কৃষ্ণচূড়া গাছটাকে খুব মনে পড়ে।
আজিম পুর কবরস্হানের উল্টাপাশ্বে কুয়েত মৈত্রি হল এ যাবার সময়
হাতের বায়ের সেই লাল কৃষ্ণচূড়া! মৈত্রী হলের রুমে জানালার পাশে বসে কেটে গেছে কত সোনালী দিন। চোখের দৃষ্টিসীমায় যতটুকু পথ তার অনেকটা লাল হয়ে থাকতো কৃষ্ণচূড়া ফুলে। সেই সময়ে একদিন বিকালে রুমে বসে আছি। রুমমেট মিতুল,বিউটি ওরা গল্পে মশগুল।
আমি বসে পড়ার চেষ্টা করছি। হঠাৎ হলের কোন এক রুম থেকে ভীষন চিৎকার। নাহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহ।
না কি ? কেনো না?কোথা থেকে ভেসে আসছে এই কান্না এই চিৎকার,বুঝে নিতে সময় লাগলো। তিনতলা থেকে সব ছুটতে ছুটতে নীচে নামলাম।
হলের মধ্যখানে মাঠটায় অজস্র মুখ। সবার জানতে চাওয়া চোখ!কে কাঁদে ,কার চিৎকার।
এর মাঝেই পিছনের ব্লক থেকে নেমে এলো একটা মেয়ে। লীরা ওর নাম। সাথে কয়েকজন ।
লীরা চিৎকার করছে আর বলছে এ মিথ্যা। এ হতে পারেনা। কি মিথ্যা? তা একটু পর ই জানা গেলো।
ওর ভালো বাসার মানুষটার বুকে গুলি লেগেছে। সম্ভবত সে আর নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুরে হওয়া তে আমরা জানিনি এই খবর। কয়েক ঘন্টার বন্দুক যুদ্ধের খবর।
লীরাকে আটকে রাখলো সবাই। ওর বন্ধুরা। কি দারুন প্রানবন্ত একটা মেয়ে।
ওর কান্না আমাদের ছুঁয়ে গেলো,আমরা সবাই কাঁদতে থাকলাম।
ওর ভালোবাসার ছেলেটির নাম ছিলো গালিব।
সাদা সার্ট আর সাদা প্যান্ট পড়া গালিবকে মনে পড়লো। হলের সামনে এসে দাঁড়াতো মাঝে মাঝে। মাটির দিকে নুয়ে থাকা মুখ।
কে জানতো ছেলেটা সন্ত্রাসী ছিলো?
নোয়াখালির কোন এক গ্রামে জন্ম নেয়া মেধাবী এক ছেলে,ঢাকা কলেজে পড়ার সময় জড়িয়ে পড়েছিলো সন্ত্রাসে। হয়ে গেছিলো ক্যাডার।
সেই ক্যাডার এর ও বুক জুড়ে ভালোবাসা ছিলো। ছটফটে দারুন একটা মেয়ে ওর ভালোবাসায় ভীর করে ছিলো। যার জন্য গালিব কবিতা লিখতো।
সেই কবিতায় এই কৃষ্ণচূড়াও ছিলো।
পরের দিন পেপারে বড় করে ছাপানো হলো গালিবের সন্ত্রাসী হবার খবর। ৩/৪ ঘন্টার গুলি যুদ্ধে আহত গালিব ভীষন রক্ত ক্ষরনে কি করে বেঁচে ছিলো অনেকক্ষন। একটা তাজা প্রান বের হয়ে যাওয়া কি কষ্টের!
এমন একটা ছেলে যার বুক জুড়ে ভালোবাসার বসত বাড়ী ছিলো।
ছাপা হলো গালিবের লেখা ভালোবাসার কবিতাও।
যে ছেলেটা একজন কবি হ'তে পারতো। একজন ভালো মানুষ হ'তে পারতো। রাজনীতির ভয়াল খেলায় সে হারিয়ে গেলো। কে জানে ও ভালো হ'তে চেয়েছিলো কিনা!
কৃষ্ণচূড়া মনে এলেই মনে পড়ে দু'টা নাম.......লীরা আর গালিব।
খুব জানতে ইচ্ছে করে কেমন আছে গালিবের ফেলে যাওয়া সেই কৃষ্ণচূড়া!
জানতে ইচ্ছে করে চিরটাকাল সাদা সার্ট আর সাদা প্যান্ট পড়া গালিব কোন সে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলো।
কোন সে বাংলাদেশের জন্য প্যান্ট এর পকেটে পিস্তল নিয়ে ,বুক পকেটে ভালোবাসার কবিতা নিয়ে ঘুরে বেড়াতো ছেলেটা!
সেই বাংলাদেশ কতদুর?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।