যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরানী প্রকাশ্য পথে হত্যার প্রতিশোধ চায়না আমি তাদের ঘৃণা করি
"অরুন্ধতী রায়ের স্বাক্ষাৎকার: শাবাশ নতুন ভারত ! ,ভাষ্কর্য বিবাদ: লালন উৎখাতের মচ্ছব বসিয়ে হাওয়ার ওপর তাওয়া গরম করে কার জন্য পিঠা ভাজা হচ্ছ? রিফাত হাসানরে 'ফাজলামীর সীমা' এবং ফুটনোটের গবাক্ষপথে রাজনীতির মারফেত র্দশন। "
এই তিনটি বিষয় নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে সত্যি সত্যি ব্লগের ’তাওয়া’ গরম হয়ে আছে। এর বাইরেও আরো কয়েক জনের লেখা আছে এই বিষয়ে। সব গুলো বিষয় টেনে আনলে পাঠকের ধর্যচ্যুতি ঘটতে পারে, তাই শুধু এই বিষয়েই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখতে হচ্ছে।
”অরুন্ধতী রায়ের স্বাক্ষাৎকার:শাবাশ নতুন ভারত” লেখাটা আসার পর আমি বন্ধুবর ফারুকের পোস্টে মন্তব্য করেছিলাম।
"আর সবাই যাকে খলনায়ক মনে করে অথাৎ সেই মাওবাদী এবং আসাম-কাশ্মীররে বিছিন্নতাবাদী ও ইসলামী সন্ত্রাসীদরে ভূমিকারও নতুন মূল্যায়ন করনে তিনি। আসলে এরা যে ভারতীয় রাষ্ট্ররে উচ্চর্বণবাসীদরেই প্রতক্রিয়া, সেটা না বুঝলে সহজেই আমরা বুশের ওয়ার অন টরেররে খপ্পরে পড়ে পঞ্চম বাহিনীর ভূমিকায় অবর্তীণ হয়ে যাব।
আমি লক্ষ্য করেছি বরাবরই কেউ কেউ মাওবাদীদের আসাম-কাশ্মীররে পৃথক রাষ্ট্রকামীদরে সাথে এক করে উপস্থাপন করনে। এটা যে অরিচ্ছাকৃত তেমন নয়। খুব সচতেন ভাবেই করা হয়।
আলোচ্য অরুন্ধতীও এর ব্যতক্রিম নন। এবং অনুবাদক/উপস্থাপক ফারুখ ওয়াসফি ও তা-ই করনে।
এটা করে মাওবাদীদের যা কিছু এ্যাচভিমন্টে তার শেয়ার জঙ্গি মৌলবাদীদের দেওয়া হয়, তেমনি র্ধমশ্রয়ী জঙ্গিদের শ্বেত সন্ত্রাসের দায়ভার মাওবাদীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়।
এই ন্যাক্কারজনক কাজটি তথাকথতি লোরয়িটেরা যমেন করেন,তেমনি মুক্তচিন্তা আর মুক্তবুদ্ধির প্রতিভূরাও অবলীলায় করে চলছেনে।
এই সকল সরলিকরণ গুলোকে ইনক্যাশ করে র্বণ ক্রিমিনাল ধর্মিয় মৌলবাদীরা।
যেমন এই পোস্ট তাদের জন্য আর্শীবাদ' হয়ে আর্বিভূত হয়ছে। "
এর উত্তরে ফারুক ওয়াসিফ জানালেন----
” র্জার্মানিতে যেমন ভাবে ইহুদিদের নিশানায় রেখে ফ্যাসিবাদ দাঁড়িয়েছিল, ভারতে তেমনি মুসলমানদের নিশানায় রেখে গৈরিক ফ্যাসিবাদ দাঁড়িয়েছেছে। আবার ইসরায়েলে যেমন ইহুদি র্ধমতাত্বিক(অর্থাৎ আপনারা যাকে বলনে মৌলবাদী) রাষ্ট্র, ভারতকেও বিজেপি ও অন্যরা এবং বৃহৎ ভারতীয় পুঁজি হিন্দু র্ধমতাত্ত্বিক রাষ্ট্র বানাতে চায়।
এর সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করলে দেখব, বাংলাদেশের হিন্দুরা এখানকার কাঁচা র্ধমীয় ফ্যাসিবাদের লক্ষ্যবস্তু। তবে র্দুবল অর্থনৈতিক ভিত্তি এবং অদক্ষ-অযোগ্যনেতৃত্বের কারণে ইসলামী আধপিত্যবাদ এখানে ডমিন্যান্ট হয়ে উঠতে পারবে না।
