দিলের দরজা ২৪/৭ খুইলা রাখি মাছি বসে মানুষ বসে না। মানুষ খালি উড়াল পারে! এক দিন আমি ও দিমু উড়াল, নিজের পায়ে নিজে মাইরা কুড়াল...
ছবি: ফার্মগেট ওভার ব্রীজ থেকে তোলা সিগনাল টেলিফিল্মের একটি দৃশ্য।
ঢাকার রাস্তায় আমার প্রধান বাহন হইল মিটার ছাড়া সিএনজি। এছাড়া রিক্সায় চড়ি আর পায়ে হাটি। দেশে ফিরে প্রথম প্রথম কিছু দিন সাধারন হইতে বাসে চড়তাম।
এক দিন বাদুড় ঝোলা দিতে গিয়া টের পেলাম সময় পল্টে গেছে অনেক, এখন আর তাল সামলাতে পারি না। ঠিক করলাম সিটির ভেতর আর বাসে চড়ব না। দরকার নাই আমার অত সাধারন হওনের। আগে বেঁচে থাকি তার পরে না সাধারন অ-সাধারন!
আমার বাড়ীর দরজা থেকে মিটারে গেলে শাহাবাগ বড়জোর ৩৪ টাকা ওঠে, অথচ কোন দিনই আমি সিএনজিতে ৬০/৭০ টাকা ভাড়ার নীচে যেতে পারি নাই ছবির হাট পর্য্যন্ত। সিএনজির মিটার গুলোও দেখলাম কোন কোনটার ত নাই ই, যে গুলোও আছে কিছু চলে কিছু চলে না।
পেছনে দেখি নালিশ করার কিছু মোবাইল নাম্বারও দেয়া থাকে, তামাশা আর কাকে বলে! এই দেশ মানুষ দিন দিন যেন তামাশা হয়ে যাচ্ছে কারো কোন ভ্রুক্ষেপ নেই!
একটা এ্যাড দেখে ভীষন মজা পেলাম সম্প্রতি। তিন বন্ধু ধানমন্ডি যাবার জন্য একটা সিএনজি পেয়েছে। সে কি তাদের আনন্দ! আমি যখনই বাড়ী থেকে বের হই তখনই মনে হয় ঢাকার রাস্তা চুড়ান্ত অস্থির হয়ে ছোটা ছুটি করছে, মহা পেরেশানী অবস্থা! আমি ঢাকার রোদে তীর্থের কাক বনে যাই। ফুট পাথে দাড়িয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে ট্রাফিক বাতির লাল সবুজ হওয়া দেখি। বাতি গুলো চলে বাতি গুলোর নিয়মে, ট্রাফিক বাবাজীরা তাদের হাত ওঠানামা করান তাদের নিয়মে।
কারো দিকে কারো কোন খেয়াল নাই।
সে দিন একটা টেলিফিল্ম এডিট করলাম নাম ট্রাফিক সিগনাল। ঐ খানে একটা শট দরকার ছিল বাতি লাল হলে গাড়ী থামবে। বাতি লাল গাড়ি থামা একই শটে দেখা যাবে। আমার কাছে যে রাশ নিয়ে আসছে ডিরেক্টর তাতে মন মত শট না পেয়ে নিজেই ক্যামেরা নিয়ে বের হলাম।
তেমন একটি শট খুজে ধরতে এ অনিয়মের নগরে একমাত্র দৈব'র উপরেই যে নির্ভর করতে হয় সে কথা খুলে না বললেও অনুমেয়।
টিভিতে হাউজিং অলাদের বাহারি বিজ্ঞাপনের রংচং অলা বিল্ডিং গুলো দেখলে ভালই লাগে। কিন্তু রিক্সা করে সেই সমস্ত এপার্টমেন্ট বিল্ডিং গুলির নিচ দিয়ে যাবার সময় বারান্দায় লুঙ্গি কাথা শাড়ী বেলাউজ ঝোলাঝুলি দেখে ছোট বেলায় টিকাটুলির কাছে যুদ্ধে বিদ্ধস্ত হোটেল ইলিশিয়ামের পোড়া বিল্ডিং বস্তির মতই মনে হয়। ঢাকা শহরের এক একটা হাইরাইজ এপার্টমেন্ট দেখলে দম আটকে আসে শুধু। এত মানুষ এত মানুষ এত মানুষ, ঝুরঝুরে এই শহরটারে পাড়াইতে পাড়াইতে এক দিন ডাবাইয়া ফেলবে নির্ঘাত!
রাস্তায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে প্রতি টি সিএনজির দিকে হাত বাড়াই।
অই সিএনজি যাইবা? কাছ দিয়ে যাবার সময় দেখি থামবে কি ভেতরে ত যাত্রী আছে! বিজয় সরনীর কোনায় দাড়িয়ে এক দিন েখয়াল করলাম সিএনজি তে প্রায়ই লোক জন অসুস্থ রোগী নিয়ে এদিক ওদিক যাচ্ছেন! ঢাকা শহর হাসপাতালে ভইরা গেছে, লোক জনের অসুখ বিসুখ ও কি বাইরা গেল নাকি? বিষয়টা খুব ইন্টারেষ্টিং, বেশীর ভাগ যাত্রী ই এক জন নারী ও এক জন নর। সব সময়ই মেয়েটা একদম এলিয়ে ছেলেটার গায়ে পড়ে থাকে আর ছেলেটা মেয়েটার গায়ে হাতে হাত বুলাতে থাকে। এর উল্টোটা ও অর্থাত ছেলের ভূমীকায় মেয়ে আর মেয়ের যায়গায় ছেলে তাও চোখে পড়েছে।
অই সিএনজি যাইবা, শাহাবাগ?
কে শোনে কার কথা, এই দুপুরে যে নর নারী সিএনজি চড়ে ছুটে যাচ্ছেন তাদের দিকে তাকিয়ে ভাবি তারা বড় ভাগ্যবান। মরার এই শহরে ডেটিং করার যায়গাও ফুরাইছে, আজ কাল সিএনজিতে ছুটতে ছুটতে পাবলিক কে সারতে হচ্ছে কত কাম! কয়দিন পরে রাস্তা ঘাটে চলতে চলতে আরো কি কি ভ্রাম্যমান পদ্ধতির যে দেখা মেলবে তা ভেবে এমন প্রচন্ড গরমে রাস্তায় দাড়িয়ে দর দর করে ঘামতে থাকি!
অই সিএনজি...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।