আমি বৃষ্টি অবগাহনে নামলে অভিভাবক মহলে কেমন এক বিপ্লব এসে উপস্থিত হয়। তারপরেও মনে চায় আমার বাইয়ে সামনের বাড়ির স্বাধীন বালকটির মত এত রাতেও যদি বৃষ্টির সাথে আলিঙ্গন করতে পারতাম।
আমি বিষণ্ণ এক ধরণের ভালো লাগা অনুভব করি।
নিস্তরঙ্গ গতিহীন জীবনে ক্ষণিকে ভালোলাগার অনুভূতিগুলো খুব করে ছুঁয়ে যায়। আমার মনের গোপন ঘরে একে একে বাজতে থাকে সেই সব সুন্দর কিংবা স্মৃতিময় সময়ের প্লেব্যাক। যাপিত জীবনের ক্লেদ ভরা ক্লান্তিকে পিছনে ফেলে সামনে অগ্রসরমান আমি থমকে দাঁড়িয়ে শুধুই নস্টালজিক হয়ে ভাবি — কিছু কিছু পিছুটান গুন টানে উজানে উজানে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।