আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্ষমা করিস না দোস্ , লাত্থি মার আমার চোপায় (গল্প)

কাগু ক্যান স্টার্ট অ্যা ফায়ার ইউজিং জাস্ট টু আইস কিউবস

সকালবেলা খাইয়া দাইয়া সেন্টুর দোকানের সামনে দেড় বছরের পুলারে কোল থাইকা নামাইয়া অফিসে যাওয়া শিল্পীর জামাই দুপুর বেলায় স্ট্রোক আর বিকালে মইরা যাওনের খবরে তুই খুশিই হৈছিলি । আগের দিন রাইতে বাসার ভাড়া জইমা যাওনে তোরে ডাইকা বাপ-মা-বইন তুইলা গালি দিছিল তোর মায়ের খালাত বইন শিল্পীর মা । সেইকারণে তার ক্ষতিতে খুশি হৈয়া শিল্পীর জামাই মৈরা যাওনে যে তোর ভালো লাগছে তা না । তোর ভালো লাগছিল কারণ, এই শোকে এই কান্দনে এই আত্নীয়গো আসা যাওয়ায় বাসা ভাড়ার ব্যাপারটা অন্তত সপ্তাহখানেক পিছাইবো সেইকথা ভাইবা । কপাল খারাপ হওনে, চাইরদিনের মাথাতেই হান্ডি পাতিল বিছনাপত্র নিয়া ধোলাইপাড়ের অন্ধকার চিপার ভিতরে চিপায় আরো অন্ধকার জলার পাশের টিনের ঘরে চৈলা যাওনের সময় আমি ইশকুলে থাকনে তোর মোবাইল নম্বর চাইয়া নিতে পারি নাই ।

ক্যামনে নিমু, সেই সময় মোবাইল কি জিনিস আমার বাপেও দেখে নাই । যখন দেখছে তখনকার সময়ে হৈলেও তোর পুরা সংসার বেইচাও একটা জোগাড় করনের মত সাধ্য আছিল না , সেইটা আমার চাইতে ভালো আর কেডায় বুঝবো । তোর পুরা সংসার তোর হওনের কথা আছিলতো না । তিন নম্বর ছোড বইন হওনের পরে বাপ সব ছাইড়া চৈলা যাওনে, ঘরের মইধ্যেই ফ্যানের মোটর ঠিক করার কাম কৈরা দিনে একসের চাইল আর একপা ডাইল জোগাইতেই লুঙির ফুটা ঘুরাইয়া পরনের অভ্যাস করতে হৈছিল । সেইটা নিয়া তোরে চেতানির সময় অতকিছু খেয়াল আছিল না আমার ।

এত কিছুর মইধ্যেও লক্ষীমন্ত মেয়ে মাইয়া সুলতানার মায়া মায়া মুখডা দেখতে ভালোই লাগত বৈলাই তোর বারোয়ারি ঘরে গিয়া বিরক্ত করতাম তা না । সুলতানারে দেখতে ভালো লাগলেও আর কিছুতে মানাইবোনা সেইটা সেই বয়সেই বুঝা শুরু করছি অলরেডি । রাখঢাক না কৈরা সব কথা কওন যায় এইরকম বন্ধু দুর্লভ বৈলাই প্রাইভেসির ধার না ধাইরা তোর ঘরে গিয়া উঠতাম , এইটাই এখন মনে হৈতাছে আসল কারণ । এদ্দিনে নিজের মনে ঘাঁইটা বাইর করার মত স্মৃতির টুকরা খুব বেশি নাই । ভাসা ভাসা যেইসব ছায়া আছে সেইগুলাই ভরসা ।

