আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি কপিপেষ্ট লেখা, যা পড়া উচিত

আদর্শটাকে আপাতত তালাবদ্ধ করে রেখেছি...

বাংলাদেশ এখন গর্ভবতী, তার উপরে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে মাল্টিপল প্রেগনেন্সি ( এখন হচ্ছে প্রাথমিক সময়। এর জন্যই আমাদের অনেক যন্ত্রণা, অস্থিরতা এবং মাঝে মাঝেই কান্না। আমার মন বলছে আমরা প্রসব করবো স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, দুর্নীতির প্রতিষেধক, সুষ্ঠু নির্বাচনের আমূল সংস্কার ও সমৃদ্ধির উচ্চতর সোপান। একেবারে কোয়াড্রিপ্লেট । একসঙ্গে চারটি সুস্থ সন্তানের জন্ম খুব সাধারণ ঘটনা নয়।

তাই প্রসূতির কষ্ট বেশি, ঝুঁকিও বেশি। চারদিকে যে মতবিরোধ, সংঘাত কখনও হানাহানি এ সবই প্রসবকালের স্বাভাবিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া। বাংলাদেশের সবক্ষেত্রেই এখন একটা টগবগে অবস্থা। নানান অস্থিরতার প্রকাশ কখনও হয় রাগী কখনও হিংসাÍক। যারা সমঝদার তারা জানেন এ সময় আমাদের দায়িত্ব সহনশীল ও সতর্ক থাকা।

নইলে প্রসূতিসহ অনাগত প্রাণেরও অবসান হতে পারে। মিসক্যারেজ হয়ে যেতে পারে। এ সময়ে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে বিদেশ থেকে আসা অনেক কাজের অর্ডার ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রথম পুরুষ উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীরা ভিনদেশে গিয়ে বহু পুরুষের ব্যবসার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে, এমনকি শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা করছে। চ্যানেল আইয়ের শাইখ সিরাজ বাংলাদেশের কৃষি, মৎস্য, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির খামার শিল্পে একা একাই যেন বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে বদ্ধপরিকর।

ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের আব্দুল মুক্তাদির ৫ বছরের মধ্যে বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছেন। পিএইচপি গ্র“পের মোহাম্মদ মহসীন চট্টগ্রামকে সিঙ্গাপুর বানাতে পারবেন বলেই নিশ্চিত। ইমপ্রেস গ্র“পের রিয়াজ আহম্মেদ খান স্ক্যান্ডিনেভিয়া থেকে শুরু করে এখন উত্তর আমেরিকায় তাদের রেস্টুরেন্ট ব্যবসা ছড়িয়ে দিতে কাজ করছেন। বাংলাদেশের কম্পানি রহিমআফরোজ বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় যুদ্ধ করে ভারতের বাজারে বাংলাদেশের ব্যাটারি বিক্রির ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছেন। এক্মির তানভীর সিনহাও সকল বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে ভারতের মানুষকে বাংলাদেশের ফলের জুস খাওয়াবেনই।

অটবি ভারতের বিভিন্ন শহরে নিজেদের শোরুম করে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বিক্রি করে। বাংলাদেশের ওষুধ দেশে দেশে রফতানি হয়। গ্রামীণ ব্যাংকের ড. মুহাম্মদ ইউনূস নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। আমাদের ক্রিকেট দল পাকিস্তানকে হারায়, ভারতকে হারায়, অস্ট্রেলিয়াকেও হারাতে পারে। আর কত সুখবর চাই আমাদের? অথচ এমন অনেক সুখবর তৈরি হচ্ছে অহরহ।

আমাদের অব্যাহত অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রমাণও আছে প্রায় ৭ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধির মধ্যে, বিদেশি মুদ্রার রেকর্ড পরিমাণ উচ্চ রিজার্ভের মধ্যে। বাংলাদেশে এখন কত সংবাদপত্র। বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল, প্রাইভেট রেডিও, অর্ধশতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ-ই আলোকিত মানুষ বানাতে নাগরিকের দোরগোড়ায় নিয়ে যাচ্ছেন পাঠাগার। ২০০৭ সালের যে-কোনও সময় আনিসুর রহমান সিনহা হয়ে যাবেন একক মালিকাধীন বিশ্বের বৃহত্তম ডেনিম উৎপাদক।

