আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনাস্থা

আমি লিখি মানুষের কথা,মানুষ পড়ে না। তারা হাসে। তাদের হাসির জন্যে আমি লিখি 'সবকিছু হাসির বিষয় নয়' তারা হাসে না! তবু আমি লিখব।

আশাপুর পঞ্চায়েতে অনাস্থা। আগামী সোমবার ভোট।

পালিয়ে বেড়াচ্ছে রঙিলা খাতুন। রঙিলা খাতুনকে খুঁজে ফিরছে বাম জোটের দলগুলি। বিরোধী দল গুলিও বসে নেই। পরিস্থিতি এমন রঙিলা য়ে দিকে ভোট দেবে তাদের মেজরিটি। সংবাদপত্রে অ্যাড দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।

রঙিলা খাতুন। উচ্চতা পাঁচ ফুট দু-ইঞ্চি। বয়স ছত্রিশ। গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। মুখমন্ডল গোলাকার।

মাথার চুল কালো এবং কোঁকড়ানো। যে কোন পুরুষের মন খারাপ করে দেওয়ার মত গড়ন। হারিয়ে যাওয়ার সময় তার পরনে ছিল ফুল-ছাপানো হালকা নীল রঙের শাড়ি। কালো ব্লাউজ। চোখে চশমা।

রঙিলার বাড়ির সামনে একের পর এক মটোর সাইকেল এসে থামছে। হর্ণ বাজাচ্ছে চালক,পিপ-পিপিক। সেই শব্দে বিরক্ত হয়ে বাইরে বের হয় রঙিলার নাইনে পড়া ছেলে জিশান। বাইক চালক প্রশ্ন করে--তোর মা ফেরেনি? --না। --ফিরলে বলিস আমরা এসেছিলাম।

বলে বাইকে স্টার্ট দেয় চালক। একটু পরে আসে বিরোধী দলের বাইক। সংলাপ সেই একই। রক্তশূন্য মুখে বাড়ি ঢোকে জিশান। তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে ক্লাশ ফাইভে পড়া জান্নাত।

বলে-- ভাইয়া,মা কোথায় গেল-রে? রঙিলার বাড়িতেই তার বহু শ্রমে গড়ে ওঠা সেলাই কারখানা। বিধবা,স্বামী-পরিতক্তা,দুঃস্থ মেয়েরা সেখানে কাজ করে। উপার্জন করে। স্বাবলম্বী হয়। জিশানের মত তাদেরও চিন্তা,রঙিলা গেল কোথায়,মার্ডার হয়নি তো? রঙিলার অনেককিছুতেই অবাক হয় গ্রামের মানুষ।

ফারহাদ যখন কবরে স্থায়ী হলো,অনেকেই বলেছিল,ওষুধ-পানিতেই তো জমিজমা সব ঘুচে গেল। এখন ওই ছেলেমেয়ে দুটিকে মানুষ করতে এবার রঙিলাকে ফের কনে সাজতে হবে,নইলে শরীরকেই মূলধন করতে হবে। শরীরকেই মূলধন করেছে রঙিলা,বেছে নিয়েছে কায়িক পরিশ্রমের পথ। সেলাইয়ের কাজ জানত, বিয়ের পর থেকে সেলাই মেশিনটা পড়ে ছিল,সেটাকেই আঁকড়ে ধরেছিল সে। আজ তার অধীনে ছত্রিশজন মেয়ে কাজ করে,যাদের দেখে কিছু লোকের বুক টাটায়।

তবে রঙিলার পঞ্চায়েত প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়াটা সবচেয়ে আশ্চর্যের। নির্দল প্রার্থীকে হিসেবের মধ্যেই রাখেনি কোন দল। রগড় হলো ভোটের দিন। হাইস্কুল মাঠে সেদিন ভোটের ভিড়। পিঁপড়ের সারির মত লাইন দিয়েছে ভোটাররা।

