আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খোলস- ২

হয়তো আমি কোন কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত নই

আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ ছোটবেলায় আমার দিনের সবচেয়ে আনন্দজনক মুহূর্ত ছিলো রাত আটটা। ওই সময় বাংলাদেশ বেতার থেকে খেলার খবর প্রচার করা হতো। মাত্র পাঁচ মিনিটের খবর। ওইটুকুরই জন্য সন্ধ্যা থেকে হন্যে হয়ে বসে থাকতাম। বাসার রেডিওটা যদিও শুধু আমার কাছেই থাকতো, কিন্তু সন্ধ্যের পর রেডিওটা ধরার অধিকারটুকুও ছিলো না কারও।

এই উত্তেজনা তুঙ্গে থাকতো আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচের দিন। যেদিন রেডিওতে খেলার ধারাভাষ্য প্রচার করা হতো, চৌধুরী জাফরুল্লাহ শরাফতও সেদিন আমার প্রিয়জন হয়ে যেতেন। তবে অধিকাংশ দিনই ধারাভাষ্য প্রচার করা হতো না বলে তীর্থের কাকের মতো আটটার জন্য অপেক্ষা করতে হতো। আবাহনীর কট্টর সাপোর্টার ছিলাম আমি। এখনও যে নই, তা নয়।

তবে আগের মতো আবেগটা নেই। যা হোক, শুনে অবাক হবেন এবং স্বার্থপরের মতো মনে হলেও সত্যি যে, অধিকাংশ দিনই আমি আবাহনীর পরাজয় কামনা করতাম। দুটো কারণে। প্রথমটি অভিজ্ঞতাসঞ্জাত। লক্ষ করে দেখেছি, আমি যেদিন আবাহনীর পরাজয় কামনা করতাম সেদিন কীভাবে কীভাবে যেনো আবাহনী জিতে যেতো।

এমনকি মোহামেডানের তুলনায় দুর্বল হলেও। আমার আজও মনে পড়ে, বিকেলে খেলা হচ্ছে, আমি ধারাভাষ্য শুনছি- রাশিয়ান কুজনেৎসভ মোহামেডানের পক্ষে দুটো গোল দিয়েছেন। আবাহনী শোধ করেছে মাত্র একটি। এদিকে খেলার আর মাত্র মিনিট ১৫ বাকি। আমি মুখে মুখে আবাহনীর পরাজয় কামনা করলেও মনে মনে মুষড়ে পড়ছিলাম।

এমন সময় আবাহনীর পক্ষে মামুন জোয়ার্দারকে নামানো হলো। নেমেই তিনি দশ মিনিটের মধ্যে দুটো গোল করলেন। আবাহনী ম্যাচ জিতে এক গোলের ব্যবধানে। এর পর আবাহনীর পরাজয় কামনা না করে উপায় আছে? দ্বিতীয় কারণটিই আসল। এটি মূলত হতো পরীক্ষার আগে।

আমি খেয়াল করে দেখেছিলাম, কোনো কারণে মন খারাপ হলে সেদিন আমার পড়ালেখা খুব ভালো হয়। আবাহনী হারলে এমনভাবে মুষড়ে যেতাম যে, দুনিয়ার যাবতীয় চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে পড়ালেখায় ডুবে থাকতাম যাতে মন খারাপ ভাবটা মনের মধ্যে জাকিয়ে বসতে না পারে। খুবই স্বার্থপরের মতো মনে হলেও পরীক্ষার আগে আবাহনীর পরাজয় কামনা করা আবাহনীর একমাত্র সাপোর্টার বোধহয় এদেশে আমিই ছিলাম। × ফুটবলের সেই সোনালী দিনগুলো কি সত্যিই আবার আসবে? হয়তো আসবে, হয়তো আসবে না। কিন্তু আবাহনীর জন্য বালিশে মুখ লুকিয়ে বুক ভেঙ্গে কান্না করা সেই কিশোরটির সেই আবেগ আর কখনোই ফিরে আসবে না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।