যারা উত্তম কে উচ্চকন্ঠে উত্তম বলতে পারে না তারা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে শুকরকেও শুকর বলতে পারে না। এবং প্রায়শই আর একটি শুকরে রুপান্তরিত হয়।
বাকস্বাধীনতা আর সেল্ফ সেন্সরশীপ নিয়া অনন্তকাল ব্যাপী তর্ক করা যাইতে পারে, কেননা বহুপক্ষীয় গল্পটা তত্ত্বে যতটা মধুর শোনায় বাস্তবতা সবসময়ই সেটা থেকে ভিন্ন। এই ভিন্নতা ঐতিহাসিকও। বিদ্যমান চর্চাকে কোনভাবেই কোন তত্ত্ব সম্পূর্ণ আয়ত্বে আনতে পারে নাই।
আমি আশা রাখি কোনদিনই ব্যবস্থা কখনো এতটা স্বৈর আর নিরঙ্কুশ হয়ে উঠবে না যে এটি কেবলমাত্র একটি ধারাকেই বহমান রাখতে সক্ষম হবে। যদিও এই জামানায় চেতনাগত এবং বল প্রয়োগগত উভয় অর্থেই নিরঙ্কুশ হয়ে উঠে বিরাজ করা এবং ক্রিয়াশীল থাকা দুইই সম্ভব। আসলে পূর্বের যে কোন কালের চেয়ে বেশি সম্ভব। ব্যবস্থাকে নিরঙ্কুশ না হতে দেবার কাজটি সবসময়ই সেইসব মানুষজনের, যাদের ট্যাগিং হয় “সাধারণ মানুষ” প্রত্যয়ে। আর এইসব “সাধারণ মানুষ” একটা কথা নিজের জীবন দিয়েই জানেন যে ব্যবস্থার ধর্মই হল নিরঙ্কুশ হয়ে ওঠা।
ব্লগ পাটাতন মানুষজনের যোগাযোগের রাস্তার যেমন উন্মোচনকারী তেমনি নতুন দিকে চালনাকারী এবং অবশ্যই নিয়ন্ত্রণকারীও বটে। ফলে এটা নিয়া অথবা যে কোন পাটাতন নিয়া প্রশ্নাতীত থাকা মূঢ়তা ছাড়া আর কিছুই না। কিন্তু প্রসঙ্গটা আবারো, নিজ মত প্রকাশের পাটাতনকে ছোট বাপ (যেমন ব্লগ কতৃপক্ষ) এবং বড় বাপ (যেমন রাষ্ট্র) প্রমূখের বাপগিরির নিরঙ্কুশ অবস্থা থেকে যথাসম্ভব মুক্ত রাখা দরকার। দরকার খুব সাধারণ এবং মৌলিক কারণে, নিজ মত প্রকাশ। আর এখানেই মত প্রকাশকের এজেন্সীর বিষয়টা জড়িত।
ব্যবস্থাপনা নিজ নিরঙ্কুশতা বজায় রাখার জন্য মত প্রকাশকের এত বহুধা ভিন্নতা এবং স্বার্থের ডালি নিয়া উপস্থিত হইতে পারে যে জোরালো সামষ্টিক মত প্রকাশ আর কখনো দাঁড়াইতে পারে না। আর যদি দাঁড়ায়ও তাহলে সেটা নিবৃত্ত করার জন্য বল প্রয়োগের ব্যবস্থাতো আছেই। আর সেটাও যদি কাজ না করে তাহলে আছে স্যাবোটিয়ার দল কিংবা মতপ্রকাশকদের নিজেদের মধ্যে উইচ হান্টিং বা লোম বাছতে যাইয়া কম্বল খালি কইরা ফেলা।
সচলায়তন ব্যান হয়েছে এই খবরটা খুবই মর্মান্তিক। আমি নিজে এই ব্লগে যাইনা, ব্লগের বাতাবরণে নিজেরে অনুপযুক্ত মনে হয়।
