আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রাগৈতিহাসিক কাল হতে চলমান এক নাটকের ট্রেলার

সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!!

অফিসের এই চেয়ারটাতে এখন আমি বসি। বছরখানেক আগে অন্য একজন বসতেন। সময়ের ঋণ শোধ করে তিনি এখন অবসরে। ব্যক্তির পরিবর্তন ঘটলেও এ চেয়ারের স্বত্বাধিকারীদের জীবনধারা অভিন্ন। রোজ সকালে সেও অফিসের বাসখানার জন্য অপেক্ষা করত।

এখন আমি করি। ভবিষ্যতে হয়ত অন্য কেউ করবে। কোনদিন বাসটা মিস হলে বাড়তি ভাড়া দেওয়ার যন্ত্রণাটা সে সারাদিন বয়ে বেড়াত। এখন আমি বয়ে বেড়াই। ভবিষ্যতে হয়ত অন্য কেউ বয়ে বেড়াবে।

লাসভেগাসের ক্যাসিনোতে তাঁরা কোনদিনও জুয়া খেলবে না। প্যারিসের লালমাটির লন টেনিস কোর্টে তাঁরা কখনই রাফায়েল নাদালের ঝড় দেখবে না। আর্সেনালের এমিরেটস স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসগুলোতে তাঁরা কখনই হাত বুলাবে না। অভাব-অভিযোগ আর মাসের এক তারিখের অপেক্ষার চক্রের মধ্য দিয়েই তাদের জীবনলীলা সাঙ্গ হবে। খুব কমসংখ্যক মানুষই পাবেন যার সাথে আপনার চিন্তার মিল হয়।

খুব কমসংখ্যক মানুষই পাবেন যার ভাবনাগুলোকে আপনার নিজের ভাবনা বলে মনে হয়। খুব কমসংখ্যক মানুষকেই আপনার একান্ত নিজের বলে মনে হয়। এর কারণ সম্ভবতো আপনি সবসময় নিজেকে অন্যের চাইতে আলাদা ভাবেন। চিন্তা, বুদ্ধি অথবা পরিপাটিতে অন্যকে দুর্বল ভাবেন। সবসময় নিজেকেই সঠিক মনে করেন।

আপনি অন্যের কাছে অত্যন্ত উদারমনা হিসেবে চিহ্নিত হতে চান। যদিও এটা আপনার ব্যক্তিত্বের অংশ নয় । নিপুণ বাক্য ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি হয়তো ক্ষেত্রবিশেষে এই কাজে সফলও হন। কিন্তু প্রকৃতঅর্থে মানুষ হিসেবে আপনি সর্বদাই জনবিচ্ছিন্ন এবং সর্বাত্বকবাদী। তবে পৃথিবীর চলমান বিবর্তনের ধারায় আপনি হঠাৎ করে উদয় হওয়া কোন বিচ্ছিন্ন প্রজাতি নন।

পুরাকালে আপনার প্রজাতিরা স্বমহিমায় ছিলেন, এখন আপনি আছেন, ভবিষ্যতেও আপনার প্রতিনিধি হিসেবে অন্য কেউ থাকবেন। এইসব পন্ডিতমনা, সুশীল এবং অবশ্যই চতুর লোকদের বাইরেও যুগে যুগে কিছু বোকা লোকের উদ্ভব হয়। আপনি তাদেরকে ঘটোৎকোচ নামেও অভিহিত করতে পারেন যারা আমার/আপনার শান্তিময় জীবনের জন্য হাসিমুখে একাগ্নী বাণ বুকে নেয়। তাদের বুকের রক্তে যে বৃষ্টিধারা সৃষ্টি হয় আমার/আপনার সংকটময় জীবন তার পরশেই শান্তির ধারায় স্নাত হয়। তবে ঘটোৎকোচদের এই আত্মত্যাগের সুবিধা আমাদের চাইতে বেশি ভোগ করে আরেকটি শ্রেণী।

প্রচলিত ভাষায় আমরা তাদের শাসক বা সমাজের নিয়ন্ত্রণকারী শ্রেণী হিসেবে অভিহিত করতে পারি। এই শ্রেণীটি ঘটোৎকোচদের ত্যাগ ও মহাত্মের গুণকীর্তন করে এবং তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। কিন্তু মসনদ পাওয়ার পর বেমালুম ভুলে যায় পূর্বের প্রতিশ্রুতির কথা। ঘটোৎকোচদের স্বপ্ন কোনদিনই পূরণ হয় না। পূরণ হয় শাসক, তাদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের খায়েশ।

এই শাসকচক্রকে ঘিরে গড়ে ওঠে আরেক বিশেষ শ্রেণী। সহজ ভাষায় যাদেরকে চাটুকার বলতে পারি। তাদের কাজ প্রভুকে তুষ্ট করে নিজের সুবিধা আদায় করা। প্রভু নিজেও বুঝতে পারেন এ তোষামোদ শুধু সুবিধা আদায়ের ফর্মুলা, ঐকান্তিক কোন কিছু নয়। তবু তিনি তা পছন্দ করেন এবং তাদের খায়েশ পূর্ণ করেন।

কারণ তোষামোদ জিনিসটা শাসকদের বড়ই পছন্দীয় বিষয়। বলাবাহুল্য, তোষামোদকারীরা শুধু উদীয়মানের পক্ষ্যে, অস্তগামীর দিকে তারা ভুলেও পা বাড়ায়না। ফলশ্রুতিতে প্রভুর দুঃসময়ে তারা তাকে ত্যাগ করে এবং নতুন শক্তিমান প্রভুর শরণাপন্ন হয়। প্রভুর ভাগ্য বিপর্যয় হলেও তাদের কোন বিপর্যয় নেই। কালে-ভদ্রে মানুষকে সুপথে আনতে তাঁরা উদয় হন।

আমরা তাদের, অবতার, নবী, পয়গম্বর বলে জানি। তাঁদের সমালোচনা, আলোচনা করা যাবেনা। যা বলবেন, যেভাবে বলবেন বিনা বাক্য ব্যয়ে তা অনুসরণ করতে হবে। তবেই মুক্তি, তবেই বেহেস্ত। অন্যথায় নির্ঘাত নরক।

তাদের বিদায়ের পর তাদের মতবাদ নিয়ে অনুসারীদের চলে গবেষণা, ব্যবসা আর ক্ষমতার লড়াই। ব্যবসা আর ক্ষমতার লড়াইয়ের অনিবার্য পরিনতি বিভক্তি। বিভক্তির পরিনতি রক্তারক্তি যার বেশিরভাগ অংশই ঝরে আমাদের মতো সাধারণের শরীর হতে। প্রাগৈতিহাসিক কাল হতেই ছা-পোষা, সুশীল, ধর্মাশ্রয়ী, সুবিধাবাদী, স্বার্থত্যাগী, অভিজাত আর শাসক নামক এই অভিনেতাদের নিপুণ অভিনয় পৃথিবী নামক রঙ্গমঞ্চে মঞ্চস্থ হচ্ছে। একদলের প্রস্থান ঘটলে অন্যদলের আগমন ঘটে।

তবে পটভূমি সেই একই, চিত্রকল্প সেই একই, দৃশ্যগুলো সেই একই। কি এর কারণ বা কবে এর সমাপ্তি তা একমাত্র মঞ্চের পর্দার অন্তরালের সেই নিপুণ পরিচালকই বলতে পারবেন। কিন্তু চির রহস্যময় এই পরিচালক কি কোনদিন সাধারণের মাঝে ধরা দিবেন?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.