তারা হবে মার্কিন-পাকিস্তান-ভারত-ইসরায়েলের পঞ্চম বাহিনী। এদের বাইরে যদি কোনো ধারা থাকে যারা নিজ জনগণকে পীড়ন করে না এবং যারা পুঁজিবাদ বিরোধী, আমি তাদের গণশত্রু বলব না। যদিও তেমন কেউ বাংলাদেশে নাই। এটা বললাম, আমার অবস্থান বোঝাবার জন্য।
সে কারণে গৈরিক পুজিবাদী ফ্যাসিবাদের ডাইনে ইসলামী জঙ্গি বাঁয়ে মাওবাদী বপ্লিবী, এভাবে বলার মধ্যে সর্তকতা থাকা দরকার সত্য।
কিন্তু আমি আমাদের অনেক সহযোদ্ধার ভাষা ও বুলরি মধ্যে ফারাকে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ভাষা ও রাজনীতির প্রচ্ছন্ন ছাপ দখছি, তাতে আরো ভয় পাই। ওরা চায় আমাদের একাংশকে জঙ্গি এবং আরএক অংশকে আলোকিত পশ্চিমের অনুসারী করে সভিল ওয়ার বাঁধাতে। শেষে তারা আসবে আমার গরিব জনগণকে মেরে আমাদের আলোকে রক্ষা করতে। এই বিভাজনের ফল কী তা ইরাকের দিকে তাকিয়ে বোঝা যায়।
ইসলাম আজ সাম্রাজ্যের সহজ শিকার, সেকারণে ইসলামকে প্রতিরোধের কেন্দ্র ভাবার প্রতারণামূলক চিন্তার খাতক আমি নই।
আবার ইসলামই এক নম্বর শত্রু এমন র্বণবাদী এবং পশ্চিমা আধিপত্যবাদের অচতেন অনুসরণে আমি ভীত হই। আমাদের মগজকে এই দুই বিপদ থেকে রক্ষা করা জরুরি। ”এ বিষয়ে আরো জানতে এখানে দেখুন এখানে মুশকিল হলো ফারুক অরুন্ধতী পোস্টে যে বিষয়টিকে মাথায় রাখতে বলছেন,সেই বিষয়টিই তার মাথা থেকে সরে যাচ্ছে তিনি যখন রিফাত হাসানের পোস্টের প্রতিউত্তর করছেন। আর এই দৈতস্বত্তার উপস্থিতি আমাকে এই পোস্ট লিখতে নিরুপায় করল।
তিনি এই যে অরুন্ধতীর লেখা জেড নেট থেকে নামিয়ে আমাদের পরিবেশন করছেন,সেটা কিন্তু কোন হঠাৎ লেখা নয়।
তিনি লাগাতার একাজটি করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন ব্লগে, সংবাদপত্রে লেখা গুলো ছাপা হচ্ছে। আমার বিনীত প্রশ্ন এবং আপত্তিটা এখানেই। অরুন্ধতী এবং তার অনুবাদকের লেখা দেখে সাধারণের মনে হতেই পারে যে, পরমানু চুক্তির পর ভারতই এই অঞ্চলে মার্কিনের ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছে। যদিও আমরা জানি,ভারত এ কাজটা অনেক আগে থেকেই করছে।
আমার আপত্তির জায়গাটা তার পোস্টে সবিস্তারে দেওয়া যায়নি। এখন এই দুজনের কাছেই প্রশ্নঃ ভারতীয় জুজু ছাড়া কি বিশ্বে আর কোন জুজুর উপস্থিতি নেই এখন?অরুন্ধতী যে দেশে বাস করেন তিনি সেখানকার সমাজচিত্র নির্মাণ করবেন,সেটা খুবই সঙ্গত,কিন্তু ফারুক যখন আমাদের সাবধান বা সচেতন করবার জন্য এই সতর্কবাণী গুলো প্রচার করবেন তার কি তলিয়ে দেখা কর্তব্য নয় যে, নিপীড়িত মানুষের সংগ্রামকে আর কোথায় কি ভাবে দমন করা হচ্ছে?
