দেখতে সুদর্শন। চড়েন দামি গাড়ি ও মোটরসাইকেলে। ওদের কয়েকটি দল রয়েছে। এক দল সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন কাজ করে। ওদের কাজ হচ্ছে রাজধানীর রাজপথে ছিনতাই কিংবা ডাকাতি করা।
প্রয়োজনে খুনও করে ওরা। তবে খুনের ধরন একটু ভিন্ন। শ্বাসরোধ করে খুন করে লক্ষ্য পূরণ করে তারা। দামি গাড়ি, মোটরসাইকেল আর টাকা বহন করছে এমন লোকই ওদের প্রধান টার্গেট। ছিনতাই বা ডাকাতির আগে তারা প্রথমে দামি গাড়ি বা মোটরসাইকেল ছিনতাই করে।
পরে তা দিয়েই শুরু হয় তাদের আসল মিশন। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া ছিনতাইকারী গ্রুপের কয়েকজন সদস্য জিজ্ঞাসাবাদের মুখে এমন তথ্য দিয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। তারা বলেছে, রাজধানীতে তাদের দলেই রয়েছে অন্তত ৭০ জন। তারা প্রত্যেকেই গাড়ি ছিনতাইয়ে পারদর্শী। আবার কখনো কখনো যাত্রী সেজে শেয়ারে আরেক যাত্রী উঠিয়ে নির্জন স্থানে নিয়ে টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়।
প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর কোথাও না কোথাও এ ধরনের ছিনতাই ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। তাদের দৌরাত্মে আতঙ্ক ছড়িয়েছে নগরজুড়ে। গত এক মাসে রাজধানীতে অন্তত ১৫টি গাড়ি ও মোটরসাইকেল ছিনতাই এবং চুরির ঘটনা ঘটেছে। গাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় মাঝেমধ্যে উদ্ধার করা গেলেও মোটরসাইকেল উদ্ধার হওয়ার ঘটনা খুবই কম। সর্বশেষ গতকাল সকাল ৭টার দিকে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
১০ নম্বর বাসার সামনে মফিজুর রহমান একটি প্রাইভেটকার ধোয়া-মোছা করছিলেন। এ সময় অপর একটি প্রাইভেটকার যোগে আসা ৩-৪ জন দুর্বৃত্ত মফিজের কাছে গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। মফিজ চাবি দিতে অস্বীকার করলে দুর্বৃত্তরা তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে চাবি ছিনিয়ে নেয়। এরপর ছিনিয়ে নেওয়া চাবির সাহায্যে প্রাইভেটকারটি চালিয়ে পালিয়ে যায়। গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, এ ধরনের ছিনতাই করা গাড়ি দিয়েই রাজধানীতে ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা।
আগে ছিনতাইয়ের জন্য অটোরিকশা বা টেঙ্কি্যাব ব্যবহার করা হতো। এখন অটোরিকশা বা ট্যাঙ্কি্যাবের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজর থাকায় ছিনতাইকারী চক্র কৌশল পরিবর্তন করেছে। গোয়েন্দারা বলছে, অটোরিকশা, ট্যাক্সিক্যাব দিয়ে ছিনতাই করলে ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। পুলিশের দৃষ্টি শুধু ওই গাড়িগুলোর দিকেই থাকে। তাছাড়া এসব গাড়ির সংখ্যাও এখন কমে গেছে।
ছিনতাইকারীরা এখন প্রথমে একটি গাড়ি বা মোটরসাইকেল ছিনতাই করে। এরপর তারা সেটা দিয়ে রাস্তায় নামে ছিনতাই, ডাকাতি করতে। ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, যারা মোটরসাইকেল চুরি করে, তাদের অধিকাংশই ওই মোটরসাইকেল দিয়েই ছিনতাই করে। প্রাইভেটকার চুরি বা ছিনতাই করে তা দিয়ে ছিনতাইয়ের কয়েকটি ঘটনার নজিরও পাওয়া গেছে।
গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তারা অস্ত্র, গুলি ও বিলাসবহুল গাড়িসহ ডাকাতির অভিযোগে ১৯ জনকে গ্রেফতার করে।
এ সময় তাদের কাছ থেকে বিদেশি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি, তিনটি প্রাইভেটকার, ছয়টি মোটরসাইকেল, পুলিশের পোশাকসহ ছিনতাই-ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত কিছু সরঞ্জামাদিও জব্দ করে গোয়েন্দারা। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, দামি গাড়ি ব্যবহার করে ছিনতাই-ডাকাতি করে থাকে এই চক্রটি। এ ক্ষেত্রে প্রাইভেট কারে ছয়জন এবং মাইক্রোবাসে ১১ জন করে প্রতি দল রাতে ঢাকার বিভিন্ন অলিগলিতে ফাঁদ পাতে। প্রধান লক্ষ্য থাকে বিলাসবহুল গাড়ি, দামি মোটরসাইকেল। তাছাড়া অনেক সময় টাকা বহনকারী ব্যক্তিকেও টার্গেট করে থাকে।
সে ক্ষেত্রে হেঁটে যাওয়া ব্যক্তির কাছে যেতেই গাড়ির গতি কমিয়ে দিয়ে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে পথচারীকে গাড়িতে তুলে নেয়। চোখ বেঁধে অন্যত্র নিয়ে মারধর করে সবকিছু নিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে চলে যায়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জসিম মোল্লা নামে এক ছিনতাইকারী জানায়, একটি মোটরসাইকেলের তালা ভাঙতে তার ১০ সেকেন্ড সময় লাগে।
ডাকাত দলের আরেক সদস্য মানিক পুলিশকে জানায়, সে দীর্ঘদিন ধরে গাড়ি ছিনতাই ও ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। এ পর্যন্ত সে চারটি দামি গাড়ি ডাকাতিতে সরাসরি অংশ নিয়েছে।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মশিউর রহমান জানান, এরা কখনো কখনো পুলিশের এসআই মর্যাদার পোশাক পরেও ডাকাতি কিংবা ছিনতাই কাজে অংশ নেয়। এক স্থানে বেশি দিন ভাড়া থাকে না। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে বিভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন করে থাকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।