নিজেরে হারায়ে খুজি..... bohurupi.mohajon@gmail.com
গত দুদিন আমি ব্লগে লিখছিনা। কারণ দুইটা। ১৩ তারিখ মানে পহেলা ফাল্গুন সারাদিন কোন নেট ছিলনা। আর ১৪ তারিখ ছিল একটি বিশেষ দিবস। একটি বিশেষ দিবস ছিল বলছি এ কারণে যে, এ বিষয়ে আমার একটু ভিন্নমত আছে।
অনেকের কাছে তা গ্রহণযোগ্য নাও মনে হতে পারে। তাই বিতর্ক এড়াতে আমারও এই এড়িয়ে যাওয়া।
আমার ভিন্নমতটা একটু পরিস্কার করি। আমার মতে পশ্চিম থেকে আমদানি করা এই বিশেষ দিবসগুলোর প্রচার প্রচারণার মূখ্য উদ্দেশ্য বানিজ্যিক। এবং শুধু এই কারণেই আকাশ সংস্কৃতির কল্যাণে আমরাও আজ এসব জ্বরে আক্রান্ত হয়েছি।
আজকের এই বিশেষ দিবসে কোন ব্যবসায়ীর কত টাকার পণ্য বিক্রি হবে তা আগে থেকেই ফোরকাস্ট করা হয়েছে এবং সেই ব্যবসায়ী এই বিশেষ দিবসের প্রচারণায় নেমেছেন কারণ তার ব্যবসা।
কিন্তু আমরা কি এসব প্রচার প্রচারণার রঙ - জৌলুসে আমাদের শত বছরের মূল্যবোধ ভুলে যাচ্ছিনা? আজ দেখি আমাদের দেশেও পশ্চিমাদের দেশের মত উৎসাহের সাথে বাবা-দিবস, মা- দিবস, ভালবাসা-দিবস পালিত হচ্ছে। তা হয়তো ওদের ওখানে মানায়। ওরা বৃদ্ধ মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে, বছরে একবারও ঠিকমত দেখা হয় না। ওদের সাজে বাবা বা মা-দিবসে নিজেদের মা-বাবার জন্য স্বকেন্দ্রীক ব্যস্ত জীবন থেকে একটা দিন ব্যয় করার, তাদের খোজ খবর নেবার, জন্মদেবার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ কিছু উপহার কিনে দেবার।
কিন্তু আমাদের কি তা শেখা উচিৎ? আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় আমরা শিখেছি স্রষ্টার পর মা-বাবার স্থান। তাদের সেবা করার, তাদের পাশে থাকবার সুযোগ পেলে আমরা ধন্য হই, এমনটাই সমাজ আমাদের শেখায়। অথচ একি সব আমরা শিখছি পশ্চিমাদের কাছ থেকে!! তাদের অন্ধভাবে অনুসরণ করতে গিয়ে আমরা যেন তাদের মত না হয়ে পড়ি। মা-বাবার প্রতি আমাদের ভালবাসা, শ্রদ্ধা যেন শুধুমাত্র একটি দিবস আর কিছু উপহার-কার্ড ইত্যাদিতে সীমাবদ্ধ না থাকে। মা-বাবারা যেন সন্তানের ভালবাসা অন্তর থেকে উপলব্ধি করতে পারেন।
কিছু ব্যবসায়ীর ছাপানো রংচঙে কার্ডের নকল খোলস যেন আমাদের দুর্বল ভালোবাসায় না পরাতে হয়!
এবার আসি ভালবাসার প্রসঙ্গে। ভালবাসা শ্বাশত। যতদিন এ পৃথিবী থাকবে ততদিন ভালবাসা বেচে থাকবে। হয়তো তার থেকেও দীর্ঘজীবী হবে। স্রষ্টা যে দিন ভালবেসে এ বিশ্বজগৎ তৈরি করেছিলেন, আমাদের সৃষ্টি করেছিলেন সেদিন থেকেই ভালবাসার জন্ম।
এমন একটি বিষয়কে কি আমরা ২৪ ঘন্টার একটা দিনে আবদ্ধ করে ফেলতে পারি? আসলে এখানেও মূল হচ্ছে ব্যবসা! ওরা মানুষের গভীরতম কোন অনুভুতিরও সুযোগ নিতে ছাড়বেনা যদি সেখানে মুনাফার সুযোগ থাকে। আর এ ভালবাসা দিবস পশ্চিমাদের ভোগবাদী ভালবাসারই প্রতীক। আমাদের ভালবাসা কি এরকম?
এসব অনুভুতি, এসব সম্পর্ক মানুষের জীবনের এক পরম বস্তু। আমাদের জীব শরীরটা যেমন শ্বাস না নিয়ে বেচে থাকতে পারেনা ঠিক তেমনি আমদের মনুষ্য আত্মাও কিছু নিবিড় স্বার্থহীন সম্পর্ক, কিছু গভীর কোমল অনুভুতি ছাড়া বেচে থাকতে পারেনা। তাহলে কিভাবে আমরা এগুলোকে দিবসের গন্ডীতে বেধে রাখি? এসবতো আমাদের বেচে থাকার অনুষঙ্গ! আচ্ছা আমরা কি পারবো সারা বছর নিশ্বাস না নিয়ে শুধু একটি দিন ২৪ ঘন্টার জন্য শ্বাস নিয়ে বেচে থাকতে? যদি না পারি তাহলে আমরা এসব শিখছি কেন? পশ্চিমারা তো পারলে বাতাসও বিক্রি করে!!
এজন্য আমার অনুরোধ আমরা সবাই যেন আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ভুলে না যাই, আমাদের মূল্যবোধ যেন ভুলে না যাই।
পশ্চিমাদের কাছ থেকে শেখা ভাল, কিন্তু ভুল কিছু শিখলে একসময় আমাদেরই পস্তাতে হবে!!
আমাদের মা-বাবার ছায়া জীবনভর আমাদের মাথার ওপর থাকুক; ভালবাসা ছড়িয়ে যাক প্রতিটি মুহূর্তে। ভালবাসার মানুষগুলোকে আমরা যেন সারাজীবন একই ভাবে ভালবেসে যেতে পারি কোন বিশেষ দিবসের জন্য অপেক্ষা না করে। হোক সে মা-বাবা-ভাই-বোন, অথবা প্রিয় অন্যকেউ। আসুন আমরা আমাদের মত ভালবাসি। কারও সেখানো ভালবাসা না।
আমাদের নিজস্ব শুদ্ধ ভালবাসা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।