সমসাময়ীক কিছু ঘটনার উল্লেখ এখানে প্রাসঙ্গিকঃ
১। পিনোশে’র চিলিতে মাওবাদী নেতা গঞ্জালোকে মাটির নিচে অন্ধকার কুঠরিতে বছরের পর বছর বন্দি করে রাখা হয়েছে। আরআইএম বা(রেভ্যূলুশনারী ইন্টারন্যাশনাল মুভমেন্ট) গঞ্জালোর মুক্তির জন্য সারা বিশ্বের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা-কর্মিদের ,বিপ্লবীদের আহ্বান জানিয়েছিল। অরুন্ধতী বা তার ’দর্শন’ প্রচারকেরা কি এক বারের জন্যেও গঞ্জালোর মুক্তি বিষয়ে কিছু বলেছেন? না।
২। ইরান দখলের পর খোমেনী প্রথম চোটেই ২০/২২ হাজার কমিউনিস্ট হত্যা করেছিল। এখনো ইরানে প্রায় প্রতি দিনই কমিউনিস্ট নিধন কাজটা ঈমান-আক্বিদার সাথেই করা হচ্ছে!
সেখানে কেন এই বিশ্ব মানবতাবাদীর তিক্ষ্ণ নজর পড়ছে না?
৩। 'পিকেকে' কে নির্মূল করার জন্য তুরষ্ক,ইরান,ইরাক এক হয়ে আক্রমন করছে। তুরষ্ক গত এক বছর ধরে ইরাকী ভূখন্ডে ঢুকে কুর্দিদের নির্বিচারে হত্যা করে আসছে।
এমন একটা বর্বর আক্রমন সারা বিশ্ব তাকিয়ে দেখছে। আমাদের অরুন্ধতীও দেখছেন।
৪। আফগানিস্তানে তালিবানরা যখন নজিবুল্লাকে হত্যা করে তিন দিন লাইটপোস্টে ঝুলিয়ে রাখছে বর্বর যুগের সিস্টেম মত,তখনো এই মানবতাবাদীদের নজর অতদূর অব্দি পৌঁছাচ্ছে না!
৫। এক সময়কার কমিউনিস্ট চীন প্রচন্দর মাওবাদী বিপ্লবের একেবারে শেষের দিকে এসে আড়াইশ’বছরের রাজকীয় শাসনকে বরং সমর্থন করে যাচ্ছে।
মাওবাদীরা যখন সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে প্রায় ক্ষমতা দখলের কাছাকাছি,তখনো চীন ’চির শত্র“’ভারতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কৈরালা গং আর রাজা কে সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে। সে সময়ও এই আধুনিক মানবতাবাদীদের কলম তব্দা খেয়ে থাকছে।
এত সব উদ্ধৃতি এজন্য টানা হলো,কারণ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিপদ ভারতকে অবলম্বন করে বা পঞ্চম বাহিনী তৈরি যে নয় সেটা বোঝাতে। সারা বিশ্বজুড়ে যে নিপীড়ন গণহত্যা চলছে সেগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে কেবল মাত্র ভারতীয় জুজু দেখাটা মনে করিয়ে দেয় ইউরোপের সেই কমিউনিস্ট জুজু দেখার কথা। ফারুকের এই তিনটি প্রবন্ধই প্রকারন্তরে একটা দিক নির্দেশ করছে।
আর তা হলো ইসলামী মৌলবাদী আগ্রাসনের বিপদের চেয়ে ভারতীয় গৈরিক হিন্দুত্ববাদী বিপদের ভয় বেশি। যেমনটি অরুন্ধতী বলে চলেছেন।
