আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাঠ্যবই সংকট ও নোটবই

কবিতা ও যোগাযোগ

এই লেখাটি আজ ১৬ জানুয়ারি ২০০৯ শুক্রবার দৈনিক সমকালে উপসম্পাদকীয় হিসেবে ৪ নম্বর পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে। http://www.shamokal.com/details.php?nid=100775 আমার প্রিয় এই ব্লগের পাঠকদের জন্য এটি পুনর্প্রকাশ করছি। পাঠ্যবই সংকট ও নোটবই তপন বাগচী 'দৈনিক সমকাল' পাঠ্যবই সংকটের চারটি কারণ চিহ্নিত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে (১২.০১.০৯)। সাব্বির নেওয়াজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা চারটি কারণ হলো, ১. চাহিদার তুলনায় কম বই ছাপানোর সিদ্ধান্ত, ২. নোট-গাইড ব্যবসায়ীদের হাতে বই ছাপার সিংহভাগ কাজ চলে যাওয়া, ৩. সামর্থ্য না থাকার পরও গুটিকয়েক প্রকাশকের নামে-বেনামে বেশি কাজ নেওয়া ও ৪. কর্ণফুলী পেপার মিল (কেপিএম) থেকে নির্ধারিত সময়ে কাগজ না পাওয়া। এই পর্যবেক্ষণে কোনো খুঁত নেই।

আর কারণ যেহেতু সনাক্ত করা গেছে, এর সমাধানে শিক্ষামন্ত্রীর সদিচ্ছা যেহেতু প্রকাশিত হয়েছে, তাই এই সংকট নিরসন হবে এবং ভবিষ্যতে আর সংকট সৃষ্টি হবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ রোববার বাংলাবাজারে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রকৃত অবস্থা দেখে এসেছেন। আমরা জানি, নুরুল ইসলাম নাহিদ কেবল শিক্ষামন্ত্রী নন, তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক। শেখ হাসিনার আগের সরকারে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। এছাড়া সংবাদপত্রে তিনি যে সকল কলাম-নিবন্ধ লিখেছেন, তার অনেক অংশ জুড়ে শিক্ষা, শিক্ষাঙ্গন, শিক্ষানীতি প্রভৃতি বিষয়ে সুচিন্তিত অভিমত প্রকাশ পেয়েনে।

বাংলাদেশের শিক্ষা পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি পুরোপুরি ওয়াকিবহাল। শিক্ষাক্ষেত্রে যাবতীয় সংকট নিরসনের ব্যাপারে তাঁর সদিচ্ছার ঘাটতি থাকার কথা নয়। স্কুলপাঠ্য বইয়ের ক্ষেত্রে চলমান সংকট নিরসনে তাঁর ত্বরিৎ পদক্ষেপে স্কুলশিক্ষার্থীর অভিভাবক হিসেবে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি। এর পরেও, কয়েকটি কথা বলার প্রয়োজন অনুভব করছি। শিক্ষামন্ত্রী যখন বাংলাবাজার পৌঁছেন, তখন এই সংসট নিরসনের দাবিতে মিছিল হয়েছে।

এবং কারো কারো নাম ধরে বেশ কিছু স্লোগান উচ্চারিত হয়েছে। মিছিলটি ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। মন্ত্রী মহোদয়ের কানে এই স্লোগানের বাণী যদি হট্টগোলের কারণে না পৌঁছে থাকে, তাহলে পরে নিশ্চয়ই তিনি অন্যদের মুখে শুনে থাকবেন। অথবা খোঁজ নিলে এখনো জানতে পারবেন। ওই স্লোগানের দাবির মধ্যেই সংকট নিরসনের উপায় রয়েছে বলে আমাদের ধারণা।

অভিভাবক হিসেবে আমরা পাঠ্যবই যথাসময়ে এবং যথাদামে প্রাপ্তির বিষয়টি উপভোগ করতে চাই। মন্ত্রী হিসেবে তিনি উভয় পক্ষের স্বার্থ দেখেই সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু অল্প কয়েকজন ব্যাবসায়ীর স্বার্থের প্রতি নজর দিতে গিয়ে ব্যাপক জনসমাজের ভোগান্তি নিশ্চয়ই তাঁর কাম্য নয়। আমরা জানি যে, নির্দিষ্ট সংখ্যক পাঠ্যবই ছাপার কাজ এখনো শেষ হয়নি। কিন্তু নকল পাঠ্যবই বাজারে এলো কী করে? বাংলাবাজারে খোঁজ নিলেই এই সত্য বেরিয়ে আসবে।