কি-একটা তুচ্ছ কারণে দুই-দলের সমর্থকদের মধ্যে শুরু হলো কথা-কাটাকাটি। সেটা ক্রমে হাতাহাতিতে গেল। দুম-দাম বোমা ফাটলো। মারাত্মক আহত হয়ে হাসপাতালে গেল কয়েকজন। অক্ষতরা ছুটে পালাল নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে।

মহিলাদের লাইনে দাঁড়িয়ে আছে রঙিলা,পেছনে তার কারখানার মেয়েরা। প্রিসাইডিং অফিসার বললেন--এখন আর ভোট নেওয়া হবে না। --কেন?রঙিলার প্রশ্ন। --দেখছেন না,ওখানে কত গন্ডোগোল। রঙিলা শিক্ষিত এবং যুক্তিবাদী।

বলল--গন্ডোগোল হচ্ছে আপনার সীমানা থেকে অনেক দূরে। তাছাড়া বুথও দখল হয়নি। আমরা ভোট দিতে এসেছি,ভোট দিয়ে বাড়ি যাব। কারখানার মেয়েরা সমস্বরে তা সমর্থন করল। তাদের পাশে এসে দাঁড়ালো দু-দলের কাছে ঘা-খাওয়া কিছু মানুষ।

ভোট হলো। যুযধান দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকেরা হাসপাতালের বেডগুলিতে পাশাপাশি শুয়ে শুনল,চরমতম সেই দুঃসংবাদ---ভোটে জয়ী হয়েছে রঙিলা খাতুন। পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন করল বামদলগুলির জোট। একমাত্র নির্বাচিত নির্দল প্রতিনিধি রঙিলাকে গুরুত্ব দিলো না বিরোধীরাও। নামেই প্রতিনিধি,মিটিংয়ের চিঠিও তার কাছে আসেনি কোনদিন।

এখন চাকা ঘুরে গেছে। বামজোটের শরিক দলের দুজন যোগ দিয়েছে বিরোধী পক্ষে। তবু দুই পক্ষের শক্তি সমান। রঙিলা যাকে সমর্থন করবে ক্ষমতা দখল করবে তারা। রঙিলাকে তাই খুঁজে ফিরছে ক্ষমতালোভী দুই পক্ষ।

পঞ্চায়েত-প্রধান আরিফউদ্দিনের বয়স তেষট্টি বছর। নিয়মিত নামাজ-রোজা করেন। অন্যদিকে জমি-বাড়ি-ট্রাক্টরে ছেলেদের সমৃদ্ধ করেন। নিন্দুকেরা বলে,তা নাকি সব পঞ্চায়েতের টাকায়! সেই প্রধান সাহেবের এখন পেটে বায়ু জমছে অনবরত। বারম্বার নিঃস্বরণ করেও শেষ হচ্ছে না।

টাঁকে ঘাম জমছে হরদম। বালতি-বালতি পানি ঢেলে মাথা এবং পেট ঠান্ডার রাখার ব্যর্থ প্রয়াস করছেন তিনি। মুড়ি-মুড়কির মত ওষুধ গিলছেন,ফল পাচ্ছেন না। টেলিফোনের রিং বাজলেই ভেজা শরীর নিয়ে সেদিকে ছুটছেন প্রধান-সাহেব। ফোন তুলছেন, এই বুঝি রঙিলার ফোন, ভেবে।

নয়। বায়ু নিঃস্বরণ করে রিসিভার রাখছেন। তবু আশা ছাড়ছেন না। সহাস্যে পারিষদদের বলছেন--আজ অব্দি আমি স্বপ্নে যা-যা দেখেছি,সব সত্যি হয়েছে। এবারও হবে,তোরা দেখিস,রঙিলা আমাকে ফোন করবে।

সত্যি-সত্যিই তাই,একসময় টেলিফোনের রিং বাজল,রিসিভার তুললেন প্রধান-সাহেব। শুনলেন, রঙিলা বলছে--হ্যালো। (আগামী পোস্টে পড়ুন। )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.