এবার প্রিতীভাজনেষু ফারুক কে কিছু দর্শনের আদি কথা মনে করিয়ে দেওয়া আবশ্যক. যা তিনি হয় ভুলে বসেছেন, অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে চলেছে। আর এতে করে তার লেখা হয়ত সার্বিকভাবে মহৎ উদ্দেশ্যেই লিখিত হয়েছে বা হচ্ছে,কিন্তু তার তির্যক আকোচ্ছটা গিয়ে পড়ছে র্যাডিক্যাল ধর্মিয় ফ্যাসিবাদীদের ওপর। ফারুক নিজেই বলছেন----
” ইসলাম আজ সাম্রাজ্যের সহজ শিকার, সেকারণে ইসলামকে প্রতিরোধের কেন্দ্র ভাবার প্রতারণামূলক চিন্তার খাতক আমি নই।
আবার ইসলামই এক নম্বর শত্রু এমন র্বণবাদী এবং পশ্চিমি আধিপত্যবাদী অচতেন অনুসরণে আমি ভীত হই। আমাদের মগজকে এই দুই বিপদ থেকে রক্ষা করা জরুর। ”আমাদের মগজকে এই দুই বিপদ থেকে রা করা জরুরি। ” বলার অর্থ হচ্ছে,তিনি এই দুই বিপদ বিষয়েই ওয়াকিবহাল। অথচ তার এই কথাটাতে কি মনে হয় ----” ভারতকে বিজেপি ও অন্যরা এবং বৃহৎ ভারতীয় পুঁজি হিন্দু র্ধমতাত্ত্বিক রাষ্ট্র বানাতে চায়।
এর সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করলে দখব, বাংলাদেশের হিন্দুরা এখানকার কাঁচা র্ধমীয় ফ্যাসিবাদের লক্ষ্যবস্তু। তবে র্দুবল অর্থনৈতিক ভিত্তি এবং অদক্ষ-অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে ইসলামী আধপিত্যবাদ এখানে ডমিন্যান্ট হয়ে উঠতে পারবে না। তারা হবেমার্কিন-পাকিস্তান-ভারত-ইসরায়েলের পঞ্চম বাহিনী। ”
অর্থাৎ তিনি এখানকার ধর্মিয় ফ্যাসিবাদকে খাট করে দেখছেন,কার্যত আমলেই আনছেন না! এই তিনিই আবার রিফাত হাসানের পোস্টে যেয়ে ঠিক এর বিপরীতটা বলছেন। দেখুন--- "এই জরুরি অবস্থাতে আমরা দেখছি আমিনী গং দের বলপ্রয়োগের ক্ষমতা আর রাষ্ট্রের বলপ্রয়োগের শক্তি দুজনে দুজনার হয়ে কাজ করছে কোনো এক মায়াবী যাদুবলে।
গত এক দশকে এই ঐক্যের ভুরি ভুরি নজির হাজির হয়েছে।
এসব প্রশ্নের জবাব তাই আমাদের খুঁজতেই হয়। যতই খেলাফতের মোরতবা কানে বাজুক, যতই একদিকে ওয়ার অন টেরর অলা শিল্পবাদী-জাতীয়তাবাদী কলোনিয়াল এলিট আর এক দিকে র্মূর্তিবিদ্বেষী জেহাদীদের মাতম। আর রাষ্ট্র আধা সামন্তীয় ইসলাম আর আধা পুঁজিবাদের এক খচ্চর রাষ্ট্রর্ধম জন্ম দিক। সেইটারে প্রতিরোধধ করা র্কতব্য কি র্কতব্য না সেটা জানতে সাধ হয়।
”
আমারও এখন জানতে সাধ হচ্ছে ,আমরা কোনটাকে ধর্তব্য মনে করব? সবই কি গুলিয়ে যাচ্ছে না?