ক্লোজআপ ওয়ানে সঙ্গীতের প্রতিভার অন্বেষণ, পরীক্ষায় নকল বন্ধ করা, আবাসন শিল্পেও বিকাশ চলছে অভাবনীয় গতিতে। কর্মসংস্থান আর রোজগারের তাগিদে তুষার, গহিন অরণ্য, সুউচ্চ পর্বতমালা কিংবা উত্তাল অথৈ সাগর সবকিছুর ভয়কে জয় করে দুঃসাহসী অভিযাত্রী বাঙালি যাচ্ছে ইউরোপ আমেরিকাসহ পৃথিবীর দিকে দিকে যেন একেকজন কলম্বাস বা ভাস্কো দা গামা। আমি লিখতে চাইলে এমন অস্থিরতার অসংখ্য সুসংবাদ লিপিবদ্ধ করতে পারি। এত-শত ইতিবাচক কর্মযজ্ঞের মধ্যে আমাদের কষ্ট দেয় রাজনৈতিক দলের নানান দুর্বলতা। দেশের বিভিন্নক্ষেত্রে অব্যাহত দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, বিচার ব্যবস্থায় পক্ষপাত, বিসিএস আর এমবিবিএস পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, নির্বাচনে কারচুপি, রাজনৈতিক সন্ত্রাস, কালোটাকার দৌরাত্ব সংখ্যায় আমাদের সমস্যা কম, কিন্তু সেগুলোই আমাদের অসংখ্য স্বতঃস্ফূর্ত সৃষ্টিশীল সৎ উদ্যোগকে পদে পদে বাধা দেয়, হতাশ করে।

এই অল্পক’টি বিষয়ে মুষ্টিমেয় অপকর্মের অবশ্যই প্রতিকার করতে হবে। তবে এই সময়ে আমাদের সতর্ক মনোযোগ প্রধানত দিতে হবে অনাগতের সুস্থ জন্মের প্রয়োজনে। বাংলাদেশের বিভিন্নক্ষেত্রে যে অভাবনীয় পরিবর্তন বা অগ্রগতি হচ্ছে দেশের রাজনীতি সে তুলনায় সময়োপযোগী হতে পারেনি সেটা সবাই স্বীকার করেন। কিš' দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা কতটা দ্রুত হতে পারে সেটাও বিবেচনার দাবি রাখে। বিশেষ করে আমাদের শিক্ষার হার, রাজনীতির সংস্কৃতি, গণতন্ত্র চর্চার বয়স, মানুষের আয় ইত্যাদিও বিবেচনা এক্ষেত্রে কম জরুরি নয়।

আমাদের রাজনৈতিক দল ও প্রতিষ্ঠানগুলোর খোলনলচে পাল্টে যুগোপযোগী করার কাজ আমাদের লক্ষ্য হতে হবে। কিš' রাজনীতিবিদ ও রাজনীতিকদের ঢালাও নিন্দা, সমালোচনা, নির্মমভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিগত ১৫ বছর ৩ বার যথাযোগ্য নির্বাচনের ভিত্তিতে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পরে এবার এবং নির্বাচন আয়োজনে একটা অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এবার ১১ জানুয়ারি সারা দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সকল শহরে কারফিউ জারি করার পর দৈনিক আমাদের সময় অফিসে দেখলাম অর্ধেকের বেশি কর্মীর জরুরি অবস্থা অথবা কারফিউ সম্পর্কে বাস্তব ধারণা নেই। এই যে বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই সেটা আমাদের সময়ে কাজের জন্য সামান্য অসুবিধা সৃষ্টি করলেও আমাকে প্রীত করেছে যে, এটাই আমাদের গণতান্ত্রিক শাসনের একটি ইতিবাচক অবদান।

আমরা ভুলেই গিয়েছি জরুরি অবস্থা কী জিনিস আর কারফিউ কাকে বলে। এটা অন্তত তিনটি গণতান্ত্রিক সরকারের অবদান। এছাড়া পৃথিবীর কোথাওই রাজনীতিবিদরা সাধারণভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের চাইতে অতি উত্তম কিংবা বাংলাদেশের চাইতে বেশি আদর্শভিত্তিক সৎ অথবা সেখানকার রাজনীতিকরা অসাধারণ দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এটা সত্য নয়। আমার মনে হয়, আমরা আমাদের গণতন্ত্রের কাছে উচ্চাভিলাষী প্রত্যাশা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের রাজনীতিবিদদের ফেরেশতাতুল্য হওয়ার আশা প্রকাশ করছি।

আমাদের রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দলের তীব্র সমালোচনায় বা প্রায় নাকচ করে দিতে যারা অবতীর্ণ হয়েছেন যেমন প্রথম আলোর মতিউর রহমান, গ্রামীণ ব্যাংকের ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রমুখ তারা তাদের নিজেদের এবং তাদের প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র বা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় করপোরেট কালচার, অর্থাৎ সাধারণ রীতিনীতি, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন তোলা যায়। আমাদের ব্যবসায়ী, আইনজীবী, চিকিৎসক, সাংবাদিক বা অন্যান্য পেশাজীবী আমলাসহ নানান প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রচুর অনিয়ম-দুর্নীতি-বিশৃঙ্খলা আছে। কেবলমাত্র রাজনৈতিক দল আর রাজনীতিবিদদের এককভাবে টার্গেট করা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা কেউ যখন অন্য কাউকে দায়বদ্ধতার কথা বলবো নিজেরা পরিপূর্ণ দায়বদ্ধতা পালনের পরই কেবল সেই অধিকার আমাদের আসতে পারে। সাংবাদিকরা রাজনৈতিক সরকারের কৃপা নিতে যে চরম দেউলিয়াত্বের পরিচয় দেন, যেভাবে নিুমানের কর্মীর মতো ব্যক্তিত্বহীন দলবাজি করেন তাদের মুখে অন্তত এত সাধুবাক্য বেমানান লাগে।

