লিখতে ভাল লাগে, লিখে আনন্দ পাই, তাই লিখি। নতুন কিছু তৈরির আনন্দ পাই। কল্পনার আনন্দ। পিছুটান
মোহাম্মদ ইসহাক খান
স্যার, একবার বোঝার চেষ্টা করুন। আমি এই পেশায় আছি আজ দশ বছর ধরে।
অনেক বিপজ্জনক মিশনে আমি গিয়েছি, সব বিপদাপদ ভেদ করে বেঁচে ফিরেও এসেছি, কখনো ভুল করিনি। এবারের মিশনে যদি কারো যেতে হয়, তবে সবচেয়ে যোগ্য দাবীদার আমি নিজেই, তাতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কিন্তু তারপরেও ... ...
কমান্ডার তাঁকে থামিয়ে দেন, কিন্তু তারপরেও তোমার মত একজন অভিজ্ঞ এজেন্টকে না পাঠিয়ে কেন ঐ শিক্ষানবীশ তরুণ ম্যালকমকে পাঠাচ্ছি, এই তো?
অবশ্যই। আমি তো কোন যুক্তিই দেখতে পাচ্ছি না। তিনি এক মুহূর্ত থামেন, তবে কি আপনি আজ এতদিন পর আমার যোগ্যতায় সন্দেহ করছেন, কমান্ডার?
কমান্ডার লাইটার জ্বালিয়ে সিগারেটে অগ্নিসংযোগ করলেন।
ধীরে ধীরে গোল করে ধোঁয়ার রিং বানিয়ে ছেড়ে দিলেন, কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে রইলেন উড়ন্ত ধোঁয়ার গোলকগুলোর দিকে। তারপর বললেন, না, আমি তোমার যোগ্যতায় কোন সন্দেহ পোষণ করছি না, ভিক্টর।
তাহলে? আমার যোগ্যতা আছে, উপযুক্ত ট্রেনিং আছে, শারীরিকভাবে আমি সম্পূর্ণ উপযুক্ত, অভিজ্ঞতার কথা যদি বলেন, তাহলে সেটাও আমার আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। কী নেই আমার? ঐ ছেলেটি আমার চেয়ে কীসে বেশি?
কমান্ডার মুখ খুললেন। তোমার এমন একটা দুর্বলতা আছে, যেটা ঐ তরুণের নেই।
সার্জেন্ট ভিক্টর হাসলেন। দুর্বলতা? উইথ রেস্পেক্ট, কমান্ডার, আমার মধ্যে আমি নিজে তো কোন দুর্বলতা দেখতে পাচ্ছি না।
কমান্ডার ম্যাক এদিকে ফিরলেন। মৃদু হেসে বললেন, তোমার দেখতে পাওয়ার কথাও নয়।
কেন, কমান্ডার, কেন? আমাকে খুলে বলুন, প্লীজ।
সার্জেন্ট ম্যাক খুঁজে পান না তাঁর কীসের দুর্বলতা।
তোমার বাড়িতে কে কে আছে, ভিক্টর? কমান্ডার ম্যাক প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন।
এ প্রশ্ন করছেন কেন?
যা জিজ্ঞেস করছি, তার জবাব দাও, ম্যাক।
আমার বাড়িতে আছে স্ত্রী আর সন্তান, একটা ছেলে।
ছেলের বয়স কত?
পাঁচ।
তুমি তাকে ভালোবাসো?
হ্যাঁ। সে-ও আমাকে খুবই পছন্দ করে। এটা কেমন প্রশ্ন হল কমান্ডার, বাবা সন্তানকে ভালবাসবে না? তাছাড়া এসব প্রশ্নের অর্থ কী?
কমান্ডার বললেন, তুমি যখন কোন মিশনে যাও, তোমার স্ত্রী দুশ্চিন্তা করে না?
করে তো বটেই। কিন্তু আমার পেশাই তো এটা, আমি ওকে বুঝিয়ে বলেছি। বৃহত্তর স্বার্থে সে-ও মেনে নিয়েছে।
কিছু মনে করবেন না কমান্ডার, আপনার কথার মাথামুণ্ডু আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
তোমার যদি কিছু হয়ে যায়, তাহলে তোমার স্ত্রী আর সন্তান দুঃখ পাবে না?