ফারুক আমাদের ইসলামী মৌলবাদী(তার মতে ’আমাদের ভাষায়')দের বলছেন-- র্দুবল অর্থনৈতৈকি ভিত্তি এবং অদক্ষ-অযোগ্য নেতৃত্ত্বের কারণে ইসলামী আধপিত্যবাদ এখানে ডমিন্যান্ট হয়ে উঠতে পারবে না। ”
একজন পোস্ট মডার্ণ মাকর্সবাদী,একজন উদীয়মান সংবাদ কর্মি,একজন আন্দোলনের পুরোধা---তাকে কি মনে করিয়ে দিতে হবে এদেশের মৌলবাদীদের গত এক দশকের কালপঞ্জি?এক এক করে কি তাকে দেখিয়ে দিতে হবে এই এক দশকে তাদের হাতে কতজন দরিদ্র কৃষক ’সর্বহারা’ ট্যাগ প্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে? রাষ্ট্রের ক্ষমতাগুলো রাষ্ট্রের মত করেই কতবার তারা ব্যবহার করেছে? ফারুক কি ভুলে গেছেন নওগাঁর সেই হত্যা করে নজিবুল্লার মত গাছে ঝুলিয়ে রাখার দৃশ্য?
এই সঙ্গে তাকে একটু ইতিহাস স্মরণ করানো আবশ্যক। ”পাকিস্তান দাবি আদায়ের জন্য জিন্না ১৬ আগষ্ট ১৯৪৬ প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস আহ্বান করলে ওই দিন কোলকাতা এবং পরে বিহার ও পাঞ্জাবে বিভৎস সা¤প্রদায়ীক দাঙ্গা,হত্যা,লুট ও নারী নির্যাতন শুরু হয় এই দাঙ্গায় প্রত্যক্ষ ভাবে ইন্ধন যুগিয়েছিলেন বাংলার মূখ্যমন্ত্রী লীগ নেতা সোহরাওয়ার্দী(স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারত। তারিখ,অভিধান,১৭৫৭-১৯৪৭। অসিতাভ দাশ।
পত্রলেখা পাবলিশার্স)
ফারুক এই অবসরে আমাকে মাকর্সবাদ থেকে বিচ্যুতও ধরে নিয়েছেন। আমি খুব বিনীত ভাবেই তার কাছে মাকর্সবাদের দীক্ষা নিতে রাজি। কিন্তু সেই মাকর্সবাদ হতে হবে মাকর্সবাদই। কার্ল পপার,সাঈদ বা চমোস্কির মডার্ণ মাকর্সবাদ নয়। ফারুক ওয়াসিফদের সমস্যা হলো তারা মাকর্সবাদী ভাববেন নিজেদের,আবার শ্রেণী সংগ্রামের প্রশ্ন সামনে এলেই শ্রেণী সমন্বয়ের চলনসই যুক্তি তক্কো হাজির করে কখনো 'উগ্রবাদ' কখনো 'হঠকারী' আখ্যা দিয়ে শ্রেণী সংগ্রামের বিকোশিত রূপ বা চূড়ান্ত রূপকেই অস্বীকার করবেন।
শ্রমিক শ্রেণীর শাসন প্রসঙ্গে লেনিনের উক্তিঃ যারা কেবল শ্রেনী সংগ্রামকে স্বীকার করে তারা তথাপি মাকর্সবাদী নয়-----একমাত্র সে-ই মাকর্সবাদী যে শ্রেণি সংগ্রামের স্বীকৃতিকে সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কত্ব’এর স্বীকৃতি পর্যন্ত বিস্তৃত করে। মাকর্সবাদী এবং সাধারণ পেটি বুর্জোয়ার মধ্যে এটাই হচ্ছে সবচেয়ে গভীর পার্থক্য(লেনিন সংকলিত রচনাবলী.খন্ড২৫,পৃষ্ঠা ৪১১)।
এখন মাকর্সবাদীর এই অবস্থানে নিশ্চই আমরা ফারুক কে, অরুন্ধুতীকে পাব না। তার দরকারও নেই। কিন্তু ইনিই আবার কি করে বলে বসেন-----” এই ব্লগে এমন কিছু প্রাইভটে বিপ্লবী দেখা যায়, যারা ঘররে মধ্যে ধানচাষ করবনে বলে স্থরি করছেনে।
তাদের থেকে সাবধান। ”! এখন পাঠক কি ভাবে বিবেচনা করবেন যে কে ঘরের মধ্যে ধান চাষ করতে চাইছে?
