অনেকবার চেষ্টা করেছি কলম আর ক্যামেরার দাসত্ব থেকে বের হয়ে যেতে..কিন্তু পারি নি....পারবো কিনা জানি না---এভাবেই হয়তো চলবে...
ব্রিটিশ কাউন্সিলের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ থেকে ৪জন সাংবাদিক লন্ডন এসেছেন গত ২৫অক্টোবর শনিবার। তাদের সাথে ব্যক্তিগতভাবেই দেখা করলাম পরের দিনই। আনুষ্ঠানিকভাবে মতবিনিময় সভার আয়োজন করলো লন্ডন-বাংলা প্রেস ক্লাবে। সৌভাগ্যক্রমে তাদের মধ্যে আমার লেখালেখির হাতে খড়ি চট্টগামের দৈনিক আজাদীর ফিচার সম্পাদক প্রবীর বড়–য়াও এসেছেন। তো রাত ৯টার দিকে মতবিনিময় শেষে ভোজনপর্ব শুরু হলো।
ঠিক সেই মুহূর্তেই বেজে উঠলো নিত্যসঙ্গী মুঠোফোনটি। নাম্বারটি হাইডেন করা ছিল বিধায় মনে করেছিলাম বাংলাদেশ থেকে কেউ হয়তো ফোন করেছে। কিন্তু না তখন তো দেশে সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, এত রাতে কল করার তো তেমন বিশেষ কেউ নেই। তখনই আবার মনে করলাম হয়তো কোন দুসংবাদ। তাড়াতাড়ি করেই রিসিভ করলাম।
অপরপ্রান্তে থেকে বললো, মেহেদী বলছি। অনেকক্ষণ ভেবে চিন্তে বললাম, চিনতে পারছি না। তখনই মনে পড়লো লন্ডন প্রবাসী সাংবাদিক শামছুল আলম মেহেদী ভাইয়ের কথা। তার সাথে মোবাইলে কথা হয়েছে অনেকবার, কিন্তু দেখা হয়নি এখনো। তিনিই বললেন, দৈনিক মানবজমিন এর আজকের প্রথম পাতার হাজারীর নিউজটি একটু দেখার জন্য।
গাফফার চৌধুরীকে নিয়ে কিছু একটা আছে।
আগেই বলে রাখছি, প্রবাসের মাটিতে আমি খুবই নবীন। দেশে থাকার সময়েও আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীকে নিয়ে কৌতুহলের অন্ত ছিল না। এখানে এসেও তার কমতি হয় নি কোন ভাবেই। দু একবার তাকে দেখেছি, কিন্তু কথা বলা হয়ে উঠেনি।
মজার ব্যাপার হলো, আমি এখন যে পত্রিকায় ফিচার এডিটর হিসেবে কাজ করছি, তিনি সেই পত্রিকার এক সময়ে সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
যা হোক সেদিন বাসায় ফিরলাম রাত ১টার দিকে, তখন পত্রিকার পাতায় চোখ বুলানোর মতো ক্ষমতা যেন নেই। রাজ্যের সকল ঘুম যেন ভর করেছে চোখ দুটোতে। সকালেই উঠেই বসে পড়লাম ল্যাপটপের সামনে, প্রথমে ক্লিক করলাম মানবজমিন ওয়েবসাইটে। ফেনীর প্রতিনিধির পাঠানো হাজারীর সংবাদটি পড়লাম।
ভালোই লাগলো জেনে যে, এই মহান (!) ব্যাক্তির সাথে আমাদের অনেক আদর্শবান ব্যক্তির দহরম মহরম সম্পর্ক রয়েছেন। থাকার কথাই তো। কারণ, এক সময় যারা জয়নাল হাজারী আর্শীবাদপুষ্ট তারা কি ভুলে যেতে পারে তাকে?
