রশনি মুক্তি
পুনরুত্থান দিবসে শেষ বিচার চলছে। ফেরেশতারা এক এক করে ডাকছেন মানুষজনকে আর জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। সমস্ত জবানবন্দী ও সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সৃষ্টিকর্তা রায় ঘোষণা করছেন, কে কে যাবে স্বর্গে আর কে কে যাবে নরকে। কেবল বাংলাদেশিদের জন্য এ নিয়মের ব্যতিক্রম। সৃষ্টিকর্তা ফেরেশতাদের নির্দেশ দিলেন, জিজ্ঞাসাবাদ করে অহেতুক সময় নষ্ট করার কোন প্রয়োজন নেই, কারণ বাংলাদেশিদের স্বর্গে যাবার কোন যোগ্যতা নেই, তারা প্রত্যেকেই নরকে যাচ্ছে।
স্বর্গে যাবার যোগ্যতা তারা প্রমাণ করতে পারবে না, তাই সাক্ষ্য গ্রহণের দরকার নেই। ফেরেশতারা অবাক হয়ে এর কারণ জানতে চাইলেন স্রষ্টার কাছে। স্রষ্টা বললেন, “বাংলাদেশিরা এমন এক জাতি যারা হাসতে হাসতে তাদের পিতাকে-ভাইকে হত্যা করতে পারে, মাকে-বোনকে অন্যের লালসার বলি করতে পারে। খুন, ধর্ষণ, লুঠতরাজ, অগ্নিসংযোগ, বিশ্বাসঘাতকতা হেন কোন অপরাধ নাই যা তারা নির্দ্বিধায় করতে পারে না। " ফেরেশতারা আবারও অবাক হয়ে বললেন, “প্রভু, এসব অপরাধ ত অন্য জাতিরাও করেছে অনেক সময়।
' প্রভু মৃদু হেসে বললেন, “ হ্যা, অন্যেরাও করে। কিন্তু একটি জাতির মধ্যে যারা এসব অন্যায় করে তাদেরকে মৃত্যুদণ্ডের মত কঠিন শাস্তি দেয় জাতির অন্য ভালো মানুষেরা। আর বাংলাদেশিরা পাপীদের ত মৃত্যুদণ্ড দেয়ই না বরং যাবজ্জীবন দিয়ে নিজেদের পাপের ঘড়া আরও পরিপূর্ণ করে তোলে। কেননা যাবজ্জীবন কোন শাস্তি নয় বরং সহজ সরল আমজনতার কষ্টার্জিত অর্থ থেকে আগত রাষ্ট্রীয় আয়ে অপরাধীকে আরাম আয়েশের সাথে দিনের পর দিন বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানো। যেখানে সাধারণ মানুষকে পেটের ভাত জোটাতে মুখে রক্ত তুলতে হয়, রোগে ভুগে চিকিৎসাভাবে মারা যায়, পিকেটারদের মার খেয়ে শেয়াল-কুকুরের মত মরে পড়ে থাকে রাস্তায়, প্রচন্ড শীত কিংবা দারুণ বর্ষায় খোলা আকাশের নিচে দিন কাটে নিরাপত্তাহীনতায়, সেখানে এসব পাপীরা জেলে গিয়ে আরাম করে পেট পুরে ভালো খাবার খায়, মাঝে মাঝে হেলথ চেকআপ করায়, পত্রিকা বা বিভিন্ন বই পড়ে অথবা টিভি দেখে আরামে দিন কাটায়, শীতেরও কষ্ট নাই, বর্ষারও কষ্ট নাই, গরমেও আরাম, জেলের ভেতর না আছে পিকেটারদের মার, না আছে নিরাপত্তাহীনতা।
এতসবের জন্য রোজগারের কোন চিন্তাও নাই, টাকা দেবে ত অই সাধারণ মানুষগুলোই। দুনিয়াতেই এরা স্বর্গের সুখ ভোগ করে ফেলেছে, এখন আর এদের আবারও স্বর্গে জায়গা দেবার দরকার নাই,অপচয়। " ফেরেশতারা আবার প্রশ্ন করল, “কিন্তু প্রভু, এই সাধারণ মানুষরা?” প্রভুর উত্তর, “ওরাও স্বর্গের অধিকার হারিয়েছে কারণ অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা তারে যেন তৃণসম দহে। আমি ত ওদের পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে পাঠিয়েছিলাম, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। বুদ্ধি দিয়েছিলাম চিন্তার জন্য, হৃদয় দিয়েছিলাম উপলব্ধির জন্য, ভাষা দিয়েছিলাম প্রতিবাদের জন্য, শক্তি দিয়েছিলাম পাপ প্রতিরোধের জন্য।
আমি ত ওদেরকে অবলা মহেশ করে পৃথিবীতে পাঠাই নি যে কেউ ওদের বেঁধে রাখলো আর ওরা দাঁড়িয়ে থাকলো, কেউ বেঁচে দিলো আর বিক্রি হয়ে গেল, কেউ গালি দিল আর মুখ বুজে সইল, কেউ আঘাত করল আর ঠাস করে পড়ে মরে গেল। " ফেরেশতারা তখন সব বাংলাদেশিকে একটা লাইনে দাঁড় করিয়ে কোন জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই নরকে ঢুকিয়ে দিল।
তাই আসুন, আমরা আমজনতারা প্রভুর কাছে প্রার্থনা করি, “হে প্রভু, তুমি আমাদের সব কিছু মুখ বুজে সইবার ধৈর্য না দিয়ে বরং অন্যায়ের প্রতিবাদ-প্রতিরোধের সাহস, শক্তি ও আত্মসম্মানবোধ দাও। " দাওয়া ছাড়া দোয়ায় কাজ হয়না, তাই এবার সবাই আসুন দোয়া শেষে দাওয়ার চেষ্টায় লেগে যাই। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।