আমার শেষ কথা। ফারুক বরাবরই দুই দিক মাথায় রাখার কথা বলেন। দুই বিপদের কথাই মনে করিয়ে দেন। কিন্তু যে রকম দৃঢ়তায় তিনি ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের আগ্রাসনের বিপদ অংকন করেন ঠিক সেই পরিমান গুরুত্ব দিয়ে ইসলামী ধর্মিয় ফ্যাসিবাদীদের চিত্রায়ন করতে পারেন না।
এটাকে এখন আর ’পারেন না’ বলা অনুচিৎ। বলা যেতে পারে বলেন না। এই না-বলা,এই ধর্মিয় ফ্যাসিবাদকে খাট করে দেখা এগুলোই একসময় চিন্তা জরায়ুতে বড় হয়। ডালপালা গজায়। এবং সেই ডালপালার সাথে শ্রেণী অবস্থানের আপোষ যোগ হয়ে ওয়েলফেয়ার স্টেট বা কল্যানকামী রাষ্ট্র অথবা মৃদু গণতান্ত্রিক অভিঘাতে রূপ নেয়।
যার চূড়ান্ত অবস্থান এ্যাবস্ট্রাক্টলি ধর্মিয় ফ্যাসিবাদকে সুড়সুড়ি দেওয়া। এরই চুড়ান্ত প্রকাশ হচ্ছে মোজাফ্ফর আহম্মদের ’ধর্ম কর্ম সমাজতন্ত্র’,এবং ফরহাদ মজহারের ’জিহাদ ই শ্রেণী সংগ্রাম’ ত্বত্ত্ব। আমার ভীতিটা এখানেই। আমার খুব জানতে সাধ হয় ,সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পর মাও চিন্তা বা মাওবাদ কে অস্বীকার করে কি এ যুগে মাকর্সবাদী থাকা যায়? নাকি মাকর্স-লেনিনের বিপ্লবী ত্বত্ত্বকে বাস্তবায়ন করা যায়? ভারতে এম এন রায়, মুজাফ্ফর আহম্মদ,নাম্বুদ্রিপাদ,নাগা রেড্ডি প্রমূখেরা তো চীনা কমিউনিস্টর ও আগে পার্টি গঠন করেছিলেন। তাহলে একটা সর্বভারতব্যাপী কৃষক আন্দোলন গড়ে তুলতে 'সিএম' পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো কেন? ফারুক হয়ত জানেন না।
এই মাপের অনেক বিলাসী মাকর্সবাদীরাই জানেন না, কেন 'সিএম' গাদা গাদা বই পড়তে নিষেধ করতেন? গাদা গাদা বই মাকর্সবাদকে একাডেমিক সুররিয়ালিজমের তুলিতে সেমিনার-সেম্পোজিয়ামের বৃহৎ ক্যানভাসে কেবলই বিমূর্ত ছবি আঁকা শেখায়। খোকন মজুমদাররা যখন পার্টি লাইনে আট দলিলের ব্যাখ্যা দাবি করলেন তার উত্তরে সিএম বলেছিলেন সেই কথাটা---প্রশ্নঃ হোয়াট ইজ টু বি ডান? উত্তরঃ রিড রেড বুক এন্ড দ্যাট ইজ টু বি ডান।
সাম্রাজ্যবাদ আর ধর্মিয় ফ্যাসিবাদ যে একই ভাবে গণতন্ত্র আর শ্রেণী-পেশার লড়াইকে প্রতিহত করে,নির্মূল করে সেটা বায়বীয় ভাবে আপনারা স্বীকার করেন বটে,কিন্তু তুল্য বিচারে এসেই ধুর্ময়,বিশেষ করে ইসলামী ফ্যাসিবাদকে লঘু করে দেখতে ভাল বাসেন। এই মাপের নাদানির খেসারত সারা বিশ্ব এখন দিচ্ছে,আমরাও দেব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।