আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উৎপল কুমার বসুর কবিতা ও আমার আলোচনা

i'm lost and alone and i'm fair and i'm free you am what you is and i are who i be what i'm lacking in strength i make up for in smarts you keep your stability i'll keep my heart

উৎপল কুমার বসু কয়েকটি সামপ্রতিক কবিতা 1. গাছে উঠে বসে থাকি। ফল খাই। ব্যক্তিমানুষের দিকে আটি ছুঁড়ে মারি। নিচে হাহাকার পড়ে যায়। বেশ লাগে।

মাঝে মাঝে ধ্রুপদী সংগীত গাই। ওরা শোনে। বাদ্যযন্ত্র নিয়ে আসে। তাল দেয়। বোধ হয় ছবিও তুলেছে।

সেদিন এক গবেষক বাণী চাইল। ভাবলাম বলি : আমার জীবনই আমার বাণী। কিন্তু এটিও নাকি বলা হয়ে গেছে। অতএব নিজস্ব ভঙ্গিতে, কিছুটা বিকৃত ভাবে, বিড় বিড় করি- "দেখেছি পাহাড়। দেখে জটিল হয়েছি।

" 2. চলো মর্মরসাথী, চলো ভ্রমণে, কান্তারে, চলো বিদেশীর বেশে কেউ যেন কাউকে না চিনি- ফলিত জ্যোতিষরূপী, তুমি গানের দেবতা, তুমি জানো আমার লেখার খাতা অজ্ঞান অনিশ্চয়তায় ভরে গেছে, এসো নতুন প্রজন্ম হয়ে, এই ভুলভ্রান্তিময় লেখাগুলি পাঠ করো, অর্থ করো, পর্বতবাসীদের মতো বিশাল প্রান্তর প্রথম দেখায় অভিভূত হও। এ-অববাহিকা, বস্তুত জমির ঢাল, ধীরে ধীরে নদীতে নেমেছে। 3. ভোরবেলা পার্কে বেড়াতে গিয়ে কী দেখব কে জানে, এই ভয়ে রাত থেকে কাঁপি, ভুল পায়ে জুতো পরি, ছাতা নিতে মনেই থাকে না, হায় সেই দুর্ঘটনার জীপ-গাড়ি থানার সামনে তেমি্নই পড়ে আছে, মরচে ধরেছে, চাকায় বাতাস নেই, গাছ থেকে ঝুলন্ত দড়িটা ওখানে কীভাবে এল, ফাঁস নাকি, লকআপ-য়ের জানলা থেকে উড়ে আসে দুটো পাখি, ভাঙাচোরা এঞ্জিনে ওদের বাসা, আপাতত ডিমহীন, নীড়ে শাবক আসে নি, আজ ঝড়ের আঁধার মেঘে দিন শুরু, এলোমেলো বৃষ্টি নামছে। 4. চলো নামি দুর্গের বাগানে, খেলা করি। সূর্য বসে পাটে।

বিকেলের ভ্রমণকারীরা অস্তলীন। ঐখানে অবিনাশী পাথর রয়েছে-মূর্তি আছে যোদ্ধাদের এবং অনেক ঝুলে-থাকা টায়ার-দোলনা। ফিরে আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে বনটিয়া শহরের দিক থেকে। আরো নিচে বধ্যভূমি, ফাঁসিকাঠ, লোহার কয়েদ। শুনি আর্তনাদ-হাহাকার-পাখির উল্লাস।

ঐখানে আজ আমাদের খেলা ও খেলার গান। আমাদের খেলার লড়াই। 5. কত-না রুদ্ধ ক্রোধ বাক্সে লুকানো থাকে, বাঁধা থাকে বিছানায়। চেকিঙে পড়েনি ধরা, বৈদু্যতিন কৌশল এড়িয়ে গিয়েছে, বিমানবন্দর তারা অকাতরে পার হয়, এমনকি দেহরক্ষীদের বেষ্টনী এড়িয়ে বহু হতবাক প্রেসিডেন্ট-মুখ্যমন্ত্রী-নগরপালের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে, বলে-'অ্যাই, তোরা ভেবেছিসটা কী?' সৈন্যরা বৃথাই বন্দুক ছোঁড়ে, কৃপাণ নিজেরা লড়াই করে। ক্রোধ অদৃশ্যই থেকে যায়।

../../4 . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . উৎপলকুমার বসু : জন্ম. কলিকাতা 3 আগস্ট 1937; কলিকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ইন্ডিয়া ......... কবিতা সঞ্চালন উদযোগ: কিস্তি3: 12 নভেম্বর 2004 ------------------------------------- উৎপল কুমার বসুর কবিতা এই কবিতাগুলাতে রাজনৈতিক অসহায়তার কথা আছে মনে হয় । কবিতার নাম 'কয়েকটি সামপ্রতিক কবিতা' হওয়ার ফলে পড়ার সময় সামপ্রতিক পৃথিবীতে ঘটতে থাকা ঘটনা মনে আসে । যেমন প্রথম কবিতাতে আছে : গাছে উঠে বসে থাকি। ফল খাই। ব্যক্তিমানুষের দিকে আঁটি ছুঁড়ে মারি।

নিচে হাহাকার পড়ে যায়। বেশ লাগে। প্রথমেই মনে আসে আমেরিকার 'ওয়ার এগেইনস্ট টেররিজম'-এর কথা । বিশেষ করে 'ব্যক্তিমানুষ' আর 'হাহাকার' শব্দগুলা যুৎসই। এই অংশে ছোট ছোট শব্দের ছোট ছোট বাক্য থাকার ফলে একটা দৃঢ়তা প্রকাশ পায়-যা ক্ষমতার সাথে সমপর্কিত।