দুঃখ পাবে তো বটেই। কিন্তু আমি সেই ভয় করি না, কমান্ডার। আমি জীবনে অসংখ্যবার মৃত্যুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এসেছি, এবারও তাই করবো। আর যদি আমি মারাও যাই, তাহলে একজন বীর শহীদ সৈনিকের স্ত্রী আর সন্তান হিসেবে ওরা আনন্দিতই হবে এবং সান্ত্বনা খুঁজে পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি, বেশ গর্বের সাথে বললেন সার্জেন্ট ভিক্টর।
কমান্ডার ম্যাক সিগারেটের অবশিষ্ট অংশটি অ্যাশট্রেতে পিষে ফেলে বললেন, বুঝতে পারছি, আমার পয়েন্টটা তুমি ধরতে পারো নি। তুমি ঐ ছোকরা ম্যালকমের সম্পর্কে কিছু জান?
না, কমান্ডার। নাক উঁচু করে একটু অবজ্ঞার সাথেই বললেন সার্জেন্ট। শুধু এটুকু জানি, যোগ্যতা কিংবা অভিজ্ঞতায় সে আমার কাছে কিছুই নয়। শুধু আমি কেন, এই প্লাটুনে যত সৈনিক আছে, তাঁদের সবার চেয়ে সে অনভিজ্ঞ।
কাজেই সবাইকে বাদ দিয়ে একে পাঠানোর কোন কারণই থাকতে পারে না।
কমান্ডার ম্যাক বললেন, তাহলে তোমাকে জানিয়ে দিচ্ছি। এই মিশন একটা সুইসাইড মিশন। এই মিশনে আমাদের প্লাটুন থেকে যে-ই যাক না কেন, সে-ই মারা যাবে, এটা একেবারে একশো ভাগ নিশ্চিত। এতদিন তুমি যেসব মিশনে গিয়েছ, সেগুলো থেকে জীবিত ফিরে আসার সম্ভাবনা সিকিভাগ হলেও ছিল, কিন্তু এবার নেই।
সার্জেন্ট ভিক্টর কমান্ডারের দিকে তাকিয়ে আছেন।
কমান্ডার ম্যাক একটু দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করলেন, কাজেই আমি ঐ ম্যালকমকেই পাঠাচ্ছি, যার এই পৃথিবীতে কেউ নেই। তার বাবা-মা নেই, ভাই-বোন নেই, স্ত্রী কিংবা প্রেমিকা, কিছুই নেই। সে বড় হয়েছে অরফানেজে, আপনজন কী বস্তু, তা সে জানে না। তুমি যতই সাহসী হও না কেন, যদি এই মিশনে যাও, তাহলে এর ভয়াবহতা দেখে প্রথমেই তোমার স্ত্রীর মুখ মনে পড়বে, তোমার ফুটফুটে সন্তানটির মুখ মনে পড়বে, তাদের কথা ভেবে হয়তো তুমি পিছিয়ে আসবে।
কিন্তু ... ... সার্জেন্ট ভিক্টর কিছু একটা বলতে চান।
কমান্ডার ম্যাক তাঁর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলতে থাকেন, কিন্তু এই ছেলেটির মৃত্যু হলে অশ্রু বিসর্জনের একটি মানুষও নেই, কাজেই সে পিছিয়ে আসবে না, বরং মৃত্যুর সামনাসামনি দাঁড়িয়ে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই করে যাবে। আশা করি বুঝতে পেরেছ ভিক্টর, তোমার কোন্ দুর্বলতাটি আছে, আর ম্যালকমের নেই। আমি তোমার মতো অভিজ্ঞ সেনাকে হারানোর ঝুঁকি নেবো না, ভিক্টর।
সার্জেন্ট ভিক্টর মাথা নিচু করে থাকেন।
তিনি বুঝতে পেরেছেন, তাঁর মতো অত্যন্ত অভিজ্ঞ সেনারও একটি বিশাল দুর্বলতা আছে, যেটা ঐ অনভিজ্ঞ চোখ-না-ফোটা তরুণটির নেই।
দুর্বলতাটি হল পিছুটান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।