আমি যা আছি তাই ভালো। :) ধূর,সার্কিটটা আজকেও মিললো না ভাবতে ভাবতে ফিজিক্সের লেকচার শুনছিল সাবরিনা। আজকের লেকচারটা কেমন যেন বোরিং লাগছে স্যার কি যেন সব সুত্র পড়াচ্ছেন। স্যারের দিকে তাকাতে গিয়ে হুট করে ভার্সিটি লাইফের শুরুর দিকের কথা মনে পড়ে গেলো। স্যারই একদিন বলে ছিলেন,সাবরিনা,নিজের জন্য ক্ষতিকর কোন সিদ্ধান্ত নিয়ো না,যা শুধু তোমাকে পিছনের দিকে টানবে সেসব থেকে দূরে থাকাই ভাল।
সম্পুর্ণ নতুন পরিবেশ ,চারদিকে অপরিচিত মুখ,বাড়ি থেকে অনেক দূরে- স্যারকেই তখন অনেক আপন মনে হয়েছিলো। মনে হচ্ছিলো বুঝিবা কোন অলৌকিক ভাবে স্যার সাবরিনা নামক অদ্ভুত,অমিশুক,লাজুক মেয়েটার জীবনে এক টুকরো আশার আলো হয়ে এসেছিলেন। নতুন আশা,নতুন ভাবে স্বপ্ন দেখা,সামনের সব বাধা খুব সহজেই জয় করা। ।
……………।
।
সাবরিনা তখন নতুন একটা সিম কিনেছে,নতুন লাইফ,তাই নতুন সিম,নতুন সেট সব কিছু যে নতুন ভাবে । নতুন নাম্বারটা অনেক্কেই দেয়া হয়নি বলে মাঝে মাঝেই আগের নাম্বারটা নতুন নাম্বারে ডাইভার্ট করে রাখত। একদিন ভোরে উঠে দেখলো একটা আননোন নাম্বার,স্বভাবতই ও গায়ে লাগালো না,বাট ৭টার দিকে ওইনাম্বারটা থেকে আবার কল এলো। এত ভোরে আননোন নাম্বার ভাবলো কারো কিছু হল নাতো।
সাবরিনা সিম চেঞ্জ করে নিজেই কল দেয়। অপরিচিত কন্ঠস্বর। তেমন কিছু বলার চান্স না দিয়েই ও প্রায় ঝাড়ি মেরে ফোন রেখে দেয়। উনি আবার কল দিলেন। সাবরিনা প্রায় বড় ধরনের একটা ঝাড়ি মারতে যাচ্ছিল।
কিন্তু উনি বললেন, আমি একটা কৌতুহল নিয়ে ফোনটা করেছিলাম। প্রায় ২ বছর আগে আমার বড় ভাই এক্সিডেন্ট করেছিলেন। তখন ও আমরা কেউই প্রায় জানতাম না,কিন্তু এই নাম্বার থেকে একজন আমার ভাইয়ের নাম্বারে কল করে সে কেমন আছে জানতে চায়। ঐদিন খুব অবাক হয়েছিলাম। কে সে তা জানার জন্য আমি গত ২ বছর ধরে আমি নাম্বারটাতে ট্রাই করেছি(সাবরিনার নাম্বার অনেক দিন বন্ধ ছিল)।
সাবরিনার মনে তখন তারও আগের অনেক কথাই মনে হুড়মুড় করে এসে পড়লো। কিন্তু কিছু না বলে ও তার সম্পর্কে জানতে চাইলো। কথা বলতে বলতে বেড়িয়ে এলো ,তারা একই ভার্সিটির,একই ডিপার্টমেন্ট,শুধু তিনি টিচার আর ও স্টুডেন্ট। সাবরিনার সেই অতীতের কথা আর বলা হল না। বলতে গিয়েও নিজের মধ্যেই চেপে রাখলো।
হতবিহবল সাবরিনাকে সামলে নিয়েছিলেন কিন্তু স্যার ই। তারা যে একই এলাকার ও। স্যার তাই তার ভীত ,বিস্মিত মন কে শান্ত করার জন্য অনেক কথাই বলেছিলেন। তারপর বল্লেন,একদিন এসে ডিপার্টমেন্ট এ দেখা করতে। সাবরিনা তখন মনে মনে স্যার এর প্রতি অনেকটাই উইক হয়ে পড়েছে।
এমন কেয়ারিং যিনি যে কোন মেয়েই উইক হতে বাধ্য। আবার অনেক দিন আগের কথা মনে পড়লেও কেমন যেন একটা অদ্ভুত ভাবনা(what the heck is happening in my life?is this real?or my dream?didnt expect something turn out to be like this).
কয়েক সপ্তাহ পর স্যার নিজেই আসতে বললেন তার রুমে,সাবরিনাও প্রায় নাচতে নাচতে গেল। স্যার খুব ভালভাবেই ব্যবহার করলেন,ডিপার্টমেন্ট সম্প্ররকে অনেক কথাই বল্লেন,পড়াশুনার ব্যাপারেও অনেক কথা বললেন,,আরো বললেন,নিজের জন্য ক্ষতিকর কোন সিদ্ধান্ত নিয়ো না,যা শুধু তোমাকে পিছনের দিকে টানবে সেসব থেকে দূরে থাকাই ভাল। তারপর এলেন কিভাবে আমার নাম্বার পেলেন সেই ব্যাপারে। সাবরিনা প্রায় বলেই ফেলেছিল,স্যার বলে উঠলেন আমি আর আমার ভাবি প্রায়ই গল্প করি কে হতে পারে সেই মেয়েটি?