২ হাজার ছাপা হয় যে পত্রিকা ২৫ হাজার সার্কুলেশন দেখিয়ে সরকারি রাজস্ব লোপাট করছে দিনের পর দিন তারাও যখন দুর্নীতির কথা বলে তখন কেমন লাগে? সংবাদপত্রের মালিক যারা ঋণখেলাপি তাদের মুখেও শোনা যায় কত সুবচন! আমাদের প্রতিবেশী ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ। তাদের গণতন্ত্রের ঐতিহ্য আমাদের অনেকগুণ বেশি। কিš' এতকালের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের পরও সেই দেশেও ১৬ জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন শিব শঙ্কর মেনন। যার প্রতিবাদে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত বীণা সিক্রি পদত্যাগ করে বিদায় নিয়ে চলে যান। ভারতের গণতন্ত্রেই পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সিঙ্গুর এলাকায় টাটা গ্র“পের একটি গাড়ি তৈরির প্রকল্পে এক হাজার একর কৃষি জমি বরাদ্দ দেয়ার প্রতিবাদে টানা ২৫ দিন অনশন করেন মমতা ব্যানার্জি।

টাটা গ্র“প বাধ্য হয় প্রকল্পটি স্থানান্তরে রাজি হতে। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী নটবর সিং ২০০৫ সালের ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন জাতিসংঘের তেলের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির কোনও একটি বিষয়ে ইরাকের কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠায়। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের কোথাওই রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র মোটেই নতুন কিছু নয়। ভারতের প্রতিষ্ঠাতা মাহাত্মা গান্ধী ৩০ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে নাথুরাম গডসের গুলিতে নিহত হন। দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হন তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ৩১ অক্টোবর ১৯৮৪ সালে।

তারপর ইন্দিরা গান্ধীর ছেলে রাজীব গান্ধী আÍঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন ১৯৯১ সালে। রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে সুইডেন থেকে বোফর্স কামান কেনার চুক্তি করার আগে ঘুষ নেয়ার সপ্রমাণ অভিযোগ ছিল। ইন্ধিরা গান্ধীর অন্য পুত্র সঞ্জয় গান্ধী প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত হন, কিš' এর আগেই যথেষ্ট কুখ্যাতি অর্জন করেন দেশের জনসংখ্যা কমাতে পুরুষ ও নারীদের বন্ধ্যাকরণ করার গণউদ্যোগ জোরপূর্বক চাপিয়ে দিয়ে। তা ছাড়াও ১৯৭৬ সালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পর দিল্লিকে বস্তিমুক্ত করার লক্ষ্যে সঞ্জয় গান্ধী দিল্লির তুর্কমেন গেট ও জামে মসজিদের পাশে মুসলিম অধ্যুষিত বস্তি উচ্ছেদ করে বিতর্কিত হন। অনলাইন সংবাদ সংস্থা তেহেলকা ডটকম ২০০১ সালের ১৩ মার্চ বিজেপি সভাপতি ব্যাঙ্গারু লক্ষণসহ রাজনীতিক, আমলা ও শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের ঘুষ নেয়ার দৃশ্য গোপন ক্যামেরায় ধারণ করেন সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্দেজের বাসায়।

ভারতের পার্লামেন্টে আদিবাসী স্পিকার পিবি সাংমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে সভ্যরা আক্রমণ করে, সেই একই পার্লামেন্টের উপর জঙ্গিদের বোমা হামলা হয় ১৩ ডিসেম্বর ২০০১ সালে। এই গণতান্ত্রিক ভারতই একসময় বিখ্যাত ছিল এনকাউন্টার আর ক্রসফায়ারের জন্য। এটি বাংলাদেশ শিখেছেই ভারত থেকে। ভারতের কুখ্যাত টাডা (১৯৮৫) আইনের মতো কিছু এখনও বাংলাদেশে হয়নি। স্বল্পতম সময়ে সরকার ভাঙাগড়াও ভারতে আমরা কম দেখিনি।

এতক্ষণ বর্ণিত ঘটনাগুলো একটি ঐতিহ্যবাহী স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের চিত্র হলে বাংলাদেশকে নিয়ে এখনি চরম হতাশ হয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে মরণাঘাত হানার কোনও যুক্তি নেই। তার মানে অবশ্য এই নয় আমরা প্রগতির আকাক্সক্ষা ছেড়ে দেব। পাদটীকা: ভারত থেকে এমন নজির দিয়ে বইয়ের পর বই রচনা করা সম্ভব। এছাড়া গণতান্ত্রিক ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে পৃথক বই লেখা যাবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.