আমি খুঁজি নাই তোরে আর কোনদিন । শিল্পীর মা, যে আবার মিথিলারও মা তারেও কোনদিন জিগাই নাই । আটানব্বইএ কার্লোসের মত কৈরা মাথা কামাইয়া ফাইনালের আগের দিন একটা টুর্নামেন্ট জিত্যা , ব্রাজিলের জিতা নিয়া মনের মধ্যে নিশ্চিত হৈলেও পরদিন ব্রাজিল হাইরা যাওনের পরে দুইদিন বন্ধ রাইখা তৃতীয়দিনে আবার ঠিকই খালি পায় খালি মাথায় বলের পিছে দৌড়াইছি । তোর ফাঁকা জায়গা ভরাট করতে সেইরকম একদিন সময়ও নিই নাই । কাঠওয়ালার পোলা জুয়েল আর নোয়াখাইল্যা সুমনের লগে পরদিন বিকালেই আড্ডা দিছি , হাবিব মন্ডলের মাইয়া হীরার লগে টাংকি মারতে মারতে ।

হীরাও অবাক হয় নাই বেশি । তোর মত পোলা দুএকটা হঠাৎ স্রোতের মাইঝখান থাইকা হারাইয়া গেলি কেউ বাল দিয়াও পুছে না । আমিও পুছি নাই । অবশ্য হীরার কথা নিশ্চিৎ হৈয়া কৈতে পারুম না । তুইও যেমন কোনদিন ওর লগে কথা কস নাই, আমিও তেমনি কই নাই ।

এক যুগ পরে এসি মোটরের কাজ কারবার না বুইঝ্যা হতাশ হৈয়া যাইতাছি ঐসময়ে তোর কথা মনে হৈলেও দুই মিনিটের বেশি সেইটা আমি রাখি নাই । মিথিলারে জিগাইছি কয়েকবার তোর কথা তোরা চৈলা যাওনের পরে । কিন্তু কোন ভাব জাগাইছি বৈলা মনে পড়ে না । টাইফয়েডে সুলতানার ছোট রোখসানা পঙ্গু হৈয়া যাওনের খবরে আহ্হারে কৈছি বোধহয় । তাও খুব বেশি হৈলে একবার ।

একবারের বেশির কথা মনে পড়তাছে না । আমি ঢুইকা যাইতাছিলাম নিঃসঙতার কালা বৃত্তের দিকে । সেইখানে খাইতে না পাইয়া তোর চোখ দিনদিন আরে ভিতরে ঢুইকা গেলে বা বাইরে পরার মত জামা নাই বৈলা শিল্পীর মার আরো চাইরপাঁচডা পুলা মাইয়ার বিয়াতে সুলতানা বা তোগো ঘরের কেউ, এক মাইলের মইধ্য বসবাস কৈরাও, না আইলে, আমার কুনদিন মনে হয় নাই সেইসব । আফসোস তো পরের ধাপ । নিজের অন্ধকার তদ্দিনে আমি নিজে ঘাটতে শিখ্যা গেছি ।

তোরটা তুইই ঘাটবি , সেইখানে আমি ভাগাভাগি করতে যামু না, এইটা সচেতনে না হৈলেও অবচেতনে মনে হয় ধৈরা ফালাইছিলাম । মনের ভিতরের বাড়ির অন্ধকার ভাগাভাগি আমি শুরু করি নাই । তুইই শুরু করছিলি , হাবিব মন্ডলের মাইয়া হীরার অবহেলার অন্ধকারে আমারেও টাইন্যা নিয়া । আমি দেইখা মজা পাইনাই, কসম । আমি তখন কেবল মমতা থাইকাই সেইগুলা ঘাইটা দেইখা আহ উহ করছি ।

সেইটাতে কপটতা আছিল না । তখনো গাঢ়তত্ত শিখা হয় নাই আমার । রোয়া উঠা কুত্তা নাকি ফকিরের ভাঙাচুরা মুখের মত তোর ঘরের অবস্থা দাঁড়াইলে সেইটা আমি বাস্তবের চাইতেও ভালো কৈরাই দেখছি স্বপ্নে । অন্ধকার বয়সের অন্ধকার স্বপ্নে । সুলতানার লাইগা কোন কিছু অনুভব করি নাই ।