কিন্তু মহত্ত্ব আরোপণ না করেও বলা যায় যে এই ব্লগের প্রকাশ স্বাধীনতাকে আমি সমর্থন করি। যেমন করি অন্য সকল ব্লগের। কেননা এটা আমার এজেন্সীর সাথে সংগতিপূর্ণ। আবার অপছন্দ করি সবগুলোকেই, তাদের নিয়ন্ত্রণ গল্পের কারণে । আবারো সেই চাবিশব্দ বাক্-স্বাধীনতা।
কিন্তু আমি মনে করি না যে সচল অচল আমার তোমার প্যাঁচালি ক্যাচালী সাম ইন আউট কেউই আমার বাক্ স্বাধীনতাকে আমার মত করে জায়গা দিতে পারবে। এইটা নিরন্তর দ্বান্দিক একটা অবস্থান। এই অবস্থান যত আগে বোঝা যায় ততই ভালো। যেমন এমনও হইতে পারে কোন কথিত প্রগতিবাদী ব্লগ অনেকদূর পর্যন্ত কথাবার্তা নিতে পারল কিন্তু এরপর আর পারল না। আর আমার এজেন্সীর কারণেই কোন ধর্মান্ধ, প্রগতি অন্ধ, জাতীয়তাবাদ অন্ধ ব্লগে আমি লিখবো না।
আবার উল্টা দিক থেকে, আমাকে লিখতেও দেবে না, সোজা ব্যান করে দেবে। বা আরো মর্মান্তিক বড় বাপের হাতে তুলে দেবে।
এরপর একটা বড় প্রশ্ন সামনে আসে, তাহলে কি আপনি আমি কেবল উত্তর আধুনিক বিচ্ছিন্নতার উদযাপণ করব? কেবলই খুব স্বতন্ত্র অনন্যতা থাকবে চারপাশে কিন্তু আমরা পরস্পর সামষ্টিক কোন জায়গায় দাঁড়াবো না। আসলে দাঁড়াতে পারবও না? এইটা আরেক ধরণের শিশুতোষ বাতুলতা। এবং ব্যবস্থার কাছে পরিশেষে নিজের যূথ শক্তিকে শ্রেফ তুলে দেয়া।
এইটাও কোন রাস্তা হইতে পারে না। আর এজন্যই দরকার নিজ মতের অনন্যতা সমেত ছোট এবং বড় বাপগিরির বিরুদ্ধে কথা বলা।
নিজেরা নিজেদের সেন্সর করার গল্পটাও অনেক পুরোনো। অনুমান করি এইটা শুরু হইছিল যৌনতা, সামাজিক নিয়ম নীতি আর ধর্ম দিয়া। এরপর দেখি রাষ্ট্রে ও জাতীয়তাবাদী মতাদর্শে, লিঙ্গীয় রাজনীতিতে, মধ্যবিত্ত নৈতিকতায়, সভ্যতার গল্পে ইত্যাদি নানা বিষয়ে।
তবে আধিপত্য কতটা জোরালো ও বৈধতা পাইছে তা অনুমান করা যায় মানুষজনের সেল্ফসেন্সরশীপের মাত্রা দেখে। রাজাকার প্রাতিষ্ঠানিক বৈধতা পেয়ে এখন যখন বুদ্ধিজীবিতামূলক বৈধতার রাস্তায় হাঁটে তখন বুঝতে হবে পুঁজির চেয়ে বড় নটী আর কিছুই হতে পারে না। বেশিদিন আগের খবর না, আমার বিএনপি নেতা মামার ভাষ্যমতে নোয়াখালীতে জামাতের মাহফিলে এলাকার পরিচিত সৎ মুক্তিযোদ্ধারে নিয়া জামাত নেতা মঞ্চে উঠছিল। সে এলাকার লোকজনরে দেখাতে চেয়েছিলো মুক্তিযোদ্ধাও তার দলে। জামাত রাজাকারকে বৈধতা পাওয়াতে চেয়েছিল, অন্তত শক্তি প্রদর্শন করতে চেয়েছিল ।
