munirshamim@gmail.com
এক.
চারদলীয় জোটের বিপুল ভরাডুবির পরও বেগম খালেদা জিয়া তার প্রতিপক্ষকে ছাপিয়ে যেতে পারতেন। গড়ে তুলতে পারতেন তাঁর ও দলের নতুন গ্রহণযোগ্যতা। নতুন ইমেজ। অভিনন্দিত হতে পারতেন সকলের কাছে। যে বদনামটি এতদিন ধরে তার প্রতিপক্ষের ছিল সেটিকে প্রতিষ্ঠিত করে তিনি যে সে রকম নন সেটি প্রমাণ করতে পারতেন।
কিন্তু সে মোক্ষম সুযোগটি হাতছাড়া করলেন। আমার ব্যক্তিগত ধারণা এ সুযোগটিও বিএনপির জন্য হাতছাড়া হলো পুরনো চাটুকারদের কারণে। যারা বেশির ভাগ সময় প্রকৃত সত্যটা দলের প্রধানদের বুঝতে দেয় না। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে ভুল তথ্য পরিবেশন করে। আর সে একই ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার কারণে বেগম খালেদা জিয়া এমন সুযোগের সম্ভাব্য ফলটি নিজের ঘরে তুলতে ব্যর্থ হলেন।
আমি বলছিলাম নির্বাচন নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে। গতকাল যখন জানতে পারলাম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা শুরু হয়েছে তখন অফিস থেকে ফিরে যথেষ্ঠ ক্লান্ত থাকার পরও গভীর আগ্রহ নিয়ে রাত জেগে বসেছিলাম। শুধু চারদলীয় জোট নেত্রীর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া শোনার জন্য। অন্য অনেকের মতো আমার মন বলছিল খালেদা জিয়া আ’লীগের পথ অনুসরণ করবেন না। বরং রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দেবেন।
তাঁর প্রতিপক্ষকে অভিনন্দন জানাবেন। নির্বাচনের ফলাফলকে স্বাগত জানাবেন। যার মধ্য দিয়ে গণ রায় এর প্রতি শ্রদ্ধা এবং রাজনৈতিক যুদ্ধে আপাতত হেরে যাওয়াকে মেনে নেয়ার মতো বহু প্রতিক্ষিত বিকল্প রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি মাইল ফলক তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে যুক্ত হবে। যেটি তিনি আগামীতে অত্যন্ত সফলভাবে ব্যবহার করতে সক্ষম হবেন। কিন্তু তিনি সে পথে গেলেন না।
অথবা তাঁকে যেতে দিল না তাঁর আশ-পাশের ব্যর্থ চাটুকার সৈনিকরা। ফলে নির্বাচন নিয়ে তাঁর কথিত ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে জনগণ হিসেবে আমরা আবারও শংকিত হলাম। এ শংকার কারণগুলো বহুবিধ।
আমার ব্যক্তিগত ধারণা প্রকাশ্য রাজনৈতিক বক্তব্যের বাইরে বিএনপির সক্রিয়া কর্মী-সমর্থকরাও বিশ্বাস করবেন না যে, নির্বাচনে জনরায় প্রতিফলিত হয়নি। অথবা কারচুপির মাধ্যমে চারদলীয় জোটকে হারিয়ে দেয়া হয়েছে।
সুতরাং ভাল হতো যদি বিএনপি নেত্রী পুরনো রাজনৈতিক সংস্কৃতিটাকে ভেঙ্গে দিতেন। সাদরে গ্রহণ করতেন জনআকাঙ্খার প্রতিফলন। এতে আত্ম-বিশ্লেষণের পথটি খুব বেশি করে উন্মোচিত হতো। যা প্রকারন্তরে আমাদের সামগ্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতিকেতো সাহায্য করতোই, কিন্তু বেশি সমৃদ্ধ করতো বিএনপিকে।
দুই.
বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে এটি প্রমাণিত যে দু নেত্রী বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন পর্যন্ত অনিবার্য।
এবারের নির্বাচনের ফলাফলেও সেটি প্রমাণিত। কিন্তু একই সাথে রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির ধারবাহিকতার জন্যও অনেকের অঙুলি তাদের দিকে ধাবিত হয়। এ রকম অপ্রত্যাশিত আঙ্গুলগুলোও ভেঙে দিতে পারতেন বেগম খালেদা জিয়া তার প্রতিপক্ষকে অভিনন্দন জানিয়ে। দীর্ঘ প্রত্যাশার পর গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে যে নতুন অভিসার শুরু হয়েছে নির্বাচনের মাধ্যমে সেখানে সাধারণ ভোটার হিসেবে আমরা শংকামুক্ত হয়ে হাসিটি হাসতে পারতাম। বলতে পারতাম অনির্বাচিত সরকার ব্যবস্থার বিপরীতে নির্বাচিত সরকারের পক্ষে যে জন প্রত্যাশা, যে জন প্রত্যাশার ফল হিসেবেই দু নেত্রীই পুনপৌনিকভাবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন, তার প্রতি তাঁরা শ্রদ্ধাশীল।
গণতান্ত্রিক উত্তরণে আমরা আবেগে আপ্লুত হতে পারতাম।
আমরা জানি না বিএনপির ভবিষ্যত রাজনৈতিক কৌশল কী হবে। কিন্তু একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে মনে করি গতকালের বিবৃতির পরও এখনও সময় ফুরিয়ে যায়নি। এখনও বিএনপি নেত্রী নির্বাচনের ফলাফলকে অভিনন্দন জানিয়ে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরির একটি বড় কৃতিত্ব নিজ ঘরে তুলে নিতে পারেন। না হয় নির্বাচন সুসুষ্ঠু হয়নি এ রকম একটি অসত্য পরিবেশনের জন্য হাজারও অসত্যের নির্মাণ কঠিন হয়ে পড়বে।
যেটি বিএনপির জন্য, নতুন সরকারের জন্য এবং সাধারণ জনগণ হিসেবে আমাদের জন্য, আমাদের দেশের জন্য অসামান্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সর্বপোরী এটি বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়াকে সাহায্য করবে। এটি কোন জনপ্রিয় নেত্রীর কাছে জন প্রতাশ্যা হতে পারে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।