সকল অন্ধকারের হোক অবসান
দি রিডার (২০০৮)
জার্মানী। ১৯৫৮ সাল। মাইকেলের বয়স ১৫। স্কুল থেকে ফেরার পথে হঠাৎই তার শরীর খারাপ লাগছে। বমি বমি ভাব।
বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে প্রচণ্ড। দৌড়ে এক ভবনের নীচে আশ্রয় নেয় মাইকেল। তারপর বমি। এমন সময় ভবনের এক নারী, নাম হানা, বয়স ৩৬, ট্রামের কন্ডাকটর, অসুস্থ্য ছেলেটার দেখভাল করে। ছেলেটা ভালোও হয়ে ওঠে।
কৃতজ্ঞতা ছাড়াও কিশোর মাইকেলের মনে জন্ম নেয় অন্যরকম আবেগ।
এভাবেই শুরু হয় অসম বয়সের অসম্ভব রকম দাগ কেটে যাওয়া একটি প্রেমের কাহিনী। মাইকেল আর হানা, দুজনে প্রেমে হাবুডুবু- হানার ঘরে। ছোট্ট সেই ঘরে কিশোর মাইকেল হানাকে পড়ে শোনায়- ওডেসি, হাকেলবেরি ফিন... আরো কত কী! স্কুল শেষ করেই মাইকেল চলে যায় হানার বাসায়। সেখানে প্রথম বইপাঠ, হানা সেসব বইয়ের চরিত্রের সঙ্গে মিশে যায়।
হারিয়ে যায়। বইপাঠ শেষে হানার সঙ্গে ভালোবাসাবাসি। সে এক দুরন্ত, দুর্মর প্রেম। এভাবে প্রতিদিন।
একদিন হানার পদোন্নতি হয়।
সে ভাবে এই "অবৈধ" প্রেমকে আর বাড়তে দেয়া যায় না। কোনো নাম-ঠিকানা না রেখে হানা নতুন কর্মস্থলে চলে যায়। মুষড়ে পড়লেও নিজেকে সামলে নেয় মাইকেল। কিন্তু সেই প্রথম মধুর প্রেমের স্মৃতি কি ভোলার মতো?
যাহোক, বছরের পর বছর চলে যায়। মাইকেল আইনের ছাত্র হয়।
আইনের ছাত্র হিসেবে ১৯৬৬ সালে তার আদালতে যেতে হয় অধ্যায়নের অংশ হিসেবে। সেখানে গিয়ে মাইকেলের হৃদপিণ্ড বন্ধ হয়ে আসে। কারণ বিবাদী বৃদ্ধা মহিলা তার প্রথম প্রেমিকা- হানা।
১৯৪৪ সালে এসএস প্যারামিলিটারি বাহিনীর হাতে চার্চের ভেতর ৩শ ইহুদি পুড়ে মারা যায়। হানা এসএস বাহিনীর সদস্য ছিলো।
শুধু সে না, বিবাদী আরো অনেকেই। কিন্তু কেউ অপরাধ স্বীকার করতে চায় না। আদালতে মিথ্যাভাবে বলা হয়- হানার লিখিত আদেশেই চার্চের দরজা খোলা হয় না, ফলে ভেতরে মারা যায় শ'খানেক ইহুদি।
মাইকেল বিমূঢ় হয়ে পড়ে। ভাবতে থাকে কীভাবে হানাকে সে সাহায্য করবে।
কিছুতেই কিছু করতে পারছে না সে। এক পর্যায়ে হানা স্বীকার করে- সেই আদেশনামা তার লেখা।
কিন্তু ঐ সময়েই মাইকেল আবিষ্কার করে- হানা লিখতেও জানে না, পড়তেও জানে না। ঐজন্যই তাকে দিয়ে সে বইপাঠ করাতো। চোখের সামনে নিরপরাধ হানার যাবজ্জীবন হতে দেখে মাইকেল।
জেলের ভেতরেই ক্যাসেটে রেকর্ড করে নানা ক্লাসিক উপন্যাস, কবিতা আসতে থাকে হানার কাছে। মাইকেল করে করে পাঠায়। চিঠি পাঠায়। সেই জেলে বসেই ধীরে ধীরে মাইকেলের পাঠানো ক্যাসেটগুলো থেকে লিখতে পড়তে শুরু করে সে। কারাগারের পাঠাগার ব্যবহার করা শুরু করে হানা।
একসময় হানার রিলিসিং ডেট আসে। কে তাকে নিয়ে যাবে? একমাত্র মাইকেলই তাকে ক্যাসেট পাঠায়। জেল কর্তৃপক্ষ তাকে ফোন করে। কিন্তু চাইলেই কি হানাকে নেয়া যায়। তার এখন সংসার আছে।
একটা কিশোরী মেয়ে আছে। তবুও মাইকেল জেলে যায়। দেখা করে হানার সঙ্গে। দীর্ঘ বছর পর একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে থাকে। মাইকেল যেন কিছুটা বিমর্ষ হয়ে পড়ে।
১৫ বছর বয়সে দেখা তার সেই নায়িকা আজ বৃদ্ধা, কুচকানো চামড়া। কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হয় মাইকেলের। হানার বুঝতে সেটা বাকি থাকে না।
যেদিন রিলিসিং ডেট। সেদিন মাইকেল হানাকে নিতে আসে।
কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস- মাইকেল হানাকে আর নিয়ে যেতে পারে না, কারণ হানা নিজের সেলে আত্মহত্যা করে। এভাবেই পরিসমাপ্তি ঘটে এক অসাধারণ সফল প্রেমের গল্পের। (প্রেমের সাফল্য নিহিত থাকে মিলনে নয়- বিরহে, যে প্রেম মিলনে শেষ হয়, সে প্রেম সফল নয়)
হানার ভূমিকায় চমৎকার অভিনয় দিয়ে মুগ্ধ করেছেন কেট উন্সলেট। এজন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী ক্যাটাগরিতে অস্কারও পেয়েছেন এবার। আরো অভিনয় করেছেন রালফ ফিনেস, ডেভিড ক্রস প্রমুখ।
ছবিটি পরিচালনা করেছেন স্টিফেন ড্যালড্রাই। বার্নার্ড স্লিঙ্ক-এর উপন্যাস থেকে ছবিটির চিত্রনাট্য তৈরী করেন ডেভিড হেয়ার।
আমার মতে ছবিটি আরো কয়েকটি শাখায় পুরষ্কার পেতে পারতো। এতো সুন্দর ছবি বহুদিন দেখিনি বলা যায়- নির্দ্বিধায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।