এ রকম বৈধতার গল্প রাষ্ট্রের সবগুলো প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে ও গণমাধ্যমে এখন স্পষ্ট লক্ষ্যনীয়। বড় বাপের স্নেহের কারণে এর বিরুদ্ধে কথা বলা সামনে আরও হারাম হয়ে উঠবে। আবার অন্যদিকে পলাতক পূর্ব পিতারা (লিঙ্গে নারী হইলেই তো আর উত্তরাধিকার শেষ হয় না) যারা এতদিন গণমানুষের আন্দোলন বিক্রী করেছেন তারা নিজেদের পুত্র আর কান ঠিক করাতে বিদেশেই থাকবেন।
গণমাধ্যম বড় বাপেদের মিত্রতার (ওরফে ধাতানী) সুধা পান করে এবার পরিবার সমেত নোবেল পাবেন। হয়ত বইয়ের নাম হবে, “বাংলাদেশ, একটি জলপাই বাক্-স্বাধীনতার প্রতিভূ”।
শুধু বাক্ এর আগে অ টা উহ্য থেকে যাবে এবং জলপাই এর অর্থ হবে জল যেখানে পাই, (নিশ্চয়ই এটা আমাদের আমদানী করতে হবে না। আমরা পানিতে ডুবে ভেসে যেতে পারব ইনশাল্লাহ। এটা অনেকটা ধর্মীয় জিহাদী মৃত্যুও হবে। অবশেষে বাংলাদেশ মডারেটেড ডেভেলপমেন্টালিস্ট রাষ্ট্র হবে। )
আবারো যে কথা বলছিলাম, ব্লগ মত প্রকাশের ক্ষমতা-সর্ম্পক, রাজনীতিহীন, শ্রেণী নিরপেক্ষ পবিত্রতম ক্ষেত্র না হলেও কথা বলায় জায়গা।
সেটা ইতোমধ্যে সামাজিক নেটওয়ার্কের বিদ্যমান রাজনীতির প্রিয় লীলাভূমিও হয়ে উঠেছে। মজার ব্যাপার হল প্রতিটা ব্লগের বৈশষ্ট্যও খুবই রাষ্ট্রধর্মী। একটা উদারনৈতিক তো আরেকটা ডেভলপমেন্টালিস্ট, একটা জাতীয়তাবাদী তো আরেকটা বাক্-বাদী। রাষ্ট্র যেমন লিঙ্গীয় বৈষম্যবাদী ব্লগও অনেকটা তাই। কিন্তু তারপরও বড় বাপের বাপগিরির চাইতে সহনীয়।
আর তাই কোন প্রকার ব্লগ নিষেধাজ্ঞা বাঞ্ছনীয় নয়। সেটা এখন পর্যন্ত যে কোন ব্লগের ক্ষেত্রেই।
আর কয়েকদিন পরেই হয়ত আমরা দেখতে পাব ইসলামী সামরিক ব্লগের উত্থান। যেটা বিপুল পরিমাণে পুঁজি আর ব্লগবাজদের নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হবে। তখন সেইসব ব্লগের বিরুদ্ধেই কথা বলতে হবে।
তবে সেই কথা বলার জন্য নিজেদের বাক্-রাজনীতির বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার। গল্পটা রাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপের বদলে মতাদর্শিক আধিপত্যের বিদ্যমান বাস্তবতার হাইব্রিড অনুরূপ হলেও আমি বিষ্মিত হব না।
ফলে বিষয়টা মোটা দাগের প্রগতিবাদীদের (যারা সাধারণত লোম বাছাইয়ে জীবন শেষ করেন) এজেন্সীরও । নিজেদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিশুদ্ধতা আর ঘারানা করণের না। ইউটোপীয়ার স্বপ্ন আর লোম বাছাইয়ের আগে কম্বল থাকা দরকার যেটা নিচে রেখে ঘুমানোও যায় আবার প্রয়োজনে গায়েও জড়ানো যায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।