শিল্পীর বাপ গেরামে জমি কিন্যা ফিরা আসলে মিথিলার কাছ থাইকা জানছি সেইটা তোদের আদি ঘরভিটা । সেই ট্যাকা বিদেশ নেওনের কথা বৈলা টাউট আদম-ব্যাপারীতে খাইলে তোরা বেশি অতলে পড়িস নাই সেইটাও বুঝছি । একটা সীমার পরে অতল আর বাড়ে না । আমারে কেউ বৈলা দিতে হয় নাই । এমনকি টাউটে খাওনের কথাও আমি বুঝার কয়েকবছর পরেই মিথিলা সেইটার নিশ্চিত খবর দিলে, আমি আগে থাইকাই জানি কৈলেও , মিথিলা অবাক হয় নাই ।

তোর মত পুলার পুন মারা খাওনের খবরে আলাদা কৈরা কেউ অবাক হয় না । হীরার কানের দুল বেইচা নোয়াখাইল্যা সুমন গান্জা খাইলে, সেই খবর আমি তোরে দেয়ার দরকার মনে করি নাই । মিথিলার লগে সেইটা নিয়া কথা কওনের দরকারও মনে করি নাই । হীরার লগে টাংকি মারা নিয়া নোয়াখাইল্যা সুমনের লগে তোর মারামারি লাগার অবস্থা থাইকা দুইদিকে দুই রকম বুঝাইয়া আমি থামাইলেও, সেইটা করছিলাম নিতান্তই তোরে বাঁচানির লাইগা । হীরারে সাবধান করনের কোন দরকার মনে করি নাই ।

নাইনে উইঠা হাতের আঙুল কাটা রক্তে গান্জুট্টি নোয়াখাইল্যার কাছে চিঠি লেখতে দেইখাও আমি খারাপ বোধ করি নাই । তোর লাইগাও না, হীরার লাইগাও না । তোরে খবরটা দিলে হীরার লাইগা তোর হয়ত খারাপ লাগতো , সেইটা আমি জানি । তাও তোর খারাপ লাগাতে আসমান ভাইঙা আর ঝড়-ঝাপটাতো নামবো না । নামবো না দেইখাই হয়ত তোরে বলি নাই ।

সেইসময় ধারণা হৈছিল যদি সইত্য খারাপ লাগায় আসমান না কান্দে তাইলে সেইটার অপমান হয় । এখন এই ধারণা আর নাই । আমিও অনেক কিছু শিখছিরে দোস্ত । তোর খবর আমি নিতে পারি কি পারি না সেইটা কোনদিন চেষ্টা কৈরাও দেখি নাই । পুরান ঢাকার অন্ধকার কারখানায় ঝুল-কালি-তেল-তীব্র বিষাক্ত কেমিক্যালের মইধ্য মাসে তিনহাজার ট্যাকায় শইল উজাড় কৈরা দিতাছস এই খবর নিয়াই বা আমি কি করমু ।

পঙ্গু রোখসানার সময় শেষ হৈয়া আইতাছে এই খবরেও আমার কিছু করারতো দেখি না । লোহার মেশিনের লগে চব্বিশ ঘন্টা বসবাস কৈরাও ছোট বইনগুলারে ভালো কিছু খাওয়াইতে না পাইরা তোর ম্যান্দামার্কা মনের অবস্থা আমি জানতাম ঠিকাছে , তয় এদ্দিনে সেইটা কিছুটা হৈলেও লোহার গুনাগুন ধরতে পারছে মনে কৈরাই , আমি তোর অবস্থাটা ভাবনের চেষ্টাও করি না । সুলতানার ছিড়া জামা, আধখালি পেট, রোখসানার পঙ্গু স্বপ্নহীনতা , এইসবে সেইটা ভিতরে গুড়াগুড়া হৈয়া হয়ত এখনো ঝইরা আছে । ঘাটতে গেলে আমি নিজেই ভাইঙা যাইতে পারি । বেশিক্ষণ ধৈরা রাখতে পারে না বৈলা নাজমুল আমার কাছে পরামর্শ চাইতে আইসা, মোবাইলে দুইশ ট্যাকার মাগির ছবি দেখাইলেও, সেইটা সুলতানারই ছবি এইটা বুঝলেও, ধোলাইপাড়েই মাগির বাড়ি এইটা বারবার জিগাইয়া নিশ্চিত হৈলেও, আমি কাউরে কিছু বলি নাই ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.