আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

'রড দিয়ে পেটানো হয় মুনীর চৌধুরীকে'

মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পলাতক চৌধুরী মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ২২তম সাক্ষী মো. দেলোয়ার হোসেনের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ জবানবন্দি গ্রহণ করেন। প্রসিকিউশনের এই সাক্ষী একাত্তরে ঢাকার মোহাম্মদপুরের শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র ও কাঁটাসুর (রায়েরবাজার বধ্যভূমি) এলাকায় সংঘটিত বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞের পালিয়ে বাঁচা প্রত্যক্ষদর্শী। মো. দেলোয়ার হোসেন জবানবন্দিতে বলেন, একাত্তরে আলবদর বাহিনীর সদর দফতর ছিল মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার। সেখানে আটক রেখে বুদ্ধিজীবীদের নির্যাতন ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তদারকি করতেন। এখানেই শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী ও অ্যধাপক মোফাজ্জল চৌধুরীকে রড দিয়ে পেটানো হয়। জবানবন্দি শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আবদুস শুকুর খান ও সালমা হাই টুনি। এ মামলার কার্যক্রম আগামীকাল পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ফিজিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার থেকে মোহাম্মদপুরের কাঁটাসুরে হত্যা করার জন্য নিয়ে যাদের যাওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে আমি ছাড়া কেউ বাঁচতে পারেনি। আমিই এ ঘটনার একমাত্র জীবিত প্রত্যক্ষদর্শী। ১৪ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১২টা থেকে ১৫ ডিসেম্বর ভোর রাত পর্যন্ত হত্যাযজ্ঞ চলে। দেলোয়ার ১৫ ডিসেম্বর ভোর রাতে পালিয়ে বেঁচে যান। দেলোয়ার হোসেন বলেন, ১৪ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আমাকে বাসা থেকে আরও কয়েকজনের সঙ্গে একটি মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘর থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার সময় আমার দুই বাহুতে যে দুজন ধরেছিল তাদের পরস্পরকে মাঈনুদ্দিন ভাই ও আশরাফুজ্জামান ভাই বলে সম্বোধন করতে শুনি। সাক্ষী বলেন, মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে নিয়ে অন্যদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী ও অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীকেও শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান তাদের ভারতের 'স্পাই' হিসেবে আখ্যায়িত করেন। পরে মুনির চৌধুরী ও মোফাজ্জল চৌধুরীকে রড দিয়ে পেটানো হয়। এ সময় মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান বলেন, 'হাতে সময় নেই। তাড়াতাড়ি কাজ সারতে হবে।' সাক্ষী আরও বলেন, রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার দিকে বাসে তুলে মোহাম্মদপরের কাঁটাসুর নামক একটি জায়গায় বিলের পাশে নিয়ে যাওয়া হয় সবাইকে। সেখানে ২০ থেকে ২৫ জনের এক একটি গ্রুপ করে সবাইকে দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়। সেখানে নেওয়ার পর পাকিস্তানি সেনারা বন্দীদের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বিলের মধ্যে ফেলে দিতে থাকে। তাদের মধ্যে যারা চিৎকার করতেন, গুলি করে তাদের হত্যা করা হয়।

সেখানে সাংবাদিক সেলিনা পারভীনকেও হত্যা করা হয়।

নিজামীর পক্ষে জেরা

মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ২০তম সাক্ষী তহুরুল আলম মোল্লাকে আসামিপক্ষের জেরা শেষ হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-১ এ জেরা করেন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম। এ মামলার কার্যক্রম আজ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। জেরায় তহুরুল আলম মোল্লা বলেন, ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত আমার বাবা শহীদ মোয়াজ্জেম হোসেন এবং মামা শহীদ হাবিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মামলা করতে কেউ বাধা দেয়নি। আমি বর্তমানে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অর্থ সম্পাদক। নিজামী সাহেব এ মামলায় গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি গ্রেফতার হওয়ার সময় থেকেই আমি জানি। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টিও আমি শুনেছি। আজ থেকে প্রায় বছর তিনেক আগে আমি জানতে পারি যে, আমি এ মামলার সাক্ষী। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলা ও পাবনা মহকুমার শান্তি কমিটির সভাপতি কে ছিলেন তা আমার জানা নেই। ১৯৭১ সালে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সেক্রেটারির নাম বলতে পারব না। ১৯৭১ সালে ইসলামী ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারির নামও বলতে পারব না। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের পর ২৫ মার্চের আগে আমাদের এলাকায় কোনো বিহারি হত্যাকাণ্ড হয়নি, তবে ঈশ্বরদীর পাকশী এলাকায় কিছু বিহারি হত্যার ঘটনা ঘটেছিল। ২৫ মার্চের আগ পর্যন্ত পাবনায় কোনো পাকিস্তানি সেনা ছিল কিনা জানি না, তবে ঈশ্বরদী এয়ারপোর্টে একটি সেনাক্যাম্প ছিল। পাবনা পুলিশ লাইন আক্রমণের ঘটনা কার কাছ থেকে শুনেছি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.