সংবাদটির শেষ প্রান্তে এসে দৃষ্টি কেমন যেন নড়তেই চায় না। সেখানে হাজারীর নিজের ভাষ্যমতে লেখা ছিল, ‘মনে হয়, গাফফার চৌধুরী কেবল কথা নয়, দু’ তিন বার দেখা হওয়ার কথাও অস্বীকার করবেন না। কারণ উনি সরকারের ধরা ছোয়ার বাইরে।
”
অবাক হলাম- দেশপ্রেমিক, আদর্শবান, সাহসী এই কলম সৈনিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী গডফাদার খ্যাত হাজারীর সাথে বেশ কয়েকবার দেখা হওয়ার কথায়। যেখানে গাফ্ফার চৌধুরীর কলামের জন্য প্রতিনিয়ত দেশের মানুষ উন্মুখ হয়ে বসে থাকে। সেখানে কিনা স্বয়ং এই ব্যক্তিটিই গোপনে দেখা করেছে ফেনীর আতঙ্ক জয়নাল হাজারীর সাথে যাকে এখন হন্যে হয়ে খুজছে ইন্টারপোল। গাফফার চৌধুরী হয়তো ভুলে গেছেন এই হাজারী সাংবাদিক টিপুর কি অবস্থা করেছিল?
মনের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, কিভাবে উত্থান হলো হাজারীদের মতো ব্যক্তিদের? ঘুরপাকের অন্তরালে উত্তর আসে একটাই.... আগাচৌর মতো মহান ব্যক্তিদের কল্যাণেই আজ এরা আলোচিত। অনেকদিন ধরেই জয়নাল হাজারী একটি ওয়েবসাইটে বিভিন্ন লেখা ও সংবাদ, এমনকি তার ভাষণও প্রচার করে যাচ্ছে।
সেখানে এক কোনে ঠাই পেয়েছিল আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর কলাম। মনে করেছিলাম, তা হয়তো গাফ্ফার চৌধুরী অজান্তেই। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে না, এতসব মহারতি মধ্যমণি হচ্ছে লন্ডনপ্রবাসী এই বুদ্ধিজীবী। যিনি একসময়ে লিখেছিলেন, “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্র“য়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি”। শুধু এই একটি গানই কি তার শেষ সম্বল? মনে হয়তো তাই, আর তাই বলেই দেশের একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়া কিংবা আর্শীবাদপুষ্ট এই আগাচৌ সত্যকে প্রবাহিত করতে পারে অন্যদিকে।
বেশ কয়েক মাস আগে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও শেখ হাসিনা একই সময়ে লন্ডনে এসেছিলেন, তখন পুরো লন্ডন শহরময় আলোচিত বিষয় ছিল এই দুই নেতা-নেত্রীর গোপন বৈঠক নিয়ে। কিন্তু, আগাচৌ চিরাচারিত প্রথানুযায়ী তা সবই গুজব বলে আখ্যায়িত করে গেছেন। এমনও শোনা গেছে এই গোপন বৈঠকের মধ্যস্থতাকারীও ছিলেন তিনি নিজেই।
সেদিন ব্রিকলেনের মোড়ে দাড়িয়ে থাকা এক সহকর্মীর মুখে শুনলাম, আব্দুল গাফফার চৌধুরী এখন নাকি শুধু ব্যস্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কিংবা উদ্বোধন নিয়ে। সেই কথা প্রসঙ্গে আরেকজন বলে বসলেন, ‘আরে না, সামনে নির্বাচন নিয়ে তার তো ঘুম নেই।
কৌতুহল বশত বললাম, আগাচৌর সাথে নির্বাচনে সম্পর্ক জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে লন্ডনে এসেছে বেশ কয়েকবার এবং আবারো আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এখানে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার সবচে’ শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি হলেন আগাচৌ। তো প্রবাসী মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রথমে স্মরণাপন্ন হন তাঁর সাথে এবং তিনি যদি একটু সুপারিশ করেন, তবেই হয়তো মিলবে মনোনয়ন।
প্রসঙ্গটা হয়তো একটু অন্যদিকে মোড় নিচ্ছিল, তাই একটু বেকেঁ আসলাম।
জয়নাল হাজারী কি তবে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে দেশে প্রত্যাবর্তন করতে চান? শোক দিবসে তার অনলাইনের প্রচারিত একটি ভাষণে হাজারী বলেছিল আগামী ১৬ডিসেম্বরের আগে তিনি দেশে ফিরবেন। তবে কি ধরে নিব- লন্ডনে যেমন শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে থাকেন আগাচৌ, ঠিক তেমনি কি জয়নাল হাজারীর ক্ষেত্রে। যদি হ্যাঁ বোধক হয় তবে, আগাচৌ অবশেষে তলে তলে এতদূর এগিয়েছে কিসের স্বার্থে, নাকি কোন বিশেষ মহলের প্ররোচনায়?
মেইল :
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।