সাবরিনার বুক ধ্বক করে উঠলো,তার ভাই তবে বিবাহিত?নতুন বিয়ে করেছে নাকি আগে থেকেই বউ ছিল?নানান ভাবনা।
স্যার আবার জানতে চাইলেন তুমি কিভাবে জানলে আমার ভাই এক্সিডেন্ট করেছে?ও শুধু বল্ল,আমার ফোন আমার অনেক বান্ধবীরাও ইউজ করত তো,তাদের মধ্যেই কেউ হয়ত কল করেছিল। স্যার কথা টা মনে হয় ঠিক বিশ্বাস করলেন না,আবার কিছু বললেন ও না। অনেক কথার ভীড়েই বল্লেন,ভালো রেজাল্ট করলেই শুধু আমাকে কল দিবে। তার আগে দিও না। সাবরিনা কিছু না বলে বেরিয়ে এল।
কয়েকদিনের টানা উত্তেজনা এখন অনেকটাই স্তিমিত। কিছুটা স্বপ্ন ভংগ,কিছুটা আশাহত হয়ে হলের দিকে এগিয়ে গেল।
সাবরিনার আম্মুর নাম্বারে প্রায়ই একটা নাম্বার ডিস্টার্ব করে। শেষে চরম বিরক্ত হয়ে সাবরিনা তার নিজের নাম্বার থেকে কল দিল। ছেলেটির সাথে কয়েক মিনিটের মত কথা হল।
সাবরিনার মিষ্টি কন্ঠ শুনে ছেলেটি এরপর প্রায়ই আর আট-দশটা ছেলের মত কল দিত। সাবরিনা কখনো কথা বলত,কখনোবা বলত না। ছেলেটি কিছুদিন পরই প্রোপোজ করল,সাবরিনার না শুনেও সে প্রায়ই কল দিত। এবং তাকে ভালোবাসার কথা বলত। সাবরিনা আধুনিক যুগের সচেতন মেয়ে।
তাই সে খুব ভালভাবেই তাকে ট্যাকেল করত। এভাবেই অনেক দিন গড়ালো। সাবরিনা তখন মেসে থেকে কলেজ করত। কলেজ এ মোবাইল নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কড়াকড়ি চলছিল,তাই প্রায়ই ফোনটা রুমেই রেখে যেত। একদিন কলেজ থেকে আসতেই ওর রুমমেট বল্ল,তোমার সাথে যে কথা বলত সে এক্সিডেন্ট করেছে,আমাকে তার ভাইয়ের নাম্বার দিয়ে খোজ নিতে বলল ।
সাবরিনা ফোন দিল,ধরলো তার ছোট ভাই। বলল সে ভালোই আছে। যাক ,নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। এরপর সে সুস্থ্য হওয়া পর্যন্ত সাবরিনা কথা বলেছিল,তার পর ই সে ফোন ইউজ করা ছেড়ে দেয়। বলতে গেলে তারপর আর তার সাথে ওর কথা হয় নি।
ছেলেটি ওর আম্মুর নাম্বারে ও অনেক ট্রাই করেছিল। সাবরিনা তার সব কটা নাম্বারই ব্লক করে রাখে। আর আট-দশটা ছেলে মেয়ের মধ্যে মোবাইলে কন্ট্যাক্ট করলে যা হয় তাই হয়েছিল । ক্ষণিকের টান,ক্ষণিকের মোহ,সাবরিনা তাই এটাকে কিছুই মনে করে নি। ভুলেই গিয়েছিল সব কিছু।
এরপর স্যারের সাথে প্রায়ই দেখা হত কিন্তু তেমন একটা কথা বলা হত না। অসুস্থ্যতার জন্য রেজাল্ট সেই রকম ভালো না হওয়ার পর আর কথাও হত না। এরপর সাবরিনা তাকে দেখলে শুধু আনইজি ফিল করত। কেন যে তার সাথে কথা হয়েছিল!নিজেই নিজের কাছে অদ্ভুত লাগে সাবরিনার। কেনইবা তার প্রতি ক্ষণিকের জন্য মায়া জন্মেছিল?ক্যাম্পাসে যাওয়ার আগে মনে করত,আজ যেন তার সাথে দেখা না হয়।
কিছুদিন তার জন্য সাবরিনা সেজেগুজে ও ক্লাসে যেত। অথচ,ধি\ঈরে ধীরে স্যারই যেন পরিণত হল আন ওয়ান্টেড ওয়ান। অনেক দিন পর স্যার নিজেই একদিন ডেকে জিজ্ঞস করেছিলেন,কেমন আছি,কেমন করছি। তেমন কিছুই হয়নি বলা। তাকে দেখলেই তখন সাবরিনার শুধু মনে হত ,কি করে আপনাকে বলব আপনার ভাই কি ছিল?তার মনই বা কেমন ছিল?আপনার কাছে শ্রদ্ধ্যেয় যে ভাই,আপনার ভাবির কাছে পরম বিশ্বাস আর ভালোবাসার যে জন…………।
। থাকনা অতীত,অতীতের কাছেই। কিইবা হবে তার নগ্ন রুপ দেখে। সামনে যে সুদূর ভবিষ্যত.,শুধুই চলতে থাকা...........
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।