বই পাওয়া যায় না এই অজুহাতে ক্রেতারা নির্ধারিত কমিশন তো দিচ্ছেনই না, বরং ২০ থেকে ৫০ ভাগ অতিরিক্ত দামে কিনতে বাধ্য করছেন। এই অভিযোগটি প্রমাণের জন্য ক্রেতা সেজে জিজ্ঞেস করলেই হয়। কিন্তু তাতে ধরা পড়বেন খুচরো বিক্রেতা। মূল হোতারা থেকে যাবেন পর্দার আড়ালেই। নিত্যপণ্যের দামবৃদ্ধি রোধে সরকার সিন্ডিকেট ভাঙার চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন।

পাঠ্যবই ছাপা ও বিতরণের সিন্ডিকেট ভাঙা তো তার চেয়ে অনেক সহজ কাজ। শিক্ষামন্ত্রী যদি এই জায়গায় হাত দেন, তাহলে আগামী বছর সংকট হওয়ার কোনো সুযোগই থাকবে না। সরকার নোট-গাইড বইকে নিরুৎসাহিত করে না। কিন্তু নোট-গাইড বই বাজারে চলছে প্রকাশ্যেই। তার চেয়ে বড় সমস্যা হলো, নোট-গাইড বইয়ের বিক্রেতারা যখন টেক্সটবই বিক্রি করার দায়িত্ব পান, তখন তারা উভয় দিক থেকেই মুনাফা অর্জনের সুযোগ নেন।

নোট-গাইড কিনলে টেক্সটবইয়ের ক্ষেত্রে কমিশন বেশি দেয়ার প্রলোভন দেয়া হচ্ছে। তার মানে টেক্সটবইয়ে যেটুকু বেশি কমিশন দিচ্ছে, নোট-গাইডের বই থেকে তার অনেক বেশি মুনাফা পুষিয়ে নিচ্ছে। সরকার চাইলে এই সিন্ডিকেটও ভেঙে দিতে পারেন। আমরা কারো ব্যবসায় কিংবা রুজির প্রতি আঘাত করার কথা বলছি না। বলছি ব্যবসার নামে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করার বিষয়ে।

এই সংকট তো বেনিয়াদের বানানো। নোট-গাইড বিক্রির কৌশল হিসেবে এই সংকট বানানো হয়। ছাপার কাগজ পেতে দেরি হলে, নকল বই ছাপার কাগজ া ঠিকমতো পাওয়া যায় কী করে! বিষয়টি কি তদন্তের দাবি রাখে না! অভিযোগ যখন উঠেছে, আশা করি শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় বিষয়টি ভেবে দেখবেন। এই সুযোগে শিক্ষামন্ত্রীকে সৃজনশীল বইয়ের কথাও একটু জানিয়ে রাখা দরকার। আমরা জানি, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী একজন লেখক।

আমি ছাত্রজীবনে তাঁর লেখা বই পড়েছি। তাঁর বই পড়ে রাজনীতি করা শিখেছি। সংগঠন করার কৌশল শিখেছি। একসময় নিজেও লেখালেখির চেষ্টা করছি। আওয়ামী লীগের আগের আমলে শিক্ষা মন্ত্রালয়ের মাধ্যমে সৃজনশীল বই ক্রয় করা হতো।

ওই বই দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের গ্রন্থাগারে পাঠানো হতো। অত্যন্ত শুভ উদ্যোগ। কিন্তু উদ্যোগটি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। এর একটি কারণ হতে পারে, বইয়ের নামে বাজে বই গছিয়ে দেয়ার ফলে দলাদলি সৃষ্টি হওয়া। বই নির্বাচন কমিটিতে যারা থাকেন, তাঁদেরকে ‘সন্তুষ্ট’ করার পদ্ধতিও চালু হয়েছিল।

অনেক অপ্রয়োজনীয় ও বাজে বই সরবরাহ করা হয়েছে। সৃজনশীল বইক্রয় প্রক্রিয়াটি আবার চালু করা হোক এবং তাতে যেন প্রকৃতার্থেই 'সৃজনশীল' বই ক্রয়ের ব্যবস্থা থাকে। দল ও পদ ব্যবহার করে যারা বইয়ের প্রচ্ছদে নাম ব্যবহার করে সরবরাহের পথ সুগম করেন, তাঁরা আর যা-ই হোন, লেখক নন আদৌ। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী একজন লেখক হিসেবেই এই বিষয়টির প্রতি নজর দিবেন বলে আমাদের আন্তরিক প্রত্যাশা। বাংলাবাজারে ঝটিকা অভিযানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন।

তাঁরা হয়তো সতর্ক হবেন, যাতে সকলের নজর এড়িয়ে সিন্ডিকেট রক্ষা করা যায়, মাননীয় মন্ত্রী সেব্যাপারে সতর্ক থাকলেই সকল সমস্যার সমাধান হতে পারে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.