নিজের সম্পর্কে লেখার কিছুই নেই। আমি বাংলাদেশের একজন -নাগরিক, চেষ্টা করছি সুনাগরিক হওয়ার জন্য। আমার ফেইসবুক একাউন্ট: http://facebook.com/kobisaheb এবং আমার ওয়েবসাইট http://mr9.in আজ হঠাৎ করে ছোটবেলার একটা ঘটনা মনে পড়ল। তখন বয়স আর কতই হবে ৯ অথবা ১০ কিংবা আরো কম। তখন বর্ষাকাল চারদিকে শুধু পানি, রাস্তাঘাট সব ডুবে গেছে ।
তখন একমাত্র পরিবহন ব্যবস্থা হল নৌকা এবং বাঁশের তৈরি ভেলা। আমার আব্বু কলেজে অধ্যাপনা করেন, সেহেতু যতই বন্যা হোক আব্বুকে কলেজে যেতে হতই, সেকারণে তখন আমাদের বাড়িতে দুটি নৌকা ছিল। সেসময় আমদের বাড়িতে সবসময় কয়েকজন কাজের লোক থাকতো তারাই নৌকা আনা নেওয়ার কাজ করত। আমি তখন খুব সম্ভবত থ্রীতে পড়ি, আমি অবশ্য এই বন্যা এর মধ্যে স্কুলে যেতাম না। সেসময় একদিন খবর আসলো আমার ছোট ফুপা-ফুপি এসেছেন ঢাকা থেকে, উনাকে আনতে যেতে হবে বাসস্টেশন থেকে।
আমি তো শুনে মহা খুশি এবং মহা আতঙ্কিত , যতটা খুশী ফুপির জন্য তার চেয়ে বেশী আতঙ্কিত আমার কাজিন এর জন্য। ওই হল এই গল্প এর নায়ক বা নায়িকা। আমার চেয়ে ও বয়সে প্রায় ৪- ৫ বৎসরের ছোট। আপনারা যদিও বলতে পারেন এরকম পিচ্চিকে ভয় কিসের তারা নিশ্চয়ই ওর মত পিচ্চি এর পাল্লায় পড়েন নি। পিচ্চি হলে কি হবে ওর চেয়ে দুষ্ট মেয়ে আমি আমার লাইফে দেখিনি।
এজন্য আমার মেজ কাকু ওর নাম দিয়েছিলেন ডাকু।
ট্রাকে পিছনে "১০০ হাত দুরে থাকুন, আমি বিপদজনক" লেখা সাইনবোর্ডটা ট্রাকে না থেকে ওর পিঠে থাকলে ভাল হত সবাই সাবধান থাকতে পারত। আমি আব্বুর সাথে যাবো ফুপিকে আনতে, কিন্তু আব্বু আমাকে নিয়ে যেতে চাইলো না । শেষে আমি জিদ ধরায় আমাকে নিয়ে গেলেন। আমি ফুপিকে আনতে গেলাম ওকে না, ওকে পারলে রেখে আসতাম , কিন্তু হাজার হোক ছোট বোন।
নৌকায় চড়ে আসার সময় আমি ওর থেকে ১০০ হাত দুরে আছি আর ও আব্বু আর ফুপি থাকায় কিছু করতে পারছে না। ভাব দেখাচ্ছে কত ভদ্র একটা মেয়ে। কিন্তু মনে মনে ঠিকই বলছে ভাইয়া বাড়িতে গেলে দেখি তোমাকে আজ কে বাচায়। আর কেউ না বুঝুক আমি ওর নীরব হুমকি ঠিকই বুঝতে পারছিলাম । তাই আসন্ন মহাদুর্যোগের আশঙ্কায় নৌকা পাড়ে ভিড়ার সাথে সাথেই সবার আগে নৌকা থেকে নেমে বাড়ির ভিতর দৌড় দিলাম শেল্টারের আশায়, বুঝেন না জান বাচাতে হবে তো।
বিপদে পড়লে কেউ আমাকে সাহায্য করা তো দূরে থাক উল্টো আমাকেই ধমকাধামকি শুরু করবে, কারণ উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর মত কূট-কৌশলের দিক থেকে ও আমাদের রাজনীতিবিদদের চেয়ে কোন অংশেই বেশি বৈ কম নয়। ও বোধহয় অন্য চিন্তায় ছিল বুঝতে পারে নাই আমি যে বাড়ির ভিতরে গিয়েছি। সবাই বাড়ির ভিতরে গেছে ওর দিকে আর কেউ খেয়াল করে নাই সবাই ফুপা ফুপিকে নিয়ে ব্যস্ত। সেসময় তালের মৌসুম ছিল, তাল পেকে গেছে। কিছুক্ষন পর আব্বু বাড়ির বাইরে থেকে তাল পড়ার মত একটা শব্দ শুনল আব্বু তেমন একটা গুরুত্ব দিল না যে হয়্বতোবা তাল পড়েছে পানিতে।
কিন্তু একটু পর ফুপি বলল নাশুয়াকে মানে আমার কাজিনকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। শুনে আব্বুর একটু সন্দেহ হল। আব্বু তাড়াতাড়ি কয়েকজনকে সাথে নিয়ে গেল পানির ধারে খুজতে। যা ভেবেছিল তাই নাশুয়া তালগাছের নিচে পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। আব্বু তাড়াতাড়ি পানিতে নেমে ওকে তুলে এনে পেটে চাপ দেয়া, মুখে চাপড় দেয়া যা যা করা যায় করলেন।
ওদিকে ফুপি তো কান্নাকাটি করতেছে, কিন্তু ভাগ্য ভাল বেশি দেরি হয়নি কিছুক্ষন পর ওর জ্ঞান ফিরে আসলো। আমি ভাবলাম যে ওর বোধহয় শিক্ষা হয়েছে, কিসের কি পরদিন থেকে আবার নতুন উদ্যমে শুরু করল আমাকে জ্বালাতন করা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।