আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিছুটান

বৃষ্টিতে হাঁটতে ভাল লাগে আমার কারন কেউ দেখেনা দুচোখের জল ধুয়ে যায় বৃষ্টিধারায়

সকাল থেকে ভীষন ব্যস্ত , এতটুকু ফুরসৎ নেই বাইরে তাকানোর । তার উপর শীতাতপ কক্ষে বদ্ধ জানালার ব্রাশ কার্টনএর ফাঁক গলে বাইরের আলো ও তেমন একটা আসেনা ভেতরে। অবশেষে হাতের কাজ টা শেষ করে যখন একটু আরাম করে নরম চেয়ারে গা ভাসিয়ে দিলাম ক্নান্তিতে । তখন ই বেজে উঠলো কানের কাছে ফোনটা , রিসিভারটা ধরতেই অনেক কথার ফুলঝুড়ি মেলে ধরলো আমার ৪ বছরের মেয়েটা । অনেক খুশী আর উত্তেজনায় কি যেন বলতে চাইলো কিন্ত পরিষ্কার বুঝলামনা তবে এটুকু বুঝলাম বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে এবং আমাকে এখন সেটা দেখতে হবে ।

আলতো ঝুঁকে জানালার পর্দাটাকে আলতো সড়িয়ে দেখলাম বাইরে যেন আকাশ এর সমস্ত কালো মেঘ ভেংগে মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে। ফোনটা রেখে কাজে কিছুতেই মন বসছিলোনা। বারবার লোভাতুর চোখে দৃষ্টি চলে যাচ্ছিলো জানালার বাইরে । অনেকদিন বৃষ্টিতে ভেজা হয়না , অথচ এমনও একটা সময় ছিলো যখন স্কুল পালিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে ঘন্টার পর ঘন্টা ফুটবল খেলা ,খোলা রাস্তায় বন্ধুদের সাথে বৃষ্টিতে ভেজা আর বাড়ি ফিরে প্রচন্ড বকুনি অতঃপর পিঠের উপর উত্তম মাধ্যম । কত তীব্র অনুভূতিতে আচ্ছন্ন ছিল সেইদিন গুলো ।

এখন ও মনে পড়ে রাতে যখন ঝড় থেমে যেতো তখন অন্ধকারে হারিকেন নিয়ে উঠোনে বের হতাম পাশের বাড়ীর আমগাছ থেকে ঝরা আম কুড়াঁতে । এক একটি আম যখন কাদা জলে থেকে খুঁজে পেতাম তীব্র আনন্দ চীৎকারে এলাকা মাৎ করতাম । সে যেন ছিল গুপ্তধন পাওয়ার আনন্দের সমতুল্য । কখনও কখনও সেই আমের মালিকানা নিয়ে ঝগড়া হতো প্রতিবেশীর সাথে । সেই দিন গুলো আজ কত দুরে মাঝে মাঝে মনে হয় এই দিন গুলোকে স্বপ্নের মত ।

আজকের এই কঠিন বাস্তবতায় সেই দিন গুলোকে স্বপ্নর মতোই মনে হয় । বৃষ্টিকে শৈশবে উপভোগ করেছি স্কুল পালিয়ে ধুপখোলা মাঠে ফুটবল খেলে। সেই বৃষ্টিকে আবিষ্কার করলাম নতুন রুপে নতুন আংগিকে যখন জীবনে প্রথম প্রেমে পড়লাম । বৃষ্টি তে যখন প্রকৃতি সিক্ত হতো আমি তখন আমি ঝড় তুলতাম আমার রাইটিং প্যাডে , পাতার পর পাতা চিঠি লেখতাম মনের মানুষটির জন্য । এখন সেই চিঠির স্তুপ নিয়ে আমার স্ত্রী মাঝে মাঝে বসে অতীতকে খুঁজে পেতে ।

মনে আছে ভীষন পাগল ছিলাম ,গভীর রাতে বৃষ্টি পড়ার শব্দ পেলে বসে পড়তাম চিঠি লেখার প্যাড নিয়ে । লেখতে লেখতে কখন যে ভোর হত টের পেতাম না । সময়টা ছিল ১৯৯৯ থেকে ২০০১ এর মধ্য । সেসময় চাকরী সূত্রে ছিলাম ঢাকা থেকে অনেক দুরে । আজকের মত মোবাইলের সহজলভ্যতা তখন ছিলোনা আর যে জায়গায় আমি ছিলাম সেখানে ল্যান্ডফোনের সুবিধাও ছিলোনা তাই একমাত্র চিঠি ছিল আমাদের দুজনের একমাত্র ভরসা আর যোগাযোগের মাধ্যম।

আজ আমরা একই ছাদের নীচে । আমাদের ছোট্ট সংসারে প্রতিনিয়ত ভাগ করে চলেছি আমাদের সুখ দুঃখ গুলোকে । আজও যখন বৃষ্টি পড়ে কোন ছুটির দিনে আমরা বসে পড়ি আমাদের প্রেমের চিঠিগুলো নিয়ে । আবার খুঁজে পাই আমাদের সেই পুরোনো প্রেমকে নতুন করে । আমাদের ভালোবাসা পুরোনো পাতার ভাঁজে ,পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা কত মুহূর্ত এসে খেলা করে মনের আঙিনায়।

আবার বৃষ্টি নেমেছে বাইরে অঝোর ধারায়। টেলিফোনে রিং বাজছে এই বৃষ্টি তে জানি এখন কে আমাকে ফোন করেছে ........।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।