সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার
গতকালটি ছিল নানা ধাঁধায় সাজানো রঙ্গিন একটি দিন। কোন এক অজানা ধাঁধায় রাতে ঘুম হলোনা ভাল, অথচ সকালে বিছানা ছাড়ার আগের মুহুর্তে হঠাৎ ঘুম এসে দেরী করিয়ে দিল। অফিসে পৌছুতেই কলিগ আমাকে আরেকটি ধাঁধার সামনে দাঁড় করালো।
‘ধরো তুমি একটি বাস চালাচ্ছ। প্রথম স্টেশনে থামার পর যাত্রী উঠলো দু’জন, নামলো তিনজন।
পরের ষ্টেশন একটু ঘন বসতিপূর্ণ এলাকার পাশে। সেখানে নামলো সাতজন, উঠলো পাঁচজন। যারা উঠলো, তাদের মাঝে তিনজন যদি শিশু হয়, তাহলে বাসচালকের বয়েস কত?”
ছেলেমানুষী ধাঁধা। মাঝে সাঝে ছেলেমানুষ হতে ভালই লাগে। তারপরও একটু থমকে গেলাম।
এটুকু থমকানোকে সম্বল করেই আরেক কলিগ হেসে উঠলো খিকখিকিয়ে। সপ্তাহের শুরুতে এমনিতেই কিছুটা ক্লান্ত থাকে মন। কলিগের হাসিটি এমনি এক দিনে আরো কিছুটা ধাঁধায় ফেললেও দিনটির নির্মলতা তাতে বাড়লো বই কমলো না।
দুপুরে খেতে গিয়ে যে রেষ্টুরেন্টে সবসময় খাই ও তা প্রতিদিন খোলাই পাই, আজ সেটাকে বন্ধ দেখে ধাঁধায় পড়লাম আবার। তার বদলে যেখানে কখনোই যাই নি, কারণ অনেকেই বলেছে ওখানকার খাবার ভাল না, সেখানে যেতেই বাধ্য হলাম।
আশাতীত ভাল খাবার পেয়ে ধাঁধায় পড়ে গেলাম আবার।
“এখান থেকে মারলাম তীর লাগল কলাগাছে,
হাটু বেয়ে রক্ত পড়ে, মাগো আমার চক্ষু গেছে!”
প্রোগ্রামিংএর কাজ করি। সারাদিন যে সমস্যা নিয়ে উতালপাতাল ভাবলাম, বিকেলে সেখানে একটি ‘@’ বসিয়েই সমস্যার সমাধান পেয়ে ধাঁধায় পড়ে গেলাম। তাতে শান্তি এলেও এমনি আরো অনেক ধাঁধায় কেটে গেল দিন।
অফিস থেকে বেরুনোর সামান্য আগে ফোন করলাম আমাদের ব্লগের পুতুলকে।
বললো, “তীরুদা, আপনাকে যে আজ একবার চা খেতে আসতে হয়!” পুতুলের চায়ের আমন্ত্রণে অনেকবারই গিয়েছি। কিন্তু নিজে ফোন করার পর “চা খেতে আসতে হয়”, এমন দাবীর মুখোমুখি কখনও হইনি। সুতরাং যথারীতি ধাঁধায় পড়লাম আরেকবার। কাজের শেষে এক পিৎসা রেষ্টুরেন্টে বসে খাবার পাশাপশি ছেলেকে কিছু ধাঁধাময় অংক করাবো ভেবেছিলাম। দ্রুত খাওয়া শেষ করে ছেলেকে অনেকটা সে ধাঁধার মাঝে রেখেই ছুটলাম পুতুলের বাড়ী।
কোন এক অজানা ধাঁধায় অফিস ছুটির পরও রাস্তা ফাঁকা। আমাকে এত তাড়াতাড়ি পৌঁছুতে দেখে ধাঁধায় পড়লো পুতুল নিজেও।
“বন থেকে বেরুলো টিয়ে,
সোনার টোপর মাথায় দিয়ে। “
কিন্তু তারপর আমি নিজে যে ধাঁধায় পড়লাম, তার বর্ণনার জন্যেই এত ধাঁধার অবতারণা। পুতুলের ঘরে ঢুকেই শুভর সাথে প্রথমবারের মতো দেখা হলো।
দেশ থেকে গতকাল এসে আজই দরজার আড়াল থেকে বেরিয়ে আমাকে সীমাহীন ধাঁধার মাঝে ফেলে দিল। পুতুল আর শুভ নাকি ওদের শুভকাজ কয়েক মাস আগেই সমাধা করেছে। এখন তারই সাঙ্গলীলায় সংসার সাজিয়ে খবর দিয়েছে আমায়।
পুতুলের সাথে প্রতি সপ্তাহেই যোগাযোগ হয় আমার। সামান্য কোন আভাস নেই, তারপর ডুবে ডুবে এতো জল! একটু ধাক্কা খেলাম।
তারপরও বন্ধুত্বের সুতোয় কোন অধিকারের নকশী বুনোন আমার সচরাচরের স্বভাবের মাঝে পড়েনা। তাই ওদেরকে আনন্দিত আর সুখী দেখে আমারও ভাল লেগে গেল। তাছাড়া শুভকে আলাপী, মননশীল ও আলোকিত বলেই মনে হলো। তাই এসব ধাঁধা ভুলে ওদেরকে অকৃপন ও অকৃত্রিম শুভকামনাই জানালাম। আপনাদেরকেও একই আহ্বান, আসুন- সবাই মিলে ওদের সুন্দর ও সুখী জীবন কামনা করি।
কিন্তু সবশেষে আপনাদেরকে একটি ধাঁধায় ফেলে যাবার লোভ সামলাতে পারছি না।
বলুন তো, শুভ পুতুলের স্বামী না স্ত্রী?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।