অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মনে করেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক নির্দোষ হয়ে থাকলে রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে বক্তব্য না দিয়ে দেশে এসে আইনগতভাবে মামলা মোকাবেলা করতেন।
মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ব্রিটিশ সরকারের অনুরোধে আমরা এদেশ থেকে তাদের আসামিকে ফেরত পাঠিয়েছি। সুতরাং আমরা আশা করব, আমাদের অনুরোধেও তারা যে কোনো আসামিকে ফেরত পাঠাবে। চুক্তি না থাকলেও তোরা যখন অনুরোধ করেছে, আমরা পাঠিয়েছি। আমরা সেটাকে সম্মান দেখিয়েছি।
... আমরাও সেটাই আশা করি, তারা পাঠাবে। ”
এক ডজনেরও বেশি দুর্নীতি মামলার আসামি তারেক পাঁচ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। গত ২০ মে লন্ডনে বিএনপির এক সভায় যোগ দিয়ে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানতে আওয়ামী লীগের ওপর চাপ দেয়ার জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান।
এরপর দেশে তার ওই বক্তব্যের সমালোচনায় মুখর হন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। আইন প্রতিমন্ত্রী এক সভায় বলেন, তারেক রহমানকে দেশে আনতে যা যা করার দরকার, তার সবই করা হবে।
এরপর দুদকের করা এক মুদ্রা পাচার মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেককে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে পরোয়ানা জারি করে ঢাকার আদালত।
‘দুর্নীতিবাজ’ বলায় এবং ‘লন্ডনে বসে ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ আনায় ইতোমধ্যে পরিবেশমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামকে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন তারেক।
তাকে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ সরকার বা অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর থেকে যুক্তরাজ্য সরকারকে ‘আনুষ্ঠানিক অনুরোধ’ জানানো হবে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, “আদালত যেখানে নির্দেশ দিয়েছে সেখানে আর কোনো অনুরোধের দরকার আছে?”
ব্রিটেন থেকে তারেককে ফিরিয়ে আনা সম্ভব কি-না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ইন্টারপোলকে অনুরোধ করা হবে। তার পর ইন্টারপোল কী পদক্ষেপ নেয় বা তারেক কীভাবে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করেন এরকম নানা বিষয়ের ওপর বিষয়টি নির্ভর করছে।
তারেক ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন- এমন খবরের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মাহবুবে আলম বলেন, “রাজনৈতিক আশ্রয় বৃটিশ সরকার গ্রহণ করবেন কি-না, সেটাতো আমার জানার কথা নয়।
”
বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে ফেরত পাঠানো ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক ব্যক্তি হজে পাঠানোর কথা বলে কিছু মানুষের টাকা আত্মসাত করে বাংলাদেশে চলে আসে। এরপর ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ওই ব্যক্তিকে এবং টাকা ফেরত পাঠানো হয়।
“তারা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বলেছেন, আমি এখানকার মেশিনারিকে ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করেছি। যার মাধ্যমে ওই ব্যক্তিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ”
তবে ওই ব্যক্তির নাম বা টাকার পরিমাণ সাংবাদিকদের সামনে ‘মনে করতে পারেননি’ মাহবুবে আলম।
অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পর ২০০৯ বা ২০১০ সালে ওই ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ওই ব্যক্তি বৃটেন ও বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক ছিলেন।
আইনের দৃষ্টিতে তারেক এখন পলাতক- এমন মন্তব্য করে মাহবুবে আলম বলেন, “আদালত যখন কারো বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করে তখন সে হাজির না হলেই পলাতক। এ কারণে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোনো আইনজীবী নিয়োগ করা হয়নি। পলাতক আসামির পক্ষে আইনজীবী দাঁড়াতে পারেন না। ”
তারেককে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সাংবাদিকদের একের পর এক প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল এক পর্যায়ে বলেন, “এটাতো একটা গুরুত্বপূর্ণ খবর না।
এটা নিয়ে এতো কিছু বলছেন কেন? সাভারের দুর্যোগে যারা আছে, সেটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
“আমি সাধারণ অপরাধী ও তাকে (তারেক) আলাদা করে দেখছি না। ... সে যদি মনে করে যে অপরাধ করেনি, তার উচিত আদালতে এসে মামলা ফেইস করা। ... তিনি এটা করছেন না কেন?”
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অর্থ পাচার মামলায় তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুন আসামি। যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই কর্মকর্তা এসে এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন।
আসামি পক্ষ চেষ্টা করেছে যাতে এফবিআই কর্মকর্তা সাক্ষ্য না দিতে পারেন। বিচার কাজ বিলম্বিত করতে তারেকের আইনজীবীরা ওইদিন আদালত বর্জন করেন।
তারেকের বিদেশযাত্রা এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, তারেক ইংল্যান্ডে যান প্যারোলে মুক্তি পেয়ে। এরপর কয়েক দফা প্যারোলের মেয়াদ বাড়ানো হয়। দুদকের মুদ্রা পাচার মামলার কার্যক্রম শুরুর পর রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে জানায়, সরকার আর প্যারোলের মেয়াদ বাড়াবে না।
এরপর আদালত তারেককে হাজির হতে নোটিশ দিলেও তিনি তা না করায় পরোয়ারা জারির আদেশ হয়।
“এখন তারেক রহমানের আইনজীবীরা বলছেন, সুপ্রিম কোর্ট থেকে তিনি জামিন নিয়ে গেছেন। সুপ্রিম কোর্ট থেকে যদি জামিন কার্যকরিই থাকে তাহলে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে নিম্ন আদালতের ওয়ারেন্টের বিষয়ে আপত্তি দিতেন। এগুলো ঠিক কথা না। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা আছে।
এসব মামলায় তারা বিভিন্ন সময়ে জামিন নিয়েছেন। ”
মামলা নিয়ে রাজনৈতিক মঞ্চে বক্তব্য দেয়া অনভিপ্রেত বলেও মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।