মনে হয় নিচের সমস্ত কার্যকলাপ গাছের উপরে আসীন ব্যক্তির কর্মকান্ডের ওপর নির্ভরশীল। এই জন্য সে যখন আঁটি ছুঁড়ে মারে যে কোনো এক ব্যক্তির নাম করে, নিচে ওই নিয়েই হাহাকার পরে। সে ধ্রুপদী সংগীত গাইলে অন্যদের শোনা ছাড়া উপায় নাই, তাই শোনে। কেউ কেউ আরেকটু কৃপা দৃষ্টি প্রার্থনা করার কারণে বাদ্যযন্ত্র সাথে এনে তাল দেয়। গাছের উপরে থাকলে এই সবই উপভোগের বিষয়।

আবার 'গাছে উঠে বসে থাকি' কথাটার মধ্যে একটা কৌতুক আছে। বানরের কথা মনে আসে। 1 থেকে 5 নাম্বার কবিতায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে আরেকটা ব্যাপার দেখলাম। প্রত্যেক স্তরে স্তরে স্বর পরিবর্তিত হয়েছে। প্রথম কবিতার কর্তৃত্বের স্বর দ্বিতীয়টাতে বদল হয়ে হয় আহ্বানের, অপেক্ষার।

প্রথম লাইন : চলো মর্মরসাথী, চলো ভ্রমণে, কান্তারে, চলো বিদেশীর বেশে কেউ যেন কাউকে না চিনি- এইখানে মর্মর শব্দটার কারণে একটা বাদশাহী সময়ের কথা মনে আসে। মনে আসে মর্মর প্রাসাদ, মর্মর মূর্তি। অতীত থেকে উঠে আসা সুখী আর অভিজাত অনুভূতি। বর্তমানে যার সমৃতিটুকুই অবশিষ্ট আছে কেবল। বর্তমান-যা অনিশ্চয়তা এবং ভুলভ্রান্তিতে ভরা, যে অপেক্ষা করে নতুন প্রজন্মের জন্য।

আবার দ্বিতীয় বাক্যের কারণে একটা কুয়াশা বা ধুলার আস্তরণের মতন অসপষ্টতা আসে। মনে হয় পূর্বজন্মের কোনো সমৃতি মনে আসতে আসতেও আসছে না। অথচ এই আধাআধি মনে হওয়ার কারণে অচেনা সময় ও চেনা চেনা লাগে আবার চেনাও কেমন অচেনা। সব মিলিয়ে নষ্টালজিক। কবিতার শেষ বাক্য : এ-অববাহিকা, বস্তুত জমির ঢাল, ধীরে ধীরে নদীতে নেমেছে।

সময় এবং যে কোন অবস্থানের ক্ষণস্থায়িত্বের কথা মনে করায়। এই লাইনটা পড়তে পড়তে একটা নজরুলগীতি মনে পরছিল আমার 'চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়...' তৃতীয় কবিতার স্বর ব্যক্তিগত। পুরা কবিতায় একটাই বাক্য আর মাঝে মাঝে কমা থাকার কারণে মনে হয় একজন কেউ আস্তে আস্তে চোখ খুলতে খুলতে পারিপার্শি্বক বোঝার চেষ্টা করছে। হায় সেই দুর্ঘটনার জীপ-গাড়ি থানার সামনে তেম্নিই পড়ে আছে, মরচে ধরেছে, চাকায় বাতাস নেই, এই কথাগুলাতে একটা উদাসীন স্থবিরতা সপষ্ট । 'হায়' শব্দটার কারণে বোঝা যায় এই সহবিরতা কষ্টের-ব্যক্তিমানুষের কাছে ।

চতুর্থ কবিতার স্বর সমালোচকের, পর্যবেকের। যদিও প্রথম লাইনে বলা হয়েছে : চলো নামি দুর্গের বাগানে, খেলা করি। 'চলো' শব্দে আহ্বান আছে। 'খেলা করি'-তে ক্রিয়া। তবু 'দুর্গ' শব্দটার কারণে একটা নিরাপত্তার ভাবও আসে।

দুর্গের বাগানে খেলা করাকে তাই সক্রিয় অংশগ্রহণ বলে মনে হয় না। মনে হয় এই আহ্বানে গোষ্ঠিবদ্ধ পর্যবেক্ষণের কথা আছে। আরো নিচে বধ্যভূমি, ফাঁসিকাঠ, লোহার কয়েদ। শুনি আর্তনাদ-হাহাকার-পাখির উল্লাস। এই বাক্যগুলিতে কোনো অনুভূতির প্রকাশ নাই।

শুধু যা আছে আর যা হচ্ছে তার খতিয়ান-বাইরে থেকে । শেষ কবিতায় প্রথম কবিতার একদম উল্টা অনুভূতি। প্রথম কবিতার স্বর কর্তৃত্বের, এইখানে গ্রহিতার। যা কিছু অন্য কেউ ঘটাচ্ছে, যে ঘটনার উপর গ্রহিতার কোনো হাতই নাই, তারই ফলশ্রুতিতে মেনে নিতে হয় বিমানবন্দরের কড়াকড়ি, সন্দিহান দৃষ্টি। আর তাই, বাক্সে এবং বিছানায় বাঁধা লুকানো রূদ্ধ ক্রোধ।

সৈন্যরা বৃথাই বন্দুক ছোঁড়ে, কৃপাণ নিজেরা লড়াই করে। ক্রোধ অদৃশ্যই থেকে যায়। শেষের এই কথাগুলার ভেতরে কবিতার অদৃশ্য ক্রোধের আড়ালে লুকানো অসহায়তা, হতাশা এবং কষ্ট সপষ্টতা পায়। লুনা রুশদী অকল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, 23/1/